গাজীপুরে ক্লাস নেন ’দপ্তরী’ অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২৪, ২১:৪১

গাজীপুর প্রতিনিধি
ছবি-যায়যায়দিন

গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার আঙ্গুটিয়া চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলেরই দপ্তরী দিয়ে ক্লাশ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকেই ইতোমধ্যে তাদের সন্তানদের নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। এতে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে বলে জানা গেছে। শিক্ষক সংকটের কারণেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন। 

রোববার সকালে স্কুলে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে স্কুলের দপ্তরী মো. সুমন হোসেন দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাশ নিচ্ছেন। 

জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলের দুই শিফটের প্রতি শিফটে একসঙ্গে তিনটি করে ক্লাশ হয়। স্কুলে বর্তমানে চারজন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ দুইজনই প্রশিক্ষণে আছেন। 

প্রধান শিক্ষক মাসুদ মিয়া ঈদের বন্ধের আগে ১৩ জুন থেকে গাজীপুরের চাপুলিয়া এলাকায় লিডারশীপ ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। তার ট্রেনিং চলবে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। 

এমতাবস্থায় সহকারি শিক্ষক নিগার সুলতানাকে এ বছরের ১ জুলাই থেকে গাজীপুর শহরের প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ১০ মাসের (বিটিপিট) ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে স্কুলে থাকা দুইজন শিক্ষকের পক্ষে একইসঙ্গে তিনটি ক্লাশ নেয়া সম্ভব হয়না। 

তাই তিনি সুমন দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলেন বলেন জানিয়েছেন। শুধু আজই নয়, বছরের অধিকাংশ সময় কোন প্রয়োজনের কারণে যখনই কোন শিক্ষক স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন তখনই তিনি ক্লাশ নিয়ে থাকেন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের নির্দেশেই তিনি ক্লাশে যান সুমন।  

স্কুলের সহকারি শিক্ষক হাবিবা আক্তার বলেন, তাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ ৫জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। বর্তমানে সেখানে প্রধান শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষক রয়েছেন। 

তাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক মাসুদ মিয়া এবং সহকারি শিক্ষক নিগার সুলতানা ট্রেনিংয়ে আছেন। এমতাবস্থায় সহকারি শিক্ষক হাবিবা আক্তার ও ফরিদা ইয়াছমিনকে প্রথম শিফটে ও দ্বিতীয় শিফটের ৬টি ক্লাশ নিতে হচ্ছে। একই শিফটে একসঙ্গে তিনটি করে ক্লাশ অনুষ্ঠিত হয়। কোন কোন সময় শিশু শ্রেণির ক্লাসটি অর্ধেক সময় নিয়ে বাকি সময়ে অন্য দুই ক্লাশ নিতে হয়। তবে দুই শিক্ষকের পক্ষে একই সঙ্গে তিনটি ক্লাশ নেয়া সম্ভব হয়না বলে অনেক সময় দপ্তরী সুমন হোসেনও ক্লাস নিয়ে থাকেন। 

স্কুলের প্যারেন্ট টিচার এসোসিয়েশন (চঞঅ)-এর সভাপতি ও স্থানীয় অভিভাবক মাজহারুল হক বলেন, শিক্ষক সংকটের মধ্যে দুইজন শিক্ষক একত্রে স্কুলের বাইরে কিভাবে প্রশিক্ষণে যান। শিক্ষা অফিস কিভাবে তাদের ট্রেনিংয়ের অনুমতি দিলেন, এটা আমার বোধগম্য নয়। 

এছাড়াও বছরের অন্য সময়েও নিয়মিত সব ক্লাশ হয়না। অভিভাবকরা এ বিষয় অবগত হওয়ার পরে অনেকেই তাদের সন্তানদের এ স্কুল থেকে অন্যত্র নিয়ে ভর্তি করাচ্ছেন। আমার জানামতে সম্প্রতি দ্বিতীয় শ্রেনীর ফার্স্ট গার্ল সুমাইয়া, চতুর্থ শ্রেণির ফারিয়া ও দ্বিতীয় শ্রেণির ইসরাতসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অন্য স্কুলে চলে গেছে। বর্তমানে এ স্কুলে ১৩০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। 

রোববার সকালে সন্তানদের স্কুলে ঢুকিয়ে প্রতিষ্ঠানের বাইরে অপেক্ষমান থাকা স্থানীয় আঙ্গুটিয়াচালা এলাকার অভিভাবক শরিফা বেগম ও কুলসুম বেগম, বহুরিয়া চালার নাজমা বেগম একই রকমের অভিযোগ জানিয়ে বলেন, এ স্কুলে নিয়মিত সব ক্লাস হচ্ছে না, বিশেষ করে শিশু শ্রেনিতে পুরোসময় ক্লাস হচ্ছেই না। এখানে টিফিনের ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা এমনকি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়না। আমরা এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাসুদ মিয়া জানান, স্কুলে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে সামনে শিক্ষক নিয়োগের পর এ সংকট থাকবে না বলেন তিনি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে আমাদের শিক্ষক সংকটের কথা জানানো হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে দেরি হলে ডেপুটেশনে আমাদের শিক্ষক দেয়া হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। তবে তিনি দপ্তরিকে ক্লাশ নেয়ার কোন অনুমতি দেননি বলে জানিয়েছেন। যদি অনুমতির কথা বলে থাকে তা হবে সম্পূর্ণ মিথ্যা।  

উপজেলাশিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) দিলারা রহমান জানান, মির্জাপুর ক্লাস্টারে শিক্ষক সংকটের চাহিদা দেয়া হয়েছে। অতিদ্রæত শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা শেষ হলে শূণ্যস্থানগুলো করা হবে। দপ্তরি দিয়ে শিক্ষক নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে হয়েতা তাকে দিয়ে ঠেকার কাজ চালাচ্ছে। 

যাযাদি/ এম