রোববার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১
কুশিয়ারায় এখনো বিপদসীমার কাছাকাছি পানি, জুড়ী নদে বিপদসীমার ১৭৩ সে:মি উপরে 

মৌলভীবাজারে ৯৮১ ফিসারির ১০ কোটি টাকার মাছ জলে ভেসে গেছে

মো. আব্দুল ওয়াদুদ, স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার
  ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৫:৪০
আপডেট  : ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৫:৪১
ছবি: যায়যায়দিন

দুই ধাপের বন্যায় মৌলভীবাজারের ৬টি উপজেলার ৯৮১টি ফিসারি তলিয়ে গিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার মাছ জলে ভেসেছে। রোববার বন্যাক্রান্ত এলাকায় ঘুরে ফিসারি মালিকদের সাথে কথা বললে তারা এই ক্ষতির পরিসংখ্যান দেন। তবে জেলা মৎস কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, জেলার ছ’টি উপজেলার জলমগ্ন এলাকার বিভিন্ন ফিসারি থেকে ৭১৮ মে:টন মাছ হাওর-বাওর ও নদীতে গিয়ে মিশে গেছে। আরো ৭১ লাখ টাকার পোনা মাছ গেছে নদী ও হাওরের উন্মুক্ত জলে। সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি টাকার।

স্থানীয়রা জানান, ৯৮১ টি ফিসারিতে সর্বনি¤œ গড়ে ১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি ধরা হলে মোট ক্ষতি দাঁড়ায় ৯ কোটি ৮১ লাখ টাকার। তারা বলেন, মৎস কর্মকর্তার কার্যালয় প্রতিটি ফিসারিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসেব ধরেছেন। এই হিসেব মানতে রাজি নন তারা। তারা বলেন, কোন কোন ফিসারিতে ১০ লাখ টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে লাগাতার দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলার মনূ ও ধলাই নদে পানি কমলেও কুশিয়ারা নদীতে পানি কমছে যৎসামান্য। কুশিয়ারায় রোববার বেলা ৯টা পর্যন্ত বিপদসীমার মাত্র ২ সে:মি নীচে এসেছে পানি। জুড়ী নদে এখনো বিপদসীমার ১৭৩ সে:মি উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার বড়লেখা,জুড়ী,কুলাউড়া,কমলগঞ্জ,মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর মিলে ছয় উপজেলার ৩ লাখ মানুষ বন্যাক্রান্ত। দীর্ঘস্থায়ী এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কুশিয়ারা নদী পাড়ের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ, ফতেপুর ও সদর উপজেলার মনূমুখ ও খলিলপুর ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ। কুশিয়ারা পাড়ের এই চার ইউনিয়নের প্রায় ২ শতাধিক ফিসারি রয়েছে।

দীর্ঘ বন্যায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ফিসারির পাড় তলিয়ে গিয়ে সব মাছের পোনা নদীতে হারিয়ে গেছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত থাকা বহু মানুষের কপাল পুড়েছে। রোববার নদী পাড়ে গেলে ফিসারি পাড়ে এসে অসহায়য়ের মত থাকিয়ে থাকতে দেখা যায় ফিসারি মালিকদের। মৎস হারিয়ে তারা যেন নির্বিকার হয়েছেন।

রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার একটি ফিসারির সব পোনা হারিয়ে গেছে। এতে আমার ২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের সুয়েজ আলী বলেন, গ্রামের ফজর আলী’র ৩টি ফিসারি, সদরুল ইসলাম ও নুরুজ্জামান’র আরো ২টি ফিসারি মিলে প্রায় ৭ লাখ টাকার মাছ বেড়িয়ে গেছে।

উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের শামিম আহমদ,জাহাঙ্গির আলম,আমীর আলী জানান, তাদের ফিসারিসহ কেশরপাড়া ও সুনামপুর গ্রামের মোট ১৫টি ফিসারির প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের বিলাল উদ্দিন বলেন, পাউবো সড়কের পাশে তার বড় একটি ফিসারি তলিয়ে গেছে। এই ফিসারি থেকে বছরে তিনি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেন। তিনি কান্নাবিজরিত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, মৎস আটকাতে জাল দিয়ে বেড়িকেট দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না। মাছ প্রতিনিয়ত বের হয়ে যাচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ সিরাজী বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় বন্যাক্রান্ত এ জেলার ৬টি উপজেলায় মোট ৯৮১টি ফিসারি তলিয়ে গেছে। এতে ৭১৮ মেট্রি:টন মাছ ও ৭১ লাখ টাকার পোনা মাছসহ মোট ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে