মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

মধ্যনগর সীমান্ত এখন চোরাচালান ও মাদকের অভয়ারণ্য

ধর্মপাশা-মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১৯:১৯
আপডেট  : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ২১:২৯
ছবি যাযাদি

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক থামানো যাচ্ছে না। সীমান্ত এখন চোরাচালানের অভয়ারণ্য পরিণত হয়েছে।

আগের চেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতি রাতে চোরা কারবারিরা সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু, মহিষ, চিনি, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, কসমেটিকস, শাড়ি কাপড়, কাঁচা সুপারি, চা পাতাসহ বিভিন্ন পণ্য দেদারসে আমদানি করছে। অন্যদিকে এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সুপারি, ছোলাবুট, শুকনো সুপারি, পটের দুধ, মটরশুটি ইত্যাদি পণ্য ভারতে পাচার হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রটি বিজিবি ও মধ্যনগর থানার ওসি মোহাম্মদ এমরান হোসেনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার ভারতের সীমান্তবর্তী উত্তর বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের আন্তরপুর গ্রাম, মহেষখলা, কাইটাকোনা, কড়ইবাড়ী, গুলগাঁও, রূপনগর ও কান্দাপাড়া, বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া গ্রামের কয়েকটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার মহেষখলা, কাইটাকোনা, কড়ইবাড়ী (কড়ই চড়া), আমতলা, ঘিলাগড়া, বাঙ্গালভিটা সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার এসব ভারতীয় পণ্য ঢুকছে বাংলাদেশে আর বাংলাদেশি পণ্য পাচার হচ্ছে ভারতে।

এসব চোরাকারবার রাতে ও দিনেও চলছে প্রতিনিয়ত। এককথায় চোরা কারবারিদের স্বর্গরাজ্য এখন মধ্যনগর সীমান্ত। আর এক অদৃশ্য কারণে নিরব রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

প্রতি রাতেই কোটি কোটি টাকার গরু ও মহিষ চোরাই পথে ভারত থেকে আসছে। এসব গরু ও মহিষ রাতে এমনকি দিনের বেলায় প্রকাশ্যে পাচার করা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে উপজেলার মহিষখলা হতে নৌকা যুগে চোরাচালানের হাজার হাজার গরু, মহিষ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয়। এবং সুপারিসহ বিভিন্ন দ্রব্য ভারতে পাচারের জন্য শত শত সেলু ইঞ্জিনচালিত ট্রলি ওই রাস্তায় চলাচল করে। এতেকরে সন্ধ্যার পরে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন ও জনচলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, মধ্যনগর থানার ওসি এমরান হোসেনের নিয়োজিত ল্যাইনম্যান দাতিয়াপাড়া গ্রামের উজ্জল মিয়া ওসির নামে চোরা কারবারিদের থেকে ভারতীয় গরু প্রতি ৪শ' টাকা ও মহিষ প্রতি ৭০০শ'ত টাকা করে বখরা আদায় করে থাকেন। চোরাইপথে আনা চিনির প্রতি বস্তা প্রতি ১০০শ' টাকা আদায় করেন । সুপারির বস্তা প্রতি ১শত করেন টাকা করে বখরা আদায় করে থাকেন।

ওসির নিয়োজিত ল্যাইনম্যান উজ্জল মিয়া প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ওসির নামে বখরা আদায়ের টাকা উত্তোলন করে প্রতি বুধবার এ এস আই মো, কিমত আলী মির ও এসআই পান্না লাল দে মাধ্যমে ওসি এমরান হোসেনকে দিয়ে আসেন। ওসির নিয়জিত লাইন ম্যান উজ্জ্বল ও এ এস আই মো, কিমত আলী এবং এসআই পান্না লাল দের আত্যাচারে সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ।

উল্লেখ্য, গত ০৪ নভেম্বর ২০২৩ সালে এবং ৫ মে ২০২৪ সালে দৈনিক যায়যায়দিনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামে কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওসি মোহাম্ম এমরান হোসেন ও এস আই পান্না লাল দে এবং কিমত আলী মিরের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায়। সীমান্ত এলাকা এখন আগের চেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট।

এদিকে মধ্যনগর সীমান্তে চোরা চালান বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ। অবৈধ ব্যবসা দেশের অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানান তারা। সীমান্তে চোরাচালন বন্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চোরাকারবারি জনান, মধ্যনগর থানার লাইনম্যান উজ্জ্বল মিয়া আমাদের কাছ থেকে ওসি স্যারের কথা বলে প্রতি গরু ৪শ'ত টাকা ও সুপারি বস্তা ১ শ'ত টাকা, চিনির বস্তা ১শ'ত টাকা নেয়। টাকা না দিলে আমাদের মালামাল আটক করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। তাই বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দিতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি জানান, যেভাবে প্রতি রাতে সীমান্তে গরু, মহিষ, মদ, গাঁজা ও ইয়াবা চিনি, কসমেটিক, আসছে, তাতে এলাকার যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। তিনি আরো জানান, থানা পুলিশ ভাগ ভাটোয়ারা পাচ্ছেন। বিদায় প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এ ব্যাপারে মধ্যনগর থানার ওসি মোহাম্মদ এমরান হোসেননের সরকারি মোবাইল ফোনে কল করে থানার লাইনম্যান উজ্জ্বল মিয়া চোরাকারবারিদের কাছ থেকে আপনার নামে টাকা তুলে এমন প্রশ্ন ওসিকে করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়ে আপনার সাথে আমি আগামী ৩ তারিখ কথা বলব বলে তিনি কলটি কেটে দেন।

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এম, এন, মোর্শেদ, পিপিএম-সেবা বলেন, এ ব্যাপারে খুব দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবং চোরাচালানের সাথে যদি কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে