রোববার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১

মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল কলসভর্তি গ্রেনেড

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ০৮ জুলাই ২০২৪, ২০:৪৬
ছবি-যায়যায়দিন

গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকার একটি পরিত্যক্ত জমিতে সোমবার (৮ আগস্ট) সকালে মাটি খননের সময় মাটির নীচ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৬টি আর জে এস গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। পরে বিকালে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিস্ক্রিয় করে।

বিস্ফোরণের শব্দে আশেপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এবং ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলের আশপাশের স্থানীয় লোকজনকে নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে দেয়া হয়।

স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও সৌদি প্রবাসী আবুল কাশেম বাড়ি নির্মাণ করার জন্য গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবীথি (জোড়পুকুরপাড়) এলাকায় সাড়ে ৩/৪ বছর আগে তিন কাঠা জমি ক্রয় করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে ফেলে রাখেন। দুই মাস আগে তিনি দেশে ফিরে উক্ত জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।

সোমবার সকালে এখানে স্থানীয় শ্রমিকরা মাটি খনন কাজ শুরু করে। সকাল ৯টার দিকে মাটির খনন করার পর গর্তের মধ্যে একটি মাটির কলস বেরিয়ে আসে। এসময় কলসটি আঘাত লেগে ভেঙে গেলে কলসের ভিতর গ্রেনেড সদৃশ কয়েকটি বস্তু দেখা যায়। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে পরীক্ষা করে।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করে, এগুলো পরিত্যক্ত গ্রেনেড। পরে নিরাপত্তার জন্য এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং সীমানা প্রাচীর ঘেরা জমির গেটে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।

বাড়ির মালিক আবুল কাশেম বলেন, আমি ৩/৪ বছর আগে জমিটি ক্রয় করেন। পরে এখানে মাটি ভরাট করে সীমানা প্রাচীর দেই। দুই মাস আগে দেশে ফিরে ৬ তলা বাড়ি করার কাজ শুরু করি। সোমবার শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে মাটি খোড়ার সময় প্রথমে একটি মাটির কলস পাওয়া যায়। পরে কোঁদালের আঘাতে কলসটি ভেঙ্গে গেলে গ্রেনেডের মতো বস্তু দেখা যায়। পরে শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি আমাকে জানায়। পরে আমি প্রথমেই ৯৯৯ ফোন দেই। পরে নিজে গাজীপুর সদর থানায় গিয়ে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন।

এ বিষয়ে সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ রাফিউলল করিম জানান, গ্রেনেড সদৃশ কিছু বস্তু পাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা করে এগুলো বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু ধারণা করা হয়। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে আশেপাশের লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং জায়গাটির গেটে তালা দেওয়া হয়। পাওয়া যাওয়া বস্তুগুলো পরীক্ষা করার জন্য ঢাকায় বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বেলা বারোটার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের বোম ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামানের নেতৃত্বে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১৯ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তারা দুটি অত্যাধুনিক রোবট, বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ ঘটনাস্থলে এসে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এসময় আশেপাশের বিভিন্ন বাসা-বাড়ীর লোকজন ও উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দেয়া হয়।

পরে কলসের ভিতর থেকে ১৬টি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। পরে বিকেল চারটার দিকে এগুলো নিষ্ক্রিয়করণ শুরু হয়। এ সময় হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে নিরাপদ স্থানে গ্রেনেট গুলোর পর পর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের শব্দে আশেপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এ সময় আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। বাসার ছেলের কাছে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়।

গ্রেনেড নিস্ক্রিয়করণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ডিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান।

তিনি বলেন, গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকায় মাটি খননের সময় বিস্ফোরক জাতীয় কিছু একটা পাওয়া গেছে। এমন খবর পাওয়া সাথে সাথে দ্রুত আমরা আমাদের টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসি।ঘটনাস্থলে আমরা এসে দেখতে পেলাম, একটি মটকার (মাটির কলসি) ভিতরে প্রচুর শক্তিশালী গ্রেনেড, যাকে আর জে এস গ্রেনেড বলা হয় এধরনের গ্রেনেড রয়েছে।

একারণে এ জায়গাটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যে কারণে আমরা আমাদের আর ও ভি রোবট (রিমোটলি অপারেটর ভেহিকেল) এই রোবটের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকটি গ্রেনেড আমরা দেখার চেষ্টা করি। আমরা দেখার চেষ্টা করি গ্রেনেডের পিনগুলো অক্ষত আছে কিনা। কারণ গ্রেনেডের পিন খুলে গেলে এটি খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।

তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে আমরা সফলতার সাথে সবগুলো গ্রেনেডগুলো আলাদা করতে সক্ষম হই। পরে আমাদের টিমের দুইজন সদস্য বোম্ব শ্যুট পড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যেকটি গ্রেনেড আমরা আলাদা আলাদাভাবে ডিসপোজ করতে সক্ষম হই।

মাহমুদুজ্জামান বলেন, আপনারা জানেন যে, আর জে এস গ্রেনেড এটা আমাদের দেশে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় এই গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা আসলে পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার আছে। এগুলো আমরা নিয়ে যাব, এটা আমরা ফরেনসিক চেক করব, এটা আমরা বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পাঠাবো। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাতে পারবেন এটি কবে কার গ্রেনেড।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি গ্রেনেড লাইভ অবস্থায় ছিল। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। গ্রেনেড গুলো একটি মটকার ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো ছিল। আমরা বলতে চাই এগুলো সেপারেট করা আমাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অনেক আগের ছিল একটা আরেকটার সাথে লেগেছিল, তবু আমরা সফলতার সাথে সবগুলো গ্রেনেড ডিসপোজ করতে সক্ষম হয়েছি।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে