শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

গাজীপুরে তিতাসের সরবরাহ লাইনে লিকেজ: বর্ষায় থাকে পানিপূর্ণ, খরায় ঘটছে অগ্নিকাণ্ড

ভোগান্তিতে এলাকাবাসী 
গাজীপুর প্রতিনিধি
  ০৬ জুলাই ২০২৪, ১৩:৫৪
ছবি-যায়যায়দিন

গাজীপুর মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ ভোগড়া শিল্পনগরীর মধ্যপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিনের পুরানো তিতাস গ্যাসের সরবরাহ লাইনে ছোট বড় অসংখ্য ছিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। এতে বর্ষায় ওই ছিদ্রপথে পানি ঢুকে সরবরাহ লাইন পূর্ণ হয়ে যায় এবং খরায় লিকেজ দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে বিভিন্ন সময় অগ্নিকান্ডের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে চুলা জ্বালানোর মতো পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছে না এলাকাবাসী। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় এ সমস্যা তৈরী হয়েছে।

এদিকে নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্যাস না পেয়ে লাকড়ি কিংবা সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে তিতাসের গ্রাহকদের। এতে রান্নার কাজ করতে গিয়ে এক দিকে যেমন অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে তেমনি প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী।

ভোগড়া পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আলম জানান, প্রায় ৩০/৩৫ বছর আগে ভোগড়া প্যাগাসাস জুতা কারখানার সামনে দিয়ে ভোগড়া বাজারের দিকে একটি (চার ইঞ্চি ব্যাসের) সরবরাহ লাইন চলে গেছে। কয়েক বছর ধরে ওই লাইনটির স্থানে স্থানে ছোট বড় ছিদ্র সৃষ্টি হয়। এতে বর্ষায় ওই ছিদ্রপথে পানি ঢুকে সরবরাহ লাইন পানিপূর্ণ হয়ে যায় এবং খরায় লিকেজ দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে মাঝে—মধ্যেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ফলে চুলা জ্বালানোর মতো গ্যাস পাচ্ছে না এলাকাবাসী। এর মধ্যে কিছু অংশের পাইপ তিতাস কর্তৃপক্ষ বদলে দিলেও বাকি ৮০শতাংশ এলাকায় পুরানো ছিদ্রযুক্ত সরবরাহ লাইন রয়ে গেছে এখনও। ফলে এলাকাবাসীর গ্যাস সমস্যা এখনও দুর হয়নি। এ সংকট নিরসনে ২০২২ সালে রাজধানীয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশনের প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর করা আবেদনে গাজীপুর—১ আসনের সাংসদ ও মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এবং সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান সুপারিশও করেছেন। এর আগে পড়েও একাধিকবার স্থানীয় তিতাস কার্যালয়ে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। তারপরও কোন প্রতিকার পাননি এলাকাবাসী।

ভোগড়া মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, প্রতিমাসে বিল জমা দিয়ে গ্যাস পাচ্ছি না।কতৃর্পক্ষের কাছে আবেদন করেও কোন ফল পাচ্ছি না। এতে আমাদের রান্না করতে হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস কিংবা লাকড়ি দিয়ে। এতে করে আমাদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করা ছাড়া চরম ভোগান্তির মধ্যে আছি। এমতাবস্থায় বাড়ির ভাড়াটেরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

ভোগড়া মধ্যপাড়া এলাকার ব্যবসায়ি আব্দুল মান্নান জানান, ভোগড়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদের পাশে, ভোগড়া মধ্যপাড়া বাজার, ভোগড়া মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, ওসমান আলীর মার্কেটের সামনে, বাইপাস সড়কের পশ্চিমপাশসহ কয়েক স্থানে তিতাস গ্যাসের সরবরাহ লাইনে ছোট বড় ছিদ্র রয়েছে। এসব ছিদ্রপথে অনর্গল গ্যাস বের হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ভোগড়া বাজারের পাশে, স্কুলের সামনে ও ওসমান আলীর মার্কেটও এসব ছিদ্র দিয়ে নির্গত গ্যাসে সৃষ্ট আগুনে মার্কেট, গাছপালাও পুড়ে গেছে। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস ও এবং এলাকাবাসীর চেষ্টায় ওইসব আগুন নেভানো হয়েছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও এখনও তার প্রতিকার পায়নি এলাকাবাসী। ফলে যেকোন সময় আরো বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

ভোগড়া এলাকার বাসিন্দা শাহানা সুলতানা বলেন, গেল ঈদে এলাকার কলকারখানা বন্ধ থাকাকালে গ্যাস লাইনে গ্যাসের কিছু চাপ ছিল। এসময় লাইনে জমে থাকা (বৃষ্টির) পানিসহ কিছু পরিমানে গ্যাস চুলার ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসতো। কিংবা বিকল্প পথে গ্যাস লাইনের পানি বের করে রাতের কোন কোন সময় রান্নার কাজ করা যেতো। কিন্তু ঈদের পর থেকে চুলায় কোন গ্যাস আসছে না।

তিতাসের জোনাল বিপনন অফিস, জয়দেবপুরের ব্যবস্থাপক মামুনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয় আমাদের নলেজে আছে। কিছু অংশের কাজও হয়েছে বাকী অংশের কাজও করা হবে। তবে এ মুহুর্তে মূল সমস্যা হচ্ছে সরবরাহে ঘাটতি, হয়তো এ কারণেই সমস্যা হচ্ছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে