রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট নিরসনে কাজ চলছে : নৌ প্রতিমন্ত্রী

চট্টগ্রাম ব্যুরো
  ২৫ জুলাই ২০২৪, ১৭:৩৪
ছবি-যায়যায়দিন

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ইন্টারনেট নির্ভর হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম বন্ধের কারণে বন্দরে কন্টেইনার জট লেগে গেছে। এই জট নিরসনে কাজ চলছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটির এক নম্বর জেটিতে আয়োজিত বন্দর শ্রমিকদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশের অচলাবস্থায়ও চট্টগ্রাম বন্দর থেমে থাকেনি। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডেলিং ঠিকভাবে হওয়ায় এখানে একটা কনটেইনারের উপরে চারটা-পাঁচটা করে কন্টেইনার বসানো হয়েছে। এ দুর্যোগের মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর ৭ থেকে ৮ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে। কিন্তু সেগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বেরিয়ে যেতে পারেনি। কারণ আমাদের কাস্টমস পুরোপুরি ডিজিটাল ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের সব কন্টেইনার জট লেগে গেছে। করোনাকালে আমরা বিভিন্ন অফডকে কন্টেইনার রেখে কাস্টমসের সহযোগিতায় সবগুলো রিলিজ করেছিলাম। আশা করি, এবারও আমরা সবার সহযোগিতা পাবো।

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা, ব্যবসায়ী সংগঠন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। আমরা শুনেছি, দেখেছি ব্যবসায়ীরা সাহসিকতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন, এ ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এতটা গতিশীল হয়েছে, এত বিস্তৃত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার চেষ্টা হয়েছিল, ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছিল। আমার মনে হয় সেই ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আমাদের অর্থনীতি গতিশীল থাকবে। আমাদের যে লক্ষ্য ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ, সেই লক্ষ্য থেকে কেউ টেনে ধরতে পারবে না।

রেলপথে কন্টেইনার পরিবহন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম চলছে। আপনারা জানেন রেল বন্ধ হয়ে গেছে, নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্রিজ কালভার্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা আলোচনা করছি। আমাদের রেল আছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেলসংযোগ হওয়ার কারণে কমলাপুর আইসিডি অনেক সংকুচিত হয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট আমাদের আইসিডির ওপর দিয়ে গেছে। পানগাঁওতে কিছুটা স্থবির অবস্থা তৈরি হয়েছিল। করোনার সময় কন্টেইনার জট হয়েছিল। অফডক, কাস্টমস, এনবিআর সাপোর্ট দিয়েছিল। সম্মিলিতভাবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। আমি মনে করি, খুব দ্রুত জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারবো।

কন্টেইনারের ওপর বন্দরের ডেমারেজ আদায় প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক কনটেইনার আমদানিকারক পরিস্থিতির কারণে খালাস করতে পারেনি। তাদের একটা চার্জের মুখোমুখি চলে এসেছে। আপনারা জানেন যে চট্টগ্রাম বন্দর ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ওয়েভার দিয়েছিল করোনার সময়। আমাদের কাছে ব্যবসায়ীরা সেভাবে যদি উপস্থাপন করে চট্টগ্রাম বন্দর সেটা নিশ্চিতভাবে বিবেচনা করবে। কারণ আমরা তো শুধুই যে ব্যবসা করার জন্য নয়, দেশের অর্থনীতিকে সেবা করার জন্য এ বন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এ বন্দর পরিচালনা হবে না। অর্থনীতির সেবার ক্ষেত্রে এ বন্দর কাজে লাগবে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সঠিক তথ্য প্রমাণসহ আসলে আমরা পাশে দাঁড়াবো।

চলমান প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে বলেছিলাম, ২০২৪-২৫ সালে আমরা চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনালের কাজ করবো। কিন্তু পারিনি তো। এটাই বাস্তবতা। কেন পারিনি, কারণ তিন বছর ব্লক ছিলাম। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা থেমে গিয়েছিল। এখন আমরা সচল হয়েছি। কিন্তু এখন যে সংকট তৈরি হলো পৃথিবীর দেশে দেশে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থার ওপর যে বার্তা গেল সেটা আমাদের জন্য ভালো নয়। আমি জানি না, যাদের সঙ্গে আমরা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবো তারা কীভাবে দেখছেন। পরবর্তীতে আলোচনা না করে এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্ররা আন্দোলন করবে এটাইতো স্বাভাবিক। ভুল-ত্রুটি, ভালো-মন্দ যাই থাক তরুণদের একটি বোঝাপড়া আছে। সে বোঝাপড়া নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে এবং আন্দোলন করেছে। আন্দোলনে নামার সঙ্গে সঙ্গে সরকার তাদের দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে আপিলের বিভাগে রিট করেছে। ২০১৮ সালে সরকারই তো এ কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল। সেটা আবার হাইকোর্ট বাতিলের রায় দিয়েছিল। আপিল বিভাগ সেটা আবার স্থিতিশীলতা দিয়েছে। যেহেতু বারবার এরকম হচ্ছে তাই ছাত্ররা দাবি করেছিল কোটা সংস্কার করে একটি আইনি কাঠামো করে দেওয়ার। আমাদের সঙ্গে কমিউনিকেশন গ্যাপ ছিল। প্রধানমন্ত্রী চীনে সফর ছিলেন। সফর সংক্ষিপ্ত করে আবার দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, যখন ছাত্রদের সঙ্গে সরকারের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি হয়েছে তখন আমরা ঢাকা শহরে অগ্নিসন্ত্রাস, তাণ্ডব ও সন্ত্রাস দেখলাম। আলোচনার মাধ্যমে যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তাহলে তো তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। সেজন্য তাড়াহুড়ো করেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা হামলা করল। পুলিশের পোশাক পরে সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দুর্যোগ ভবনে আগুন দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সার্ভার স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হল। সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে সংবাদের কন্টেন্ট আগে থেকেই তৈরি করে সরবরাহ করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে একটি পরিত্যক্ত দেশ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছিল।

নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে শ্রমিক যারা আছেন তাদেরও অনেক দাবি দাওয়া আছে। স্কপের পাঁচ দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন আপনাদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছিলাম। সকল রাজনৈতিক দল এক হয়ে শ্রমিকদের ওই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। কিন্তু সে শ্রমিক আন্দোলন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়নি, পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করেনি। সেটা একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ছিল। ছাত্রজীবনে আমাদেরও দাবি ছিল। আমরা সচিবালয় ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করেছি। শিক্ষামন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করেছি। কিন্তু কখনও ঢুকে আক্রমণ করিনি।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বর্ণনা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের গণমাধ্যম এত বেশি শক্তিশালী যে কোনো সংবাদ গোপন থাকে না। কোনো না কোনোভাবে পেয়ে যায়। দেশের এরকম একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে দেশের সার্বিক মানুষের শান্তি স্থাপন ও স্থিতিশীলতা, রক্ষা করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। আমরা জিয়াউর রহমান ও এরশাদ আমলের জরুরি অবস্থা দেখেছি। ২০০৭ সালের ওয়ান এলেভেন সরকারের জরুরি অবস্থাও দেখেছি।

তিনি আরও বলেন, এবার কারফিউ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে আনন্দিত করেছে। কারফিউ জারি করার পর স্বাভাবিক অবস্থা আস্তে আস্তে ফিরে আসতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমি ধন্যবাদ জানাব। কারণ আপনারা বাংলাদেশের লাইফ লাইন এ চট্টগ্রাম বন্দরকে এক মিনিটের জন্যও বিচ্ছিন্ন হতে দেননি। করোনা মহামারির সময়ও চট্টগ্রাম বন্দর পরিবারেরও অর্ধশতাধিক মানুষ জীবন দিয়েছে। তবুও বন্দর বন্ধ হয়নি।

বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ দখল করতে বিদেশ থেকে উষ্কানি দেওয়া হয়েছে। সে উষ্কানিতে মির্জা ফখরুল বললেন আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি আছে। সরকার উৎখাত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কিন্তু এখন মির্জা ফখরুল বলছে এ আন্দোলনের সঙ্গে আমরা নেই। আমরা সমর্থন দিয়েছি, সম্পৃক্ত হয়নি। এত বড় অভিনেতা আমি কোনোদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখিনি। আমরা সিনেমা, নাটক ও যাত্রা দেখেছি।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে