মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক হুমকি’র মুখে

ভেড়ামারায় আকস্মিকভাবে পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ১১ আগস্ট ২০২৪, ১৭:০৯
ছবি : যায়যায়দিন

প্রমত্তা পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক হুমকির মুখে রয়েছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীর ভাঙন দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করছে। আকস্মিকভাবে পদ্মা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভেঙে পড়ছে নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ ইটভাটা। ভাঙনে কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা ও বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী জনপদ টিকিয়ে রাখতে দ্রত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আতঙ্কিত এলাকাবাসী। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এর কারণে ভেড়ামারায় দিনদিন ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে।

পদ্মার তীব্র স্রোতে দিনদিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। ফলে ভেড়ামারা উপজেলার কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক ও রায়টা বেড়িবাঁধ এখন হুমকির মুখে। রায়টা বেড়িবাঁধ ভাঙন থেকে মাত্র ২শত মিটার দূরে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৪হাজার পরিবারের বাড়িঘর।

বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা বেড়িবাঁধের পাশেই রায়টা পাথর ঘাট। অন্যতম সুন্দর্যময় দর্শনীয় স্থান রায়টা পাথর ঘাট। এখানে রয়েছে পিকনিক স্পট। উপজেলার ফয়জুল্লাহপুরে ১ কিলোমিটার, মসলেমপুরের দুটি পয়েন্টে ৬শত মিটার ও ৪শত মিটার এলাকায় পদ্মা নদীর ডানতীরে ভাঙন হচ্ছে।

এসব পয়েন্টে নদী ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকের আবাদী জমি। প্রতিদিন পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাঁধের কাছে এসে পানির ধাক্কা লাগছে। পানির স্রোতে ঘুরপাক ও পানির তীব্রতায় রায়টা বেড়িবাঁধ ভাঙতে শুরু করেছ। এই বাঁধ ভেঙে গেলে রায়টা নতুন পাড়া, ফয়জুল্লাপুর এই দুইটি গ্রাম আগে পানিতে ডুবে যাবে। পানিবন্দি হয়ে পড়বে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি। পদ্মায় পানি তুলনামূলক কম হলেও বন্যার পানি আসা শুরু করেছে। অপর দিকে ভেড়ামারার ১২মাইল টিকটিকি পাড়ার সামনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশত একর ফসলি জমি।

পদ্মায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণেই পদ্মায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। যা দেখে স্থানীয় মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। ভেড়ামারার মসলেমপুর ও ১২ মাইল এলাকায় আবারও নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক একর ফসলি জমি। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এর কারণে ভেড়ামারায় দিনদিন ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ভাঙনরোধে জরুরিভাবে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। ভাঙন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রæতই কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইতোমধ্যেই অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। দ্রæতই জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। ভেড়ামারার মসলেমপুর এলাকায় ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড পশ্চিমাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজসহ পানি প্রকৌশলীরা। নদী তীরে ব্যবসায়ীদের জড়ো করে রাখা বালুর স্তুপ ভাঙন তীব্র করছে বলে জানান প্রকৌশলীরা।

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, এখন যে ভাঙন দেখা দিয়েছে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের উদ্যোগ রয়েছে দু-একদিনের মধ্যেই ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে। পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য ১টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য নিয়মিত আভিযান চলবে।

এলাকাবাসী সালাম হোসেন বলেন, ভেড়ামারা ১২মাইল মসলেমপুর এলাকায় পদ্মায় বৈধ বালুমহাল না থাকলেও প্রভাবশালীরা অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করেছেন। এর ফলে পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে এসব এলাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইটভাটা, মসজিদ, হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাট। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এর কারণে ভেড়ামারায় দিনদিন ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে।

বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন বলেন, প্রতি বছর পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রায়টা বেড়িবাঁধে পানির আঘাত হানে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই এলাকার মানুষ। এবারও তাই হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক গ্রাম ডুবে যাবে।

ভেড়ামারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসাইন বলেন, ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও নৌ পুলিশের সমন্বয়ে পদ্মা নদীতে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবন্থা গ্রহন করা হবে।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে