বানিয়াচংয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামিদের ধরতে পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি করা ও মুল আসামিকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে অসদাচরণ এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে।
তবে পুলিশের দাবি কারো সাথে কোন খারাপ আচরণ বা অযথা হয়রানি করা হয়নি। সংঘর্ষের সময়ে সংগ্রহ ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি করা হয়েছে। আর সেই আসামিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
আটকের নামে যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই এই মামলার তালিকাভুক্ত আসামি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের উপর হামলা করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাদের। মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারের নামে পুলিশ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আসামিদের তালিকা দিচ্ছে বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
যুবদল নেতা ওয়াহিদুল মুরাদের মা সাংবাদিকদের জানান, গত মঙ্গলবার রাতে আমার ছেলে ওয়াহিদুল মুরাদকে ধরতে বাসায় হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু এসময় তাকে না পেয়ে আমার ছোট ছেলে ব্যবসায়ী জাহিদ ফজল সুমনকে ধরে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ৪টা চেয়ার, ড্রেসিং টেবিল, থাই জানালার গ্লাস, পানির ট্যাংকি, ওয়াইফাইয়ের রাউডার, বাথরুমের দরজা ভেঙে চুরমার করে দেয় পুলিশ।
ভাঙচুর করার সময় পুলিশের ড্রেস পড়া প্রায় ৩০ থেকে ৪০জন লোক উপস্থিত ছিল। এদিকে পরের দিন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান ওয়ারিশ উদ্দিন খানের কুতুবখানীস্থ বাসায় তাকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালায়।
সেখানে ওয়ারিশ উদ্দিনকে না পেয়ে তার জ্যেষ্ঠ ছেলে অসীম খানকে ধরে নিয়ে যায়। অসীম খান বর্তমানে বীমা কোম্পানিতে কাজ করছেন। রাজনীতির সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। সেখানেও যাওয়ার সময় পুলিশ পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে যায় বলে জানান বিএনপি নেতা ওয়ারিশ উদ্দিন খান। তিনি আরো জানান, মামলার আসামিকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের দায়ের করা এই মামলা নিয়ে কিছু দালাল প্রকৃতির লোক মামলার আরজি থেকে নাম কাটানো ও নাম সংযুক্ত করে দিবে বলে আসামি ও সাধারণ মানুষের সাথে বিভিন্ন উপায়ে দরদাম করা শুরু করে দিয়েছে।
লা হচ্ছে টাকা দিলে যে কারো নাম বাদ ও যোগ করা যাবে কাউকে হয়রানি করবেনা। অভিযোগ উঠেছে, মামলার আরজিতে তালিকাভুক্ত আসামি ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে পুলিশ। খেলার মাঠ থেকে এমনকি বাজার থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে ওই মামলার আসামি দেখানো হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে ভয়ে অনেকেই মুখ খোলতে রাজি হননি। আসামি না হয়েও হামলার সাথে জড়িত না থাকার পরও অনেকেই পুলিশের হয়রানির ভয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন অন্যত্র। আশ্রয় নিয়েছেন নিজ নিজ আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে। অন্যদিকে মামলায় অজ্ঞাত আসামি ধরার নামে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।
কোথাও কোথাও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এসব ঘটনায় নিরপরাধ প্রতিপক্ষকে হয়রানির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন সরকার দলীয় গুটিকয়েক নেতা। ব্যক্তিগত বিরোধ, নির্বাচনের সময় পক্ষে না থাকা ঘটনায়ও প্রতিপক্ষকে এই মামলায় জড়ানো হচ্ছে। কয়েক রাজনৈতিক দলের নেতা নিজের মতো করে কয়েক দফায় আসামির তালিকা করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করছেন।
আসামির তালিকায় দেখা গেছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নামও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মামলার আইও এসআই সন্তোষ চৌধুরী জানান, সম্পুর্ণ প্রমাণের ভিত্তিতেই আসামিদের ধরা হচ্ছে।
আমরা কাউকে অযথা কোনো রকম হয়রানি করছিনা। তবে আসামি নিয়ে বাণিজ্য যে হচ্ছে সেটা আমরাও শুনেছি। এসআই সন্তোষ চৌধুরী আরো জানান, আমাদের অগোচরে যদি এমনটা কেউ করে থাকে তাহলে আমাদের কিছু করার থাকেনা। অনেকেই নাম দিচ্ছেন সেটা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।
এই বিষয়ে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হোসাইন জানান, পুলিশ কাউকে হয়রানি করেনি। যারা প্রকৃত আসামি শুধুমাত্র তাদেরকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে।
অপর প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, পুলিশ কারো বাড়ির কোন কিছু ভাঙচুর করেনি। পুলিশের বিরুদ্ধে এটা গুজব। কে বা কারা এমনটা করছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে। তবে আসামি ধরার নামে স্কুল-কলেজের নিরীহ শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধে পুলিশকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় বানিয়াচং বড়বাজারের শহীদ মিনারের সামনে কোটা বিরোধীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশের পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
এই ঘটনায় বানিয়াচং থানার এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম বাদি হয়ে ২২ জুলাই (সোমবার) বানিয়াচং থানায় ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬ থেকে ৭শ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
যাযাদি/ এম