সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ ভাদ্র ১৪৩১

গাজীপুরে থানায় হামলা, দুই বাসে অগ্নিসংযোগ, পুলিশ আহত

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ০৪ আগস্ট ২০২৪, ২১:৪৫
ছবি-যায়যায়দিন

গাজীপুরে কোটা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীরা বাসন থানায় হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার বিকেলে বিক্ষোভকারীরা ভোগড়া বাইপাস সড়ক দিয়ে মিছিল নিয়ে অতিক্রমকালে বাসন, জেলা পুলিশের জয়দেবপুর থানায় ইটপাটকেল ছুঁড়ে কাঁচের জানালা ভাংচুর করে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এছাড়া দুপুরে আন্দোলনকারীরা আওয়ামীলীগের কার্যালয় ও শ্রীপুরের মাওনা হাইওয়ে থানার সামনে রাখা দুর্ঘটনা কবলিত জব্দ করা দুই বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে তারা। আন্দোলন কারীদের হামলায় জয়দেবপুর থানার ওসিসহ কয়েক পুলিশ আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মাহবুবুর রহমান জানান, সম্প্রতি উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনাবাজার এলাকায় দুর্ঘটনায় শিকার হয় দুটি বাস। ইমাম পরিবহন ও অপর পরিবহনের বাস দুটি মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশ জব্দ করে ফ্লাইওভারের দক্ষিণ পাশে একটি অস্থায়ী ফাঁড়ির সামনে মহাসড়কের উপর দাঁড় করে রাখা ছিল। রোববার দেড়টার দিকে মাওনা এলাকায় আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভের এক পর্যায়ে মহাসড়কের পাশে রাখা বাস দুটিতে আগুন দেয়।

বাসন থানার এসআই আব্দুল্লাহ ইবনে সাইদ জানান, রোববার বিকেল পাঁচটার কিছু পরে বিক্ষোভকারীরা ভোগড়া বাইপাস সড়ক দিয়ে মিছিল নিয়ে অতিক্রমকালে থানার ইটপাটকেল ছুঁড়ে। এতে থানার কয়েকটি জানালার কাঁচ ভেঙ্গে গেছে। পরে তারা থানা ক্যাম্পাসে যাওয়ার চেষ্টাকালে পুলিশ তাদের কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে রোববার সকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির প্রতিবাদে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগ, গাজীপুর মহানগর যুবলীগ, বাসন থানা যুবলীগের নেতা-কর্মীরা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে মিছিল শেষে তারা স্থানীয় শাপলা ম্যানশন সুপার মার্কেটের সামনে প্যান্ডেলের নিচে জমায়েত হন। দুপুরে তারা খাবার খেতে তাবু এলাকা ছেঁড়ে চলে গেলে জয়দেবপুরের শিববাড়ি ও আশেপাশের এলাকা থেকে কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীরা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা দখলে নিয়ে বিক্ষোভ করে।

এক পর্যায়ে শাপলা ম্যানশন সুপার মার্কেটের সামনে থানা আমাদের আওয়ামীলেিগর টানানো প্যান্ডেল ভেঙ্গে ফেলেছে। পরে তারা সেখানে থাকা কোটা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশ বক্স ও সওজে’র ক্যাম্পাসে থাকা গাড়ি ভাংচুর করেছে। চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের মালপত্র তছনছ ও প্লাস্টিকের রোড ডিভাইডারে অগ্নিসংযোগ করেছে।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল হালিম সরকার জানান, সকালে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফজাল হোসেন সরকার রিপন, কোষাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল হালিম সরকার, মোঃ আকরাম হোসেন, মহানগর আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হীরা সরকার,গাজীপুর মহানগর যুবলীগ আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, বাসন থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক রাকিব সরকার, খোরশেদ আলম সরকারের নেতৃত্বে খন্ড খন্ড মিছিল জাগ্রত চৌরঙ্গীর এলাকায় ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-গাজীপুর সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় শাপলা ম্যনশন সুপার মার্কেটের সামনে তাঁবুর নীচে তারা জমায়েত হন। কিন্তু দুপুরে আমরা লাঞ্চ করতে প্যান্ডেল ছেঁড়ে চলে গেলে জয়দেবপুরের শিববাড়ি ও আশেপাশের এলাকা থেকে কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীরা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা গিয়ে বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। এক পর্যায়ে শাপলা ম্যানশন সুপার মার্কেটের সামনে আমাদের টানানো প্যান্ডেল ভেঙ্গে ফেলেছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের এডিসি (ট্রাফিক) অশোক কুমার পাল জানান, বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন চলাকালে মহানগর এলাকায় অটোরিকশা ছাড়া দূরপাল্লার ও আঞ্চলিক সড়কের কোন গাড়ি চলাচল করেনি। তবে গাড়িতে কোন হামলার খবর পাওয়া যায়নি। এ সময় ঔষধ ও কাঁচা বাজারের দোকানপাট ছাড়া গাজীপুর শহর ও চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকার অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। ভোগড়া ও আশেপাশের এলাকার বিক্ষোভ চলাকালে অধিকাংশ গার্মেন্ট ও কলকারখানা ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান, কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের নিচতলায় এবং কালিয়াকৈর থানা গেইট এলাকায় দুইটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করেছে। চন্দ্রা এলাকা হাইওয়ে পুলিশ বক্স ও আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, কালিয়াকৈর ফায়ার স্টেশন অফিস ও চন্দ্রা বনবিভাগের রেঞ্জ অফিসে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাংচুর করেছে আন্দোলনকারীরা।

এছাড়া উপজেলার সফিপুর আনসার একাডেমীর ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে আনসার সদস্যরা আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করেছে শুনেছি। তবে অপর একটি মাধ্যমে জানা গেছে এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আনসার সদস্যদেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের পাশে থাকা কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করেছে তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজীপুর শহরের শিববাড়ি মোড় এলাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করার সময় দুপুরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা দা ও লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে তাদের ধাওয়া করলে তারা জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের দিকে চলে যায়। পরে বেলা ৩টার দিকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ - ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ফের দাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর আন্দোলনকারীরা একত্রিত হয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে।

জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন দেলু জানান, রোববার বিকেলে কোটা আন্দোলনকারীরা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ পাশের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করেছে। এতে পার্টি অফিস ও দোকানসহ মালামাল পুড়ে গেছে।

জয়দেবপুর থানার ওসি মো. ইব্রাহিম খলিল জানান, বিকেলে আন্দোলনকারীরা হোতাপাড়ায় অবস্থিত বিজিবি ব্যাটালিয়ান কার্যালয়ে গেট এবং গাজীপুর তার জয়দেবপুর থানায় হামলা করে। এ সময় কয়েক পুলিশ আহত হলে পুলিশ টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

উল্লেখ্য, এর আগে শনিবার গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনায় চৌরাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তিনটি পুলিশ বক্স ও পুলিশের পাঁচটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেন। সংঘর্ষে জাকির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তার বাড়ি সাতক্ষীরায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে