শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১

বাকেরগঞ্জে বাল্যবিয়ের কারণে স্কুল ছাড়তে হলো শিক্ষার্থীকে

বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি
  ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৮:২৫
ছবি: যায়যায়দিন

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে লড়াই করছে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল। এখন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাহসী স্কুলছাত্রীদের নিজের বাল্যবিয়ে নিজে রোধ করার উদাহরণ অহরহ।

বাল্যবিয়ে হচ্ছে- এমন খবর পেলেই স্কুলের শিক্ষক ,শিক্ষিকা, ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে খবর যাচ্ছে, সেই বিয়ে বন্ধও হচ্ছে।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুড়িয়া ইউনিয়নের কান্তা হাসান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে বাল্য বিয়ের অপরাধে স্কুল ছাড়তে হয়েছে ।

ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার গাড়ুরিয়া ইউনিয়নের কান্তা হাসান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

অভিযোগসূত্র জানা যায় কান্তা-হাসান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া স্কুল ছাত্রীর তিন চার মাস আগে পারিবারিক কারনে বিয়ে হয়ে যায়, কিন্তু তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে হওয়ায় সে ঐ সংসার থেকে কয়েকদিন আগে তার বাবার বাড়িতে চলে এসে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়।

পরবর্তীতে সে পুনরায় স্কুলে যাওয়া শুরু করে, তার স্কুলের ক্লাস টিচার ইকবাল হোসেন তাকে স্কুলে আসতে নিষেধ করে এবং বিভিন্ন সময়ে তার সহপাঠীদের সামনে বসে অপমান করে। ওই শিক্ষার্থী ঘৃণা লজ্জায় স্কুলে আসেনা তার প্রমাণও পাওয়া যায় শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতায়।

সহকারী শিক্ষক ও সপ্তম শ্রেণীর ক্লাস টিচার ইকবাল হোসেন জানান,আমরাও বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে কাজ করি আমাদের স্কুলের অন্য ছাত্রীরা যাতে নষ্ট না হয়, সে কারনে ও‌‌ই ছাত্রীকে বলেছি,তুমি আসলে আমাদের স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে, স্কুলের পরিবেশ রক্ষার করার জন্য যদি তাকে স্কুলে আসতে নিষেধ করি , সেটা আমি মনে করি না আমার বিরাট বড়ো কোনো অপরাধ হ‌ইছে।

কান্তা-হাসান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমাদের শিক্ষার্থীক বাল্য বিবাহ দেয়া হচ্ছে শুনলে মেম্বার অথবা থানায় জানাই তার বিবাহটা যাতে বন্ধ হয়ে যায় ।

একটা বাচ্চাকে বিবাহ দিলে তার অকালে ঝরে যেতে না হয় ।আমাদের যদি অল্প বয়সে কোন শিক্ষার্থীর বিবাহের সেক্ষেত্রে সতর্ক করি ক্লাস করবা না আবার তোমার পরিবার বিবাহ দিলো কেনো।তবে এরকম কোন নিয়ম নাই যে ওই শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে পারব না।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার জানান,আমার মেয়েটি এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মেয়েটিকে নিয়ে আমি খুব চিন্তার মধ্যে আছি।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার দাস জানান,শিক্ষার্থীকে স্কুলে আসতে বিরত রাখা হয়েছে ,এটা রাখা যাবেনা। শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে। এরকম কোন শিক্ষ করে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান বলেন কান্তা হাসান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এক শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে আমরা শুনতে পেরেছি। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কমিটি আছে শিক্ষকরা কাউন্সিলিং করে থাকে।

বাল্যবিবাহর তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই বিবাহ হয়েছে জানতে পেরেছি ,মেয়েটি যখন স্কুলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়, ওই স্কুলের একজন শিক্ষক ওই মেয়েটিকে স্কুলে আসতে নিরুৎসাহিত করেছে, এ বিষয়ে আমরা প্রধান শিক্ষকের সাথে, ও উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি, বিষয়টি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে, এটা আসলে কোন ভাবে কাইম্য নয়।

কোন মেয়ে যদি বাল্যবিবাহর শিকার হয়, সে ক্ষেত্রে ইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বা অন্যান্য শিক্ষক যারা আছে তারা শিক্ষার্থীর বাবা মাকে সতর্ক করবে ও মেয়েটি যেহেতু ভিকটিম, তাকে স্কুলে আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত্য না করে, উৎসাহিত করবে, কিন্তু এখানে উল্টো ঘটনা ঘটেছে।বিষয়টি খুবই দুঃখ জনক এ বিষয়ে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করবো।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে