মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

প্রেমের টানে বাংলাদেশে এসে ভারতীয় তরুণীর দুই’বছর কারাভোগ

স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:২৫
ছবি : যায়যায়দিন

লাইলী-মজনু, সিরি-ফরহাদ, শাজাহান-মমতাজ আর রজকীনি-চন্ডিদাস- এ রকম প্রেমের জুটির উদাহরন ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। প্রেমের জন্য কেউ ছেড়েছে রাজমহল, কেউ গড়েছে তাজমহল। এবার প্রেমের টানে বাংলাদেশে এসে দু’বছর কারাভোগ করল কলকাতার তরুনী প্রিয়াংকা।

প্রেম করে অবৈধ পথে বাংলাদেশে ঢুকছিল কলকাতা হাওড়ার মেয়ে প্রিয়াংকা নস্কর (১৮)। এরপর সীমান্তে বিজিবি তাকে আটক করে। ঠাঁই হয় কারাগারে। সেখানে ছিল দু’বছর।

কারাভোগ শেষে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট সীমান্ত দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেয়া হয় এই ভারতীয় তরুনীকে।

বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ছেলের সাথে প্রেম হয় প্রিয়াংকার। ওই ছেলের পিসির বাড়ি হাওড়াতে প্রিয়াংকাদের বাড়ির পাশে। সেখান থেকে পরিচয়, তারপর প্রেম। বলেছিল, বিয়ের পর নারায়নগঞ্জে গামের্ন্টেসে চাকুরী দেবে তাকে।

এরপর ওই ছেলের সাথে বিয়ে করার জন্য বাংলাদেশে ঢুকতে ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে আসে প্রিয়াংকা। দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পার হতে গেলে ধরা পড়ে বিজিবির হাতে। তাকে পুলিশে সোপর্দ করে বিজিবি। আদালতে নেয়া হলে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দু’বছরের জেল হয় প্রিয়াকার। এরপর ২৩ মাস ছিল ঝিনাইদহ কারাগারে।

দর্শনা সীমান্তে প্রিয়াংকা বলেন, ‘সে ভুল করেছে। প্রেম করে বাংলাদেশে যে ছেলের কাছে আসতে গিয়ে ধরা পড়ে, কারাগারে যাওয়ার পর সে কোনদিন খোঁজ নেয়নি। তাকে ভুলে গেছে। জীবন থেকে দু’বছর ঝরে গেল। তার মতো ভুল যেন কোন মেয়ে না করে।’

প্রিয়াংকার বাবা প্রতাব নস্কর ও মা তনুশ্রী নস্কর মেয়ে নিতে এসেছিলেন দর্শনা সীমান্তে। এ সময় মেয়েকে ফিরে পেয়ে বুকে নিয়ে হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠেন।

মা তনুশ্রী জানান, দু’বছর মেয়েকে হারিয়ে কত কষ্ট ছিলাম। রাতে ঘুমোতে পারিনি। আমার মেয়ে ভুল করেছে।

প্রিয়াংকার বাবা প্রতাব নস্কর বলেন, ‘মেয়ে হারিয়ে যাওয়ার কোন খোঁজ পায়নি। ৮ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে একজন মোবাইল করে জানায় মেয়ে ঝিনাইদহ কারাগারে আছে। দুটি বছর বাংলাদেশের কারাগারে আমার মেয়ে ভালছিল। আজ দু’দেশের সরকারের মাধ্যমে আজ মেয়েকে ফিরে পেলাম। যারা আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিল আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

ঝিনাইদহ কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া বলেন, ‘প্রিয়াংকা প্রায় দু’বছর আমাদের কারাগারে ছিল। সে ভদ্র মেয়ে। আমরা তাকে যতদুর পারি কারাগারে ভাল রেখেছিলাম। আজ তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা খুশি।’

পশ্চিমবঙ্গের এনজিও কর্মী চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘মেয়েটির বয়স অল্প। সে ভুল করেছে। এ রকম ভুল যেন কেউ না করে। এ জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১ টায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট সীমান্তে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিয়াংকাকে হস্তান্তর করে বিজিবি ও বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন-কাস্টমস ও কারা কর্তৃপক্ষ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিবির আইসিপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মোঃ মোস্তফা মিয়া, ইমিগ্রেশন ইনচার্জ আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া, কাস্টমস কর্মকর্তা কাবিল হোসেন, দর্শনা থানার এসআই ফাহিম। ভারতের পক্ষে ছিলেন বিএসএফ গেঁদে ক্যাম্পের এসিসট্যান্ট কমিশনার তাপস্যার, ইমিগ্রেশন ইনচার্জ সঞ্জিব কুমার বোস, কাস্টমস কর্মকর্তা আরপি যাদব, কৃষ্ণগঞ্জ থানার এস আই তন্ময় দাস প্রমুখ।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে