শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১
আখাউড়ায় প্রশাসনের ১০ অফিস ভাঙচুর-লুট

বিধ্বস্ত অফিসের দিকে অপলক চোখে অফিস প্রধান 

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১৫:০৯
ছবি : যায়যায়দিন

টেবিল, চেয়ার, আসবাপত্র, কিছু নেই। খোয়া গেছে ফ্যান, কম্পিউটার। জানালার গ্লাস ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়েছে। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে দাপ্তরিক কাগজপত্র। বিধ্বস্ত সেই অফিসে একটি চেয়ারে বসে অপলক তাকিয়ে আছেন অফিস প্রধান। যেন কিছুই মেলাতে পারছেন না। কি থেকে কি হয়ে গেল। চেনা অফিসটি আজ বড্ড অচেনা লাগছে। এমন দৃশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের।

সোমবার কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে উপজেলার অন্যান্য অফিসের সাথে তছনছ করা হয়েছে এই অফিসটি। অফিস প্রধান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা কাউছার সজীব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছেন মেঝের দিকে। অফিসে কিছু নেই। কীভাবে আবার দাপ্তরিক কাজকর্ম করবেন সেটাই যেন ভাবাচ্ছে তাকে। শুধু তাই নয়, এলজিইডি, সমাজ সেবা, সমবায় অফিস, ডিজিটাল সেন্টার, যুব উন্নয়ন অফিস, পিআইওর অফিসসহ উপজেলা প্রশাসনের ৮/১০টি অফিস তছনছ করেছে ক্ষুদ্ধ জনতা। এসব অফিসের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্কেনার, ফ্যান, চেয়ার, টেবিলসহ আববাত্র ভাংচুর এবং লুটে নিয়ে গেছে। পুড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসি ল্যান্ডের সরকারি গাড়ি। ভাংচুর করেছে সিসি ক্যামেরা। তবে সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, হিসাব রক্ষণ অফিস, নির্বাচন অফিসসহ কয়েকটি অফিসের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে ক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামীলীগ অফিস, একটি ইউনিয়ন পরিষদের অফিস, মুক্তিযোদ্ধা অফিস ভাংচুর ও আসবাপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে। ভাংচুর হয়েছে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের অফিসে।

ক্ষুব্ধ জনতা উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি ও পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফার বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ভাংচুর হয়েছে আরও কিছু নেতার বাড়িঘর। রাধানগর স্পোর্টিং ক্লাব ভাংচুর করেছে আন্দোলনে অংশ নেয়া লোকজন। তবে মঙ্গলবার আখাউড়ার পরিস্থিতি শান্ত স্বাভাবিক। কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

সরজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, অফিসগুলো সম্পূর্ণ ফাঁকা। ভেতরে কোন আসবাবপত্র, ফ্যান, লাইট, কম্পিউটার নেই। মেঝেতে পড়ে আছে কিছু কাগজপত্র। সরকারি গাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাতাসে আগুণ পোড়া গন্ধ। নাম প্রকাশে কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, বেলা ৩ টার দিকে হাজার হাজার যুবক উপজেলা প্রশাসনের অফিস ভাংচুর করে লুটপাট করে নিয়ে যায়।

বাড়ান্দায় পায়চারি করছেন যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মুসেলহ উদ্দিন, সমবায় কর্মকর্তা দুবরাজ রবি দাস, সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কুদ্দুছ চৌধুরী বলেন আমাদের অফিসের আসবাপত্র ও বই নিয়ে গেছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা কাউছার সজীব বলেন, আমার অফিসের সবকিছু নিয়ে গেছে। সবকিছু গোছাতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। এখন কীভাবে কাজ করবোন সেটাই ভাবছি।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমার অফিসের লেপটপ, ডেস্কটপ, স্কেনার, ফ্যান নিয়ে গেছে। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজালা পারভীন রুহী ভালো আছেন জানিয়ে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের অনেকগুলো দপ্তর লটু হয়ে গেছে। এখন এগুলো পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে