হাকালুকি তীরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ত্রাণের জন্য হাহাকার
প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২৪, ১৬:৩৪
টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। গত ১৬ দিন থেকে সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা প্রশাসনিক অফিসসহ আশেপাশের আবাসিক এলাকাগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও সরকারি দাপ্তরিক কার্যক্রমে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। দুর্ভোগে পড়েছেন তিন উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানে মাধমিক স্থরের ষান্মাসিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ৩০ জুন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় হাকালুকি হাওর তীরে বন্যার পানি কমতে থাকে। বন্যা পরিস্থিরি উন্নতি হওয়ায় মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু ২ জুলাই থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত শুরু হয় সিলেটজুড়ে। এরফলে হাকালুকি হাওরসহ বিভিন্ন নদ নদীর পানি বেড়ে পূর্বাবস্থায় ফিরেছে বন্যা পরিস্থিতি।
এতে করে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী উপজেলা গুলোতে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পানিবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রান্নাকরা খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর স্যানিটেশন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লোকজন। দিন দিন বাড়ছে পানিবাহিত রোগবালাই। বিশেষ করে গবাদিপশুর খাবার ও বাসস্থান নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসিরা।
হাওর তীরের ভূকশিমইল ইউনিয়নের ভুকশিমইল গ্রামের আলী আহমদ জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মানুষ খাদ্য সংকটের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির সমস্যায় ভুগছেন। এতে পানিবাহিত রোগ জীবাণুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে হাওর এলাকায়।
কুলাউড়া পৌর এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা সজিব আহমদ জানান, গত সপ্তাহে বন্যার পানি কিছুটা কমায় তিনি বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফের টানা বৃষ্টিতে পানি আগের মতো বেড়েছে। তাই আবারও আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছেন।
জয়চন্ডী ইউনিয়নের গিয়াসনগর মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন দবর মিয়া, সেন্টু মিয়া, মনাই মিয়াসহ ১৬টি পরিবারের লোকজন। পানি কমায় গত ৩০ জুন তারা সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। কিন্তু ২ জুলাই থেকে টানা বৃষ্টির ফলে আবারও তাদের ঘরবাড়িতে পানি। পুনরায় গিয়াসনগর মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ারও অনুমতি পাচ্ছেন না তারা। তাই বাধ্য হয়ে পানির মধ্যেই ঘরে বসবাস করছেন।
হাওরতীরের ভূকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, বন্যার পানি অনেকটা কমে গিয়েছিলো। কিন্তু দু’দিনের ব্যাবধানে ফের অবনতি হয়েছে। হাকালুকির ভয়াবহ ঢেউ তীরবর্তী এলাকার মানুষের কাঁচা ও আধপাকা বাড়িঘরসহ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি করছে। হাওর পাড়ের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত তিনহাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। খাদ্য সহায়তার জন্য প্রতিদিনই লোকজন যোগাযোগ করছেন। গো-খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে তাঁর এলাকায়।
কুলাউড়াউ পজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আলী জানান, ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অতিরিক্ত ২ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা করার ব্যবস্থা আছে। নতুন করে বরাদ্দের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত বানভাসী মানুষের মাঝে সেগুলো বিতরণ করা হবে।
যাযাদি/ এসএম