বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

বাবার ফোনে মেয়ের বিবস্ত্র ছবি পাঠিয়ে ব্লাকমেইল, লজ্জায় আত্মহত্যা

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ০১ জুলাই ২০২৪, ১৩:০২
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পরকীয়া প্রেমিকের ব্লাকমেইলের শিকার হয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে মুর্শেদা খানম মুন্নি (২৭) নামে ২ সন্তানের জননীর আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রোববার (৩০ জুন) বিকালে নিহতের পিতা মো. ইউনুছ বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ ও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সাতকানিয়া থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলাটি দায়ের করেন।

আসামিরা হলেন- উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোহছেনের পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা মৃত নজির আহমেদ পুত্র আবদুর রহিম (৩৫), মৃত গোলাম কাদেরের পুত্র মো. ইলাফ (২০) ও আলী আহম্মদের পুত্র আব্দুর করিম (৩৫)। উভয়ই একই এলাকার বাসিন্দা। এছাড়াও মামলায় ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের ১০ বছর পূর্বে পার্শ্ববর্তী এলাকার ১ নং আসামি রহিমের সাথে নিহত মোর্শেদা খানম মুন্নির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে নিহতের পরিবার তাকে অন্যত্র বিবাহ দেন। প্রেমের সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে নিহত মুন্নির কিছু স্পর্শকাতর ভিডিও ও ছবি মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখে প্রেমিক রহিম। বিয়ের পরে এসব স্পর্শকাতর ভিডিও ও ছবি দিয়ে বিভিন্ন সময় ব্ল্যাকমেইল করে সম্পর্ক চলমান ও টাকা আদায় করে রহিম।

এ ছাড়াও মুন্নির স্বামী নুরুন্নবীকে স্পর্শকাতর ভিডিও এবং ছবিগুলো প্রেরণ করে তার সংসার ভাঙ্গার হুমকি প্রদর্শন করতে থাকেন। পরে প্রেমিক রহিম ২০২১ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে ২ নং আসামি মো. ইলাফের সহযোগিতায় ১ নং আসামি মুন্নির মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে আবারো ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করেন। এক পর্যায়ে ইমুতে ভিডিও কলের মাধ্যমে নিহত মুন্নিতে বিবস্ত্র হতে বাধ্য করেন রহিম। ২০২১ সালে নিহত মুন্নি বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসলে বাদীর চাচাতো ভাই ৩ নং আসামি আব্দুর রহিম তার মোবাইল থেকে কৌশলে মেমোরি কার্ডটি চুরি স্বামীর সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের কিছু ছবি প্রবাসে থাকা ১ নং আসামি রহিমকে প্রেরণ করেন। এরপর থেকে ব্ল্যাকমেইলের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। প্রতিনিয়ত ব্ল্যাকমেইলে অতিষ্ঠ হয়ে নিহত মুন্নি যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে (১৬ জুন) তার পিতার ব্যবহৃত ইমুতে বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে হুমকি দেন রহিম। পরে (২৮ ও ২৯ জুন) নিহত মুন্নি তার মেয়ের গনিত খাতা ও ডায়েরিতে পিতার সম্মুখে মুখ দেখাতে পারবে না উল্লেখ করে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

নিহতের পিতা বাদী মো. ইউনুছ বলেন, ১ নং আসামি রহিমের সাথে আমার মেয়ের সম্পর্কের বিষয়টি বুঝতে পেরে ১০ বছর পূর্বে তাকে অন্যত্র বিবাহ দিই। তখন থেকে সে আমার মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছে। আমার মেয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে অনিহা প্রকাশ করলে সে (রহিম) প্রবাস থেকে আমার ব্যবহৃত ইমুতে বিবস্ত্র ভিডিও ও ছবি পাঠায়।

এছাড়াও বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা এবং এসব ছবি ও ভিডিও সবাইকে সেন্ড করে ভাইরাল করে দিবে মর্মে হুমকির প্রদান করে। এ ঘটনায় আমার মেয়ে খাতায় এবং ডায়েরিতে পুরো ঘটনা উল্লেখসহ আমার সম্মুখে তার মুখ দেখাতে পারবেনা লিখে লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে। আমি এ ঘটনায় প্রশাসনের নিকট সঠিক বিচার কামনা করছি।

সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রিটন সরকার বলেন, রোববার (৩০ জুন) বিকালে বাদীর এজহার প্রাপ্ত হয়ে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, শনিবার (২৯ জুন) পরকীয়া প্রেমিকের ব্লাকমেইলের শিকার হয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে মুর্শেদা খানম মুন্নি (২৭) নামের এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠে। উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গুরগুরি এলাকার পশ্চিম পাড়ার মৃত সোনা মিয়ার বাড়িতে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ মুর্শেদা খানম মুন্নি একই এলাকার মৃত সোনা মিয়ার ছেলে নুরুন্নবীর স্ত্রী। তার একটি পুত্র সন্তান ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে