সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

মাদকের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, বন্ধুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা!

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
  ০৫ জুলাই ২০২৪, ১৪:১৭
ছবি-যায়যায়দিন

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ট্রাংকের ভিতরে তোশক মোড়ানো অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ; চাঞ্চল্যকর এবং ক্লুলেস হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মো. আল আমিন (২৫) কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাতে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন পুলপাড় বটতলা এলাকায় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুরে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১০ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ও সহকারী পুলিশ সুপার এম.জে. সোহেল। গ্রেফতার আল আমিন পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার কর্পুরকাঠি গ্রামের আব্দুল মান্নান শিকদারের ছেলে। গ্রেফতার এড়াতে আল আমিন বেশিকিছুদিন ধরে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ছদ্মনামে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানা যায়।

প্রেসবিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ জুন, সকালে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কোন্ডা ইউনিয়নের জাজিরা বোট সংলগ্ন ব্রিজের নিচে একটি বড় ট্রাংক স্থানীয় লোকজন দেখতে পেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে থানায় অবহিত করে। পরে থানাপুলিশ সেখানে গিয়ে ট্রাংকটি উদ্ধার করে খুললে তোশক দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ পায়। তখন ধারণা করা হয় ২২ জুন, রাত ৮ থেকে ১২টার মধ্যে যেকোনো সময় অজ্ঞাত সেই ব্যক্তিকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে তাকে তোশক দিয়ে মুড়িয়ে ট্রাংকভর্তি করে নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে গেছেন।

মরদেহটি উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় র‍্যাব। ইতোমধ্যে পুলিশ ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং নিশ্চিত হয় যে মরদেহটি পটুয়াখালী জেলার বাউফলের মৃত দেবেন্দ্র হাওলাদারের পুত্র দীপঙ্কর হাওলাদার ওরফে দিপু হাওলাদার ওরফে মো. সুমনের (৩৪)। এ ঘটনায় মা মিনতি হাওলাদার বাদী হয়ে আসামী অজ্ঞাত উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলা হলে সন্দেহভাজন আসামি ও হত্যাকাণ্ডের কারণ সনাক্তকরণে কাজ শুরু করা হয়। এরপর সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় র‍্যাব। আরও জানা যায়, ভিকটিম দীপঙ্কর হাওলাদার ওরফে সুমন (৩৪), আরিফ, বাবু এবং আল আমিন তারা সবাই পেশায় ট্রাক ড্রাইভার। এ পেশার আড়ালে তারা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা প্রায় ৭-৮ বছর যাবৎ দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা হতে অবৈধ পন্থায় চোরাচালানের মাধ্যমে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সংগ্রহ পটুয়াখালী, ঢাকার কেরানীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতো। হঠাৎ মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট এবং টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সুমনের সাথে আল আমিন, আরিফ ও বাবু বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ বিরোধের জেরে আল আমিন, আরিফ ও বাবু সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আল আমিন, আরিফ ও বাবু সুমনকে পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে।

অতঃপর ঢাকার কেরানীগঞ্জে গ্রেফতারকৃত আল আমিনের ভাড়া বাসায় ২২ জুন, রাতে আল-আমিন, আরিফ ও বাবু মিলে ভিকটিম সুমনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর ভিকটিম সুমনের লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যে লাশ তোশক দিয়ে মুড়িয়ে একটি ট্রাংকে ভরে একটি ট্রাকে করে নিয়ে গভীররাতে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন জাজিরা বোটঘাট ব্রীজ সংলগ্ন একটি রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায় এবং উক্ত ঘটনার পর সকল আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়।

এবিষযে র‌্যাব-১০ এ্যাডিশনাল ডিআইজি অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, দীপঙ্কর হাওলাদার ওরফে মো. সুমন (৩৪), আনুমানিক পাঁচ বছর পূর্বে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে সুমন নাম দিয়ে সুবর্ণা ওরফে পারভিন’কে ইসলামী শরীয়ত মতে বিয়ে করে। বিয়ের পর হতে বাদীর ছেলে ও তার স্ত্রী আলাদাভাবে বসবাস শুরু করে এবং বাদীর পরিবারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায়। বাদী তার ছেলের স্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পারে যে, আরিফ ও বাবু নামে দুই ব্যক্তির সাথে ভিকটিমের পরিচয় হয় এবং তাদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতো। গত ১৮ জুন, সুমন তার দুই বন্ধু আরিফ ও বাবুর সাথে ঢাকায় আসেন। এবং ১৯ জুন, ভিকটিম তার স্ত্রীর নম্বরে মোবাইলে ফোন করে ঢাকায় পৌঁছানোর সংবাদ দেয়।

পরবর্তীতে ভিকটিম সুমনের স্ত্রী তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোন যোগাযোগ করতে পারে নাই। পরবর্তীতে গত ২৩ জুন, সুমনের লাশ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার আল আমিনকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি মামুন-অর রশীদ বলেন, দীপঙ্কর হাওলাদার ওরফে সুমন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আল আমিনকে র‌্যাব হস্তান্তর করার পর শুক্রবার বিকেলে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে