গৌরীপুরে সড়কের দু’পাশে পুকুর, আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ভাঙন

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৫:২৮

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রতিটি সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ভাঙন বিদ্যমান। সড়কের দু’পাশে বাঁধ নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। বৃষ্টির পানিতে সড়ক পরিণত হয়েছে নালায়! পুকুরের পাড় না থাকায় সড়ককে পুকুরের পাড় করে চলছে মাছ চাষ। ফলে পানির নিচে ডুবে থাকা বিটুমিনের প্রতিটি সড়কই নষ্ট হচ্ছে।  এ ক্ষেত্রে ৫ বছরে প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্থ।: ভাঙছে সড়ক, বাড়ছে জনদুর্ভোগ।

উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, প্রত্যেক মৎস্যচাষীকে বলা হয়েছে রাস্তা সংলগ্ন প্রত্যেক পুকুরে ১০ফুট দুরত্বে পুকুরের পাড় বাঁধাই করতে হবে। এ উপজেলায় মৎস্যচাষের পুকুর সংখ্যা ৮হাজার ২১৪টি। এরমধ্যে রাস্তার পাশে পুকুরের সংখ্যা ১হাজার ৬শ ৪৩টি। রাস্তার পাশের পুকুর ও হ্যাচারী মালিকদের নিয়ে একাধিক বিশেষ বৈঠকও হয়েছিলো। উপস্থিত হ্যাচারী মালিক ও মৎস্যচাষীদেরকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এসব পুকুরের পাড় বাঁধাই করার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়।  

উপজেল প্রকৌশলীর দপ্তর জানায়, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ অর্থবছরে নির্মিত সড়কগুলোর অধিকাংশ পুকুরের কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে। উপজেলার ভালুকাপুর থেকে বেখৈরহাটি বাজার পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়কের পাশে অসংখ্য পুকুর রয়েছে। যা রাস্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। সড়ক নির্মাণের চেয়ে এসব পুকুরের পাশে প্যালাসাইটিং করলে খরচ দ্বিগুণ। যা সম্ভব নয়। গৌরীপুর-কোনাপাড়া সড়কেও অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পুকুরের পাড়ের কারণে রাস্তা ধ্বসে যাচ্ছে।  শ্যামগঞ্জ-গৌরীপুর সড়কটি শুধুমাত্র পুকরের কারণে ৫বছরে ৩বার মেরামত করার পরেও রাস্তাটি সচল রাখা যাচ্ছে না। দু’পাশের পুকুরের পাড় নেই, সড়ককে পাড় হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবারও দু’পাশ উচু করে রাখা রাস্তায় পানি জমে পাকা সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।   

সরজমিনে গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ৭ কিলোমিটার। দু’পাশে ১৯টি ছোট-বড় আর মাঝারি সাইজের পুকুর। কাউরাট এলাকায় পুকুড়ে ধ্বসে গেছে রাস্তা। মইলাকান্দা এলাকায় মৎস্য হ্যাচারীর মালিকগন রাস্তার দু’পাশে নেট আর সড়কের পাড় ভরাট করে বন্ধ করে দিয়েছেন সড়কের পানি চলাচলের পথ। এ সড়কটি গত ৫বছরে ৩বার সংস্কার ও মেরামত করা হয়। তবে কমেনি জনদুর্ভোগ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, এ সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৮সালের ৭ মে। ব্যয় হয় ২ কোটি ৭৭লাখ ৯৯হাজার ৪৫৪টাকা। এরপূর্বে দু’বার মেরামত ব্যয় হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা।

এ দিকে গৌরীপুর-বেখৈরহাটি সড়কেও রয়েছে ৮টি পুকুর। গৌরীপুর-রামগোপালপুর সড়কে একটি মৎস্য হ্যাচারী ও ৭টি পুকুর। এরমধ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন রামগোপালপুর গুচ্ছ গ্রামের পুকুর প্রতিবছর লীজ দেয়া হলেও স্বাধীনতার পরে এ পুকুরের কোন পাড় সংস্কার করা হয়নি। ফলে সড়কের উন্নয়ন বারবার গিলে খাচ্ছে। সহনাটী ইউনিয়নের শাহগঞ্জ থেকে পাছার বাজার পর্যন্ত সড়কে ৪টি, ভালুকাপুর মোড়ের বাজার থেকে ভূইয়ারবাজার পর্যন্ত সড়কে ১৮টি, ভূইয়ার বাজার থেকে নজরুল ইসলাম সরকারের বাড়িগামী সড়কে ৪টি, ভুইয়ারবাজার থেকে পাছার বাজার সড়কে ১১টি, ভূইয়ার বাজার থেকে পাছার বাজার পর্যন্ত ৬টি পুকুর রয়েছে। যা সড়কের জন্য অত্যন্ত বিপদজ্জনক।

অপরদিকে বোকাইনগর ইউনিয়ন টু রামগোপালপুর ইউনিয়নের পুম্বাইল সড়ক, বিশ্বনাথপুর সড়ক, তেরশিরা সড়ক, রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গাঁওগৌরীপুর সড়কে রাস্তার পাশে রয়েছে ৩১টি পুকুর। ডৌহাখলা ইউনিয়নের গাজীপুর-উচাখিলা আঞ্চলিক মহাসড়কে ১১টি পুকুর। এরমধ্যে গাজীপুরের ৩টি পুকুর সড়কের জন্য মহাবিপদ ও যাত্রীদের জন্য মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে। রামগোপালপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কের বালুয়াপাড়া ৭টি পুকুর, সিধলা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হাসানপুর বাজার সড়কে ৭টি, তাঁতকুড়া-চান্দের সাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে ২টি, রামগোপালপুর থেকে ধুরুয়া বাজার সড়কে ৪টি, শ্যামগঞ্জ-লামাপাড়া সড়কে ৩টি, বিসকা ইউপি থেকে ডৌহাখলা-কলতাপাড়া সড়কে ৬টি, বিশোউড়াগামী-শাহগঞ্জ বাজার সড়কে ৫টি, শাহগঞ্জ-ভূইয়ার বাজার সড়কে ৯টি, সিধলা ইউনিয়নের মনাটি-তারাকান্দা সড়কে ৮টি, ডেঙ্গামোড় থেকে মনাটি বাজার পর্যন্ত ৪টি, গাছতলা থেকে মনাটি বাজার সড়কে ৭টি পুকুর, বিসকা-কলতাপাড়া সড়কে ৪টি পুকুর রাস্তার জন্য বিপদজ্জনক। 

এদিকে গৌরীপুর পৌরসভার সতিশা থেকে রামগোপালপুরে ৩টি পুকুর, সতিশা মোড় থেকে খালপাড় পর্যন্ত ৫টি পুকুর, গৌরীপুর ধানমহাল থেকে পাছারকান্দা সড়কে ১১টি পুকুর, ভালুকায় ৫টি পুকুর, কলাবাগান এলাকায় পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর, থানার সরকারী ও বেসরকারি ৬টি পুকুর, পুর্বদাপুনিয়ায় ৩টি পুকুর, সরকারপাড়ায় ১টি পুকুর, গোলকপুরে ২টি পুকুরে বারবার রাস্তা ধ্বসে যাচ্ছে। এছাড়াও মইলাকান্দা ইউনিয়নের কাউরাট থেকে কাউরাট নতুন বাজারে ২টি পুকুর যানবাহন চলাচলসহ পথচারীদের জন্য মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে।

রাস্তার বেহালদশা প্রতিরোধ কল্পে একাধিকবার নোটিশ জারী করে উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে ৩জন পুকুর মালিককে জরিমানা করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদ বলেন, রাস্তার পাশের পুকুর মালিকদের সচেতন করতে মাইকিং করে গণসচেতন করা হচ্ছে। এরপরে কোনো পুকুর মালিক ব্যবস্থা না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যাযাদি/ এসএম