মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১

আযমপুরে শোকের মাতম : একই কবরস্থানে চিরনিদ্রায় চার বন্ধু

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
  ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৩:০০
আপডেট  : ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৩:০২
ছবি : যায়যায়দিন

সারিবদ্ধ খাটিয়ার (খাট) দুধারে স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ। কফিনে মোড়ানো কলিজার টুকরাগুলোকে কাধে নিয়ে নয়নের জলে বুকভাসা কান্না থামছেই না।

গোরস্থান যতটা সন্নিকটে আসছে খাটিয়া বহনকারী স্বজনদের পা যেন ততটাই ভারী হয়ে আসছে। চারবন্ধুকে একত্রে শেষ বিদায় দিতে হবে হয়ত এভাবে কেউই ভাবেনি কোন দিন। তাইতো সন্তানদের বিদায় বেলাতে স্বজনদের বুক ফাটা আহাজারিতে ভারি হয়ে আছে আযমপুরের বাতাশ।

শুক্রবার ৫ই জুলাই পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আযমপুর গ্রামে (গতকাল ৪ঠা জুলাই) দাশুড়িয়া-পাবনা মহাসড়কে প্রাইভেটকার দূর্ঘটনায় নিহত ৪ পরিবারসহ পুরো এলাকা জুড়ে শোকের মাতমে নিমজ্জিত ছিল সবাই।

পরে বাদ জুম্মা শেষে এক বন্ধুর জানাজার নামায সলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারী সরদার পাড়া গোরস্থান ময়দানে অনুষ্ঠিত হলেও বাকি ৪ বন্ধুরই প্রথম নামাযে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় দাশুড়িয়ার আযমপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ মাঠে।

প্রথম নামাযে জানাজার পর তাদের মৃতদেহগুলোকে দাফনের উদ্দেশ্যে ডিগ্রীপাড়া কেন্দ্রীয় গোরস্থান মাঠে নিয়ে গেলে সেখানে দুপুর পৌঁনে ৩ টায় দ্বিতীয় নামাযে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

শেষে এক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

এর আগে নিহত শিশির এর পিতা উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের বড়ইচারা এলাকারা মো: সেলিম বলেন, দূর্ঘটনায় নিহত সবাই খুব ভালো বন্ধু ছিলো। এক সাথেই থাকত। কিন্তু এভাবে একসাথেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে ভাবি নি।

শিশিরের মামা মো রাজু বলেন, নিহতের সবাই একসাথেই ঈশ্বরদী টেক্সাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে লেখাপড়া করার সুবাদে প্রায় সময় এক সাথেই থাকত। ভাগ্যের কি লিখন দূর্ঘটনার সময়ও তারা এক সাথেই ছিল। মৃত্যু এবং বিদায়টা যে একসাথেই হবে সেটা বিশ্বাস করতে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে।

মো: বাবু বলেন, একসাথে এতগুলো তাজা প্রাণ হারানোর বেদনা আমরা সইব কেমন করে। তারা ৪ কন্ধু যেন চারটি ফুল ছিল। আমরা সেই ফুল গুলোকে হারালাম। কষ্টে বুকের পাজর ভেঙ্গে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গতকাল ৪ঠা জুলাই ঈশ্বরদীতে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে একটি প্রাইভেট কার মহাসড়কের পাশে থাকা গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই ৩ জনসহ মোট ৫ যাত্রী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে আরও ২ জন।

বৃহস্পতিবার ৪ঠা জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার ঈশ্বরদী পাবনা মহাসড়কের (পাবনা সুগারমিলের সামনে) কালিকাপুর এলাকায় মর্মান্তিক এ সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আযমপুর গ্রামের মাসুম আলীর ছেলে সিফাত ইসলাম (১৬) শিশির মাহমুদ (১৫), শুমনের ছেলে নাঈম ইসলাম (১৬), বিজয় হোসেন (১৮), সলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারী এলাকার ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে শাওন (১৪)।

জানতে চাইলে পাকশী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, গতকাল রাতেই মৃতদেহগুলোকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে