রোববার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

বলাৎকারের পর শ্বাসরোধ করে শিশু জিহাদকে হত্যা 

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি
  ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৫:৪৭
ছবি: যায়যায়দিন

ঈশ্বরদীতে নিখোঁজের একদিনপর পরিত্যক্ত গোডাউনের ঝোঁপঝাঁড় থেকে শিশু জিহাদের বিবস্ত্র মৃতদেহ উদ্ধারের চাঞ্চল্যকর রহস্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ

ঘটনায় আসিফ (৩১) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের চৌকস দল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই শিশু জিহাদকে কখন, কোথায় এবং কিভাবে হত্যা করা হয়েছে সেই ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা করেছেন ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী।

রবিবার দুপুর সাড়ে বারোটায় ঈশ্বরদী থানায় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আসামির বরাতদিয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান, পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী।

থানা পুলিশের দেয়াতথ্য এবং প্রেস ব্রিফিং অনুযায়ী জানাযায়, গত শুক্রবার ৫-ই জুলাই ঈশ্বরদী থানাধীন মুনসিদপুর গ্রামের মালদ্বীপ প্রবাসী হাসেম আলীর ৩য় শ্রেনীতে পড়–য়া ৯ বছরের শিশু সন্তান জিহাদ বিকেলে বন্ধুদের সাথে খেলার পর হারিয়ে যায়। বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত সিএনবি গোডাউনের মধ্যে খেললেও রাত হলেও বাড়িতে না ফেরায় সম্ভাব্য সব আত্বীয়ের বাড়ীতে খোঁজ শেষে জিহাদের সন্ধানে এলাকাতে মাইকিংসহ সেই রাতেই থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন জিহাদের মা। শিশু জিহাদ নিখোঁজের অভিযোগ পেয়ে তৎপর হয় থানা পুলিশ। তারা পরিবারের সহযোগীতায় রাতভর বাড়ির পাশের পরিত্যাক্ত সিএনবি গোডাউনের ভিতর ঝোপ-জঙ্গলে খুঁজতে থাকেন শিশু জিহাদকে। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে ঘটনার দিবাগত (গত ৬ ই জুলাই) ভোর রাতে (সোয়া ৫ টার দিকে) মুনসিদপুর গ্রামস্ব তেতুলতলা মোড় সংলগ্ন পরিত্যক্ত গোডাউন চত্ত¡রের দক্ষিন পশ্চিম কোনে পরিত্যক্ত ভাঙ্গা ০১ তলা ভবনের দক্ষিন পার্শ্বে নারিকেল গাছের নীচে ঝোপঝাড়ের মধ্যে শিশু জিহাদ এর বিবস্ত্র মৃতদেহ একটি প্লাস্টিকের পাটির উপর পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

আরও জানান, শিশু জিহাদ নিখোঁজের পরপরই পাবনা জেলা পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) জনাব আকবর আলী মুনসীর সার্বিক দিক নির্দেশনায় ঈশ্বরদী থানা পুলিশের একটি চৌকস দল ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িত আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির ভিত্তিতে জোর তৎপরতা চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে শিশু জিহাদ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকায় জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার মানিকৈড় (পাকুড়িয়া) মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোঃ আসিফ (৩১) কে সনাক্ত প‚র্বক গ্রেফতার করা হয়।

আসামীর স্বীকারোক্তি এবং পুলিশি তদন্তকালে জানা যায়, ধৃত আসামী আসিফ পেশায় গাড়ী চালক, মাদকাসক্ত এবং বিকৃত যৌন মানসিকতার অপরাধী। সে ঘটনার দিন পরিত্যক্ত ঐ ভাঙ্গা ভবনের মধ্যে ইয়াবা সেবনের জন্য যায়। অপরদিকে শিশু জিহাদ বৃষ্টির মধ্যেই উক্ত ভবনের অদ‚রে তার বন্ধু পিয়াসের সাথে খেলা করছিল। এমন সময় জিহাদের মেজো ভাই শুভ সেখানে গিয়ে শিশু জিহাদের শরীর ভেজা দেখে জিহাদকে বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে চলে গেলে শিশু জিহাদ একটি আম খেতে খেতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পরিতাক্ত ভাঙ্গা বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ইতোমধ্যে আসামী আসিফ ইয়াবা সেবন শেষে বের হলে সে জিহাদকে কাছে ডেকে নেয়। ভবনের মধ্যে দক্ষিণ পাশের রুমে আসামীর কাছে আসলে আসামী আসিফ বিকৃত যৌনকামনা চরিতার্থ করার মানসে শিশু জিহাদকে জাপটে ধরে আর তাকে বিবস্ত্র করে। তখন জিহাদ প্রচন্ড জোরাজোরি করে আর চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করে।

ঐ সময় ধৃত আসামী আসিফ শিশু জিহাদের গলা চেপে ধরে এ সময় জিহাদ আত্মরক্ষার জন্য মর্মান্তিকভাবে জানালার ওয়ালের সাথে নিজের মাথা আছড়াতে থাকে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে শিশু জিহাদ শ্বাস রোধ হয়ে মারা যায়। শিশু জিহাদ মারা গেছে বুঝতে পেরে আতঙ্কিত হয়ে আসামী আসিফ তড়িঘড়ি করে শিশু জিহাদের প্যান্ট আর স্যান্ডেল জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয় আর শিশু জিহাদের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পাশের রুমে পড়ে থাকা পুরাতন ছেঁড়া প্লাস্টিকের পাটি এনে জিহাদকে পাটি দিয়ে মুড়িয়ে কোলে করে ঐ বিল্ডিংয়ের পাশেই একটি মরা নারিকেল গাছের তলায় ঝোপের মধ্যে রেখে দ্রুত পালিয়ে যায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। তবে ধৃত আসামী আসিফের বিরুদ্ধে চুরি এবং ডাকাতি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলেও জানা গেছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে