মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

আয়-ব্যায়ের  সঠিক হিসাব দিতে না পারায় মাদ্রাসা সুপারের পদত্যাগ দাবি

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:১৮
ছবি : যায়যায়দিন

নওগাঁর মান্দায় জামদই গতিউল্লাহ আলিম মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দূর্ণীতি, সেচ্ছাচারীতা ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ আয়- ব্যায়ের হিসাব-নিকাশ প্রদান এবং তার পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিার্থীরা।

এসময় আয়- ব্যায়ের হিসাব-নিকাশ সঠিক হিসাব দিতে না পাড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামদই গতিউল্লাহ আলিম মাদরাসা এলাকার প্রধান উপদেষ্টা ও সমন্বয়ক সদস্য আল কাওসার আলম ও মাহবুব আলম,সমন্বয়ক সদস্য আতিকুরীী ইসলাম ও ওবায়দুল্লাহ, ছাত্র সমন্বয়ক সদস্য ওমর ফারুক এবং রানা আহমেদসহ আন্দোলনকারীরা অত্র মাদ্রাসার অধ্যেরে প্রতি বিােভ প্রদর্শন করেন এবং বিগত সময়ে প্রায় ১৯ ল টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ।

তাদের দাবি যে,সহকারি -সুপারিনটেনডেন্ট পদে ৮ লক্ষ,সহকারী শিক,ল্যাব সহকারী,অফিস সহায়ক পদে সাড়ে ৯ লক্ষ ও আয়া পদে দেড় লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট ৫ টি পদে নিয়োগের টাকাগুলো কোন খাতে ব্যায় করা হয়েছে? এর সঠিক হিসাব দিতে হবে। আর তা না হলে পদত্যাগ করতে হবে। আন্দোলনকারী শিার্থীদের তোপের মুখে পড়ে জানান যে, তার প্রতিষ্ঠানে কোন নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়নি। নিয়োগ প্রদানের সময়ে কোন লেনদেন করা হয়নি।

৫ জনের মধ্যে ২ জন কোন ডোনেশন ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক সভাপতির এক ছেলেও রয়েছেন। আর তিনজন মাদ্রাসার উন্নয়নকল্পে যা ডোনেট করেছেন তা দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নিয়োগ বোর্ড গঠনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ম্যানেজ করার বিষয়গুলো অকপটে স্বীকার করেন সুপার।

অথচ, ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্তরা জানান যে, নিয়োগের সময় তাদের কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি মর্মে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্প গ্রহণ করেন সুপার। পদত্যাগের দাবিতে স্ট্যাম্পগুলো উদ্ধার করার পর সেগুলো কৌশলে আন্দলোনকারীরা হাতিয়ে নেয়।

মাদ্রাসার এতগুলো জমি ও পুকুরের টাকাগুলো যায় কোথায়? এখন পর্যন্ত মাদ্রাসার দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি কেনো? শিার মান এতো খারাপ কেনো? তুলনামূলক শিার্থী নেই কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে সুপার বলেন বর্তমানে প্রায় লাধিক টাকা মাদ্রাসার একাউন্টে রয়েছে।

এরই এক পর্যায়ে আন্দলোনকারীদের তোপের মুখে পড়ে তিনি একটি লিখিত কাগজে জানান যে,অত্র মাদ্রাসায় নিয়োগ প্রদানের জন্য কার কাছ থেকে কত টাকা গ্রহণ করেছেন। এসময় তিনি নিজের দায়বদ্ধতা এড়াতে অভিনব কায়দায় সাবেক সভাপতিকে দায়ী করেন। এরপর আন্দলোনকারীরা নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি রুমে নিয়ে জেরা করতে থাকেন।

কত টাকার বিনিময়ে তারা নিয়োগ পেয়েছেন? টাকাগুলো কাকে দিয়েছেন? এসময় তারা জানান যে,নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তারা কাউকে কোন টাকা দেন নাই। পরবর্তীতে অনেক চাপ সৃষ্টি করার পর তারা স্বীকার করে বলেন যে তাদের কাছ থেকে ফাঁকাস্ট্যাম্প নেয়া হয়েছে। তবে সেখানে কি লেখা আছে সেটি তাদের জানা নেই। স্ট্যামগুলো ফেরত চান তারা। এমতাবস্থায় তাদের বলা হয় যে,যদি আপনারা কোন টাকা ছাড়াই নিয়োগ পেয়ে থাকেন, তবে খুবই ভালো।

আর যদি কোন টাকা-পয়সা দিয়ে থাকেন তাহলে কাকে কত টাকা দিয়েছেন সেটি বলতে হবে। আর তা না হলে মাদ্রাসার উন্নয়নকল্পে সবাইকে ৮ ল করে টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে না চাইলে পদত্যাগ করতে হবে। তাদের পদে অন্যজনকে নিয়োগ দেয়া হবে। এসব কথা শোনার পর তো সবাই আতংকিত। তাদের অব্যাহত হুমকির কারণে তারা স্বীকার করেন যে, কে কাকে কত টাকা দিয়েছেন। দিনব্যাপী আন্দলোন করার পর তারা যে যার অবস্থানে ফিরে যান এবং নিয়োগ বাণিজ্যের টাকাগুলো তিন দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে জমা দিয়ে রশিদ দেখানোর জন্য হুঁশিয়ারী প্রদান করেন।

অথচ,তিন দিন পার না হতেই আবারো বিােভ শুরু করেন আন্দলোনকারীরা। বিষয়টি জানার পর সেনাবাহিনীর সদস্যারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং অত্র প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি,সুপার ও কমিটির সদস্যসহ স্থানীয় এলাকার কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের আর্মির অস্থায়ী ক্যাম্পে ডেকে পাঠান। এরপর তারা প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকল্পে কিছু টাকা প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে জমা রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন।

যাতে করে আর কোন অনাকাঙ্তি ঘটনা না ঘটে। সম্প্রতি গত ২৭ আগষ্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পরেও স্থানীয় প্রশাসনকে উপো করে একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহ করে বিশেষ সুবিধা গ্রহণের জন্য পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে অত্র এলাকাজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জামদই গতিউল্লাহ আলিম মাদরাসা এলাকার প্রধান উপদেষ্টা ও সমন্বয়ক সদস্য আল কাওসার আলম বলেন,মাদ্রাসাটিতে ব্যাপক অনিয়ম,দূর্ণীতি, সেচ্ছাচারীতা ও নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়েছে। অথচ,দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করা হয়নি। আয়-ব্যায়ের সঠিক হিসাব দিতে না পারায় মাদ্রাসা সুপারসহ দূর্ণীতির সাথে জড়িতদের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। মূলতঃ এসব দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তারা।

সুপারিটেনডেট এ.জি.এম ইলিয়াস বলেন, মাদ্রাসার আয়-ব্যায়ের হিসাব চেয়ে পদত্যাগের দাবিতে তোপের মুখে ফেলে তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে লিখিত নেয়া হয়েছে। যার কোন ভিত্তি নেই।

মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্তা নেই। তিনি পেশায় একজন সরকারি কর্মচারী। সুপারের অনিয়ম-দূর্নীতি থেকে রেহাই পেতে এবং সামাজিকভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বেকায়দায় ফেলতে তার প্রতি মিথ্যাচার করা হয়েছে। এমনকি বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহ করার জন্য এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

মান্দা উপজেলা সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার রেজাউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এরপর বিশৃঙ্খলা এড়াতে সকলকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেইসাথে মাদ্রাসার উন্নয়নকল্পে কিছু আর্থিক সহযোগীতার আহব্বান জানানো হয়।

মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিা কর্মকর্তা শাহ আলম সেখ বলেন,বিষয়টি জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। বিশৃঙ্খলা করলে কাউকেও ছাড় দেয়া হবে না। কারো কোন বিষয়ে অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানাতে হবে। তদন্ত সাপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, মান্দায় কোন সমন্বয়ক নেই। আর তারা কাউকে কোথাও কোন প্রতিনিধি পাঠাননি। সুতরাং কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহব্বান জানান তিনি।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে