রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

জগন্নাথপুরে উন্নত সেবা দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২৬ জুলাই ২০২৪, ১৪:২৩
ছবি: যায়যায়দিন

উন্নত ও মানসম্মত চিকিৎসা সেবায় অনেক ধাপ এগিয়ে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সারা জেলার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে এই হাসপাতাল। আগের সময়ে চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে শুনা যেতো নানান আলোচনা-সমালোচনা, সাম্প্রতিকের সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে বর্তমানে উন্নত ও মানসম্মত চিকিৎসা সেবায় অনেক ধাপ এগিয়ে গেলো জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

সরজমিনে পরিদর্শন কালে হাসপাতালে চিকিৎসারত বেশ কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবায় রোগীদের সন্তুষ্টির কথা। এতে সেবা নিতে প্রতিনিয়ত এই হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে রোগীদের ভীড় চোখে পড়ার মতো, আর কর্মরত ডাক্তাররাও নিরলসভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়াতে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসা সেবা থেকে মূখ ফিরিয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভিড় জমাচ্ছে রোগীরা। সেবাসমূহের মধ্যে নরমাল ও সিজার ডেলিভারিতে উপকৃত হচ্ছে গর্ভবতী রোগীরা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৫০শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসক, ৬ জন কন্সাল্টেন্ট ও ২৮ জন দক্ষ নার্স (সেবিকা) মিডওয়াইফ ৭জন সহ জরুরি ও বহির্বিভাগে রোগীদের নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গর্ভবতী (প্রসূতি) রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে খোলা হয়েছে আধুনিক মানের যন্ত্রপাতি সহ অপারেশন টিয়েটার। উপজেলায় ৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৩টি এফ ডব্লিউ সির মাধ্যমে ডেভিভারি সেবা চালু রয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে ৭৫জন মহিলার নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে এর সাথে মাসে ১৩০জনের সিজার হয়ে থাকে। এখানে এনডিসি কর্নার রয়েছে, যেখানে সরকারীভাবে ডায়বেটিস্কের ঔষধ দিয়ে থাকেন।

পেশারের ঔষধ পাওয়া যায় দুই রকমের করস্টেলের ঔষধ পাওয়া যায় তিন রকমের এই ঔষধগুলো উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স পাওয়া যেত না এখন রোগীগুলো এই ঔষধ পাচ্ছে। নতুনভাবে আই সেন্টার করা হয়েছে, ভিডিও কলরের মাধ্যমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের একজন ডাক্তার দেখানো ব্যবস্থার করা হয়। সেখান থেতে সমাধান পেয়ে এই হাসপাতালে থাকা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্সগন চশমা দিয়ে থাকেন। সাজারি বা অপারেশ লাগলে সিলেট থেকে ব্যবস্থা করা হয়। এখানে এনসি কর্নার রয়েছে যেখানে গবর্বতি মহিলাদের পরিক্ষা করা হয়।

উপজেলর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রতিদিন প্রায় ৪০০ জন এবং জরুরি বিভাগে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও সিজারিয়ান অপারেশন স্তর চালু হওয়ার পর থেকে অপারেশন যোগ্য প্রসূতি রোগীদের সিজার অপারেশন করা হচ্ছে। প্রতিমাসে নরমাল ডেলিভারী করা হয় প্রায় ৬০%। জরুরী প্রয়োজনের দিক বিবেচনায় ২৪ ঘন্টা হাসপাতালে ডেলিভারীর ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। মারাত্নক অপুষ্টিতে ভুগা বাচ্ছাদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ও উন্নত ফর্মুলা মিল্ক এফ৭৫, এফ ১০০ দুধের ব্যবস্থা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও দাতা গোষ্ঠীদের সার্বিক সহযোগিতায় রোগীদের জন্যে পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত খাবার ব্যবস্থা,খাদ্য পানিয় সুবিধার্থে ফিল্টার স্থাপন, প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী প্রদান,পরিচ্ছন্ন টয়লেট ও হাসপাতাল এলাকার পরিচ্ছন্নতা সহ হাসপাতালের সার্বিক দিক বিবেচনা করলে খুব সহজেই প্রতিয়মান জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা শারমিন আরা আশা যোগদানের পর থেকে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম সহ চিকিৎসার মান অনেক ধাপে উন্নত হয়েছে।

এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিন আলম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসার মান অনেক ধাপে এগিয়ে গেছে, মেডিকেলের আশপাশ এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত জমে থাকা ময়লার স্তুপগুলো অপসারণ করে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও নিয়মিত পানিসরবরাহ সহ সম্পূর্ণ মনোরম পরিবেশে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে এই মেডিকেলে। হাসপাতালের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন থাকলে রোগীদের অসুস্থতা অনেক সময় বৃদ্ধি পায়। তাই রোগীদের প্রশান্তি ও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণে চিকিৎসা সেবার সকল স্তরকে রোগীদের জন্যে সার্বক্ষণিক উম্মুক্ত রাখা হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেবার মান বৃদ্ধি হওয়ার ফলে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসা সেবা থেকে মূখ ফিরিয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রোগীরা প্রতিনিয়ত ভীড় জমাচ্ছে,এতে কর্মরত চিকিৎসক ও সেবক/নার্সরাও নিরলস ভাবে রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। আর রোগীরা যথাসময়ে সুচিকিৎসা সেবা পেয়ে সন্তুষ প্রকাশ করছে রোগীরাও।

হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. শারমিন আরা আশা বলেন, একসময় এই হাসপাতালে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হলেও, সকল প্রতিকূলতার অবসান ঘটিয়ে বর্তমানে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান বাড়াতে সেবা স্তরগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এক সময় ফার্নিচার এর অভাবে চিকিৎসকদের থাকার রুমের অবস্থা ছিল একদম সাদামাটা। এ বিষয়ে আমি আমাদের উপরের স্যারদের সাথে আলাপ করে পরবর্তীতে এ সমস্যার সমাধান করেছি। হাসপাতালের বিশেষ কোন প্রয়োজনে স্থানীয় সাংসদ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় পরামর্শ ও লজিস্টিক সাপোর্ট সহ সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।

চিকিৎসা সেবা স্তরগুলো রোগীদের জন্যে উম্মুক্ত রাখা হলেও হাসপাতালে যে এম্বুলেন্স আছে সেটি অনেক পুরাতন এবং হাসপাতালের মুল ভবনটিও পুরাতন ও জরাজীর্ণ হওয়ার ফলে সেবায় কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে রোগীদের জন্যে যেভাবে সেবার মানকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে সেই মানকে যেন আরো উন্নত ও আধুনিকায়ান করে সুন্দর ও সু-স্বাস্থ্যকর পরিবেশে যাতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে পারি সেই জন্যে ওই পুরাতন (জরাজীর্ণ) ভবনটি সংস্কার প্রয়োজন।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে