সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান, ইমামের চাকরি নেই , ৪ পরিবার সমাজচ্যুত

চাঁদপুর প্রতিনিধি
  ০৫ জুলাই ২০২৪, ১০:২৪
-ফাইল ছবি

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে এলাকাবাসী। এমন সিদ্ধান্তে অসহায় জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

ঘটনার সুত্রে আরো জানা যায় , ঈদের পরে শুক্রবার মসজিদের ইমাম সুদ ও ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান করলে মসজিদ কমিটির লোকজন ক্ষেপে যায় এবং ইমামকে চাকুরি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে।

ছেংগারচর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড জোড়খালী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুদ্দিন। তিনি স্থানীয় মসজিদের ইমামকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২২ জুন তার ফেসবুকে একটি মতামত পোস্ট করেন। ওই পোস্টে কমেন্টস করে একই এলাকার আরো তিন পরিবারের সদস্য। ফেসবুকে মতামত পোস্ট করায় গেলো ২৯ জুন রাতে মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মানহানি হয়েছে দাবি করে চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেন তারা।

তবে তারা মসজিদ কমিটির কাছে ক্ষমা চাইলে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে। সিদ্ধান্তের পরপরই শিপন আহম্মেদ নামের স্থানীয় বাসিন্দার ফেসবুক আইডি থেকে সাইফুদ্দিনের ছবি সম্বলিত ‘সমাজ থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে’ বলে প্রচার করা হয়। তারপর থেকে সমাজের লোকজন এই চার পরিবারের সাথে কথা বলা ও চলাফেরা বন্ধ করে দেয়। এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও মানহানীর বিচার চান পরিবারগুলো।

সাইফুদ্দিন বলেন, পৌর কাউন্সিলর সবুজ বেপারী গেলো নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। তার যোগসাজশে আমাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেন তারা। আমি ফেসবুকে কারো নাম নিয়ে পোস্ট করিনি। পোস্টে ছিল- 'মসজিদের ইমাম পাল্টানো যায়, ঘুষখোর আর সুদখোর পাল্টানো যায় না।' আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে স্থানীয় কাউন্সিলর সবুজ বেপারী তার আপন খালাতো ভাই কে দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে।

জোড়খালী গ্রামের বেপারী বাড়ীর সাইফুদ্দিন, সরকার বাড়ীর গোলাম নবী সরকার, জোবায়ের ও মানিক সরকারের চার পরিবারে ৩৯ সদস্যের বসবাস। সাইফুদ্দিনের পোস্টে মসজিদ কমিটির সম্মানহানি হয়েছে বলে এই সিদ্ধান্ত। এমনটা দাবী করছেন মসজিদ কমিটির সদস্য রুহুল আমিন মিয়াজীর। তিনি বলেন, ওই বৈঠকে গ্রামের ৮০ থেকে ১০০ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিল। তখন চার পরিবারকে সমাজ থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর সবুজ বেপারী ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুই পরিবার ক্ষমা চেয়েছে। বাকী চার পরিবার ক্ষমা চাইলে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে আসবে গ্রামবাসী।

চাঁদপুর সনাকের সদস্য ও সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, একজনকে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা সমাজ কাউকে বা সরকার কাউকে দেয় নাই। এটাকে যত দ্রুত নিবারণ করা যায়, ততই মঙ্গল। সমাজচ্যুতের এই বিষয়টাকে প্রশাসন শক্তভাবে মোকাবেলা করা উচিত।

মতলব উত্তর উপজেলায় এক দম্পতিকে সমাজচ্যুত করার ঘটনার রেশ না কাটতেই এমন আরো একটি ঘটনা জনমনে উদ্বিগ্ন সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকেরা। তবে এই বিষয়ে মতলব উত্তর থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ইমামকে বিদায় দেয়ার বিষয়টি জেনেছি। পরবর্তী ঘটনা জানা নাই। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে