চোরের মোবাইলে টাকা দিলেই পাওয়া যায় মিটার

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২:৩৩ | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:০৭

নাজমুল হাসান, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
ছবি : যায়যায়দিন

নাটোরের গুরুদাসপুরে বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হলেও প্রশাসনিকভাবে কোন কার্যক্ররী ব্যবস্থা না থাকায় ধরা ছোয়ার বাইরে চোর চক্রের সদস্যরা। তাইতো প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ না করেও, চোরের সাথে সক্ষতা তৈরি করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠালেই মিলছে চুরি হওয়া মিটার। 

মোবাইলে টাকা পাওয়ার পর চোর চক্রের সদস্যরাই বলে দেয় মিটারের স্থান। শনিবার দিনব্যাপী ১৩জন মিটার গ্রাহক একটি করে মিটারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা চোরের দেওয়া বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে চুরি হওয়া মিটার ফেরত পেয়েছেন । এদিকে উপজেলার চাপিলা, নাজিরপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য মিটার চুরির ঘটনা স্বীকার করলেও সঠিক তথ্য দিতে পারেনি বিদ্যুৎ অফিস।

জানা যায়, গত ৫ জুলাই শুক্রবার গভীর রাতে পৌর সদরের চাঁচকৈড় গাড়িষাপাড়া, বামনকোলা, গোপালের মোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় ৩৬টি মিটার চুরি হয়। চুরি যাওয়া মিটারের পাশে পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হয় চিরকুট। সেখানে লেখা থাকে ‘চুরি যাওয়া মিটার ফেরৎ পেতে ফোন করুন’। চিরকুটে থাকা নম্বরে কল করলে বিকাশে টাকা চাওয়া হয়। টাকা দিলে কোথায় মিটার পাওয়া যাবে তার স্থান বলে দেয় চোরেরা। চোর চক্রের সদস্যরা প্রকাশ্যে মোবাইল নম্বর দিয়ে গেলেও পুলিশ এবং বিদ্যুৎ অফিস তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না- এ অভিযোগ গ্রাহকদের। 


গাড়িষাপাড়া মহল্লার ধান ব্যবসায়ী বাবলুর রহমান জানান, মিটার চুরির ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। শুক্রবার সকালে চাতালে এসে দেখেন তার মিটার নেই। মিটারের নিচে পলিথিনে মুড়িয়ে থাকা একটি চিরকুট দেখতে পান। চিরকুটে লেখা ছিলো- ‘চুরি যাওয়া মিটার ফেরত পেতে ফোন করুন’। এরপর নম্বরটিতে কল দিয়ে শনিবার দুপুরে তার মিটার উদ্ধার করেন চাতালের পাশে থাকা একটি ঘরের গাদা থেকে।’

ভুক্তভোগী চাতাল ব্যবসায়ী রবিউল করিম জানান, ‘এর আগেও মিটার চুরি করে বিকাশে ৪ হাজার টাকা নিয়ে মিটার ফেরত দিয়েছিলো চোর। এবারো চোরের দেওয়া নম্বরে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে তার তথ্য মতে নদীর ধার থেকে মিটার খুঁজে পান তিনি।’ 
আলিম, মাহফুজসহ স্থানীয় গ্রাহকরা জানান, ৩৬টির মধ্যে ১৩টি বাণিজ্যিক মিটার ফেরত পেয়েছেন তারা। কিন্তু মিটার প্রতি ৫ হাজার টাকা বিকাশ করতে হয়েছে চোরকে। প্রশাসনিকভাবে কোনো প্রতিকার না পেয়ে মিটার চোর চক্রের কাছে জিম্মি তারা। বাধ্য হয়ে চোরের দেওয়া নম্বরে বিকাশে টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নিতে হয়।

এ বিষয়ে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গুরুদাসপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. মোমিনুর রহমান বিশ্বাস মিটার চুরির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘চোর চক্রের সদস্যরা মিটার চুরি করে বিকাশে টাকা নিয়ে আবার মিটার ফেরত দিচ্ছে। এ চক্রের হোতা যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গ্রাহকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ অফিসের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ উজ্জল হোসেন বলেন, মিটার চুরির ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

যাযাদি/ এস