সারিয়াকান্দির কাজলায় রাস্তা ভেঙে গ্রাম প্লাবিত

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:১২

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
ছবি-যায়যায়দিন

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদীতে শনিবার দুপুরে বিপদ সীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। একটি বাঁধ ঝুঁকিতে ও রাস্তা ভেঙে একটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। 

এছাড়াও আরও কয়েকটি জায়গা যেকোনও মুহুর্তে ভেঙ্গে যেতে পারে ভেঙে গেলে আরও ৬ টি গ্রামে পানি ঢুকবে। এতে স্হানীয়দের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, তীব্র স্রােত ও ব্যাপক ভাঙনে কাজলা ইউনিয়নের চর ঘাঘুয়া ও টেংরাকুরা এলাকা। চর ঘাঘুয়ায় নদী রক্ষা বাঁধটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । টেংরাকুরা একটি রাস্তা ধ্বসে গিয়ে একটি গ্রাম প্লাবিতো হয়েছে। চর ঘাঘুয়াতে নদী রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। নদী থেকে যে ঢেউ তৈরি হবে তা যেনও বাধে সরাসরি আঘাত করতে না পারে এ কারণে বাঁধের দক্ষিণে ২০১০ সালে তৈরিকৃত আরেকটি বাঁধের সামনের মাটি কেটে গোল চত্বার করা হয়। যেখানে বাঁধটি সামনের মাটি কাটার পর তা বাঁধার আগেই বন্যার পানি হু হু করে ঢুকে যায়। বাঁধটির সামনের দিকে লাগানো ১৫০ থেকে ২০০ গাছ সহ জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত একটু করে বাঁধের মাটি বালু নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। যে কোন সময় বাধটি সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। 

চর ঘাঘুয়ার বাসিন্দা তালেব আলী মোল্লা বলেন, এগুলো তো ভাঙ্গার কথা না। নদীতে গোল চত্বর করছে ওদিকের বাঁধের কাজ করতে আসা ঠিকাদারেরা তারপর নদীতে পানি বাড়তে শুরু করলেই ভাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। চর ঘাঘুয়ার এ মুল বাঁধ থেকে ২ মিটার দুরে ছিলো নদী এখানে আমার প্রায় ৩শ’ গাছ লাগানো আছিলো দেড় বিঘার মতো জমি ছিলো । এই গোল চত্বর করার সময় সে জমি নিয়ে নেয় সেটার বিনিময়ে আমি কোন ও টাকা পাইনি। তারপরেও এত গুলো গাছে নদীতে চলে গেছে এখন তো মনে হচ্ছে বাঁধটাই থাকবে না। এ বাঁধ যে কোনও সময় ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে যেতে পারে। এখন ভয়ে ভয়ে  রাত দিন কাটাচ্ছি কখন যে কি হয়। 

এদিকে পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের টেংরাকুড়া চরের একটি রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাস্তাটির ২০ ফিট অংশের মাটি ধ্বসে গিয়ে এ গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি এবং কৃষিজমির ফসল প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া রাস্তাটির আরও একটি অংশ ধ্বসে গিয়ে সেখানে বিশালাকার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেখানেও ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এখানে রাস্তাটি ভেঙে গেলে টেংরাকুড়া, উত্তর টেংরাকুড়া, দক্ষিণ টেংরাকুড়া, জামথল, দক্ষিণ জামথল এবং বেড়াপাঁচবাড়িয়া গ্রাম প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসব গ্রামের ২০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তাটি ভেঙে গেলে এসব গ্রামে অবস্থিত ৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১ টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩ টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার ৭৫ টি গ্রামের ৪৯ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়েছে।

উপজেলার ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে প্লাবিত হয়েছে এবং ৮ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে উপজেলার ৩২ হাজার ছাগল এবং ৪৩ হাজার গরুসহ বেশকিছু গৃহপালিত পশু। উপজেলার ১৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হয়েছে।

কাজলা টেংরাকুড়া চরের শাহজাহান আলী বলেন, টেংরাকুড়া গ্রামের রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় পুরো ইউনিয়নের এলাকাবাসীর সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষজন পানিবন্দি হয়েছে। রাস্তাটির অপর পাশের ধ্বসে যাওয়া অংশ ভাঙন হুমকিতে রয়েছে এবং সেখানে ৬ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চর ঘাঘুয়ার বাঁধটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে এই পুরো এলাকায় বন্যার পানি সরাসরি ঢুকবে। পুরো এলাকা পানি নিচে তলিয়ে যাবে। এই বাধটি রক্ষা করা একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। 

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ন কবির বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা বাঁধটি পরিদর্শন করেছে। বাঁধের কি রকম ক্ষয় ক্ষতি  হয়েছে তা রিপোর্ট আকারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওখান থেকে নির্দেশনা আসলে আমরা পরবর্তী কাজ শুরু করবো। 

যাযাদি/ এসএম