মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

দফায় দফায় মেয়াদ-অর্থ ব্যয় বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্কের

এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জ
  ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১৪
ছবি-যায়যায়দিন

সিরাজগঞ্জে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থ বরাদ্দ ব্যয় বাড়িয়েও গত ১৩ বছরেও শেষ হয়নি বিসিক শিল্প পার্ক প্রকল্পের কাজ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ মাসেই শেষ হবে এ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের নথিতে সেটি সমাপ্তও করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। কাগজ কলমে কাজ শেষ হলেও বাস্তবে এখন চলছে। এদিকে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জাফর বায়েজীদ বলছেন এ মাসেই সব কাজ শেষ হবে।

জানা যায়, চার বছরের এ প্রকল্পটির দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও ১৩ বছরেও শেষ হয়নি। পরে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সপ্তম দফায় রুগ্ন প্রকল্প হিসেবে এক বছর বাড়িয়ে জুন পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ রুগ্ন প্রকল্পটি নির্মাণের কয়েক দফায় ব্যয় বেড়েছে ৩৪০ কোটি ২১ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণে দেরি, ঠিকাদারের গাফিলতি, কোভিড-১৯ মহামারিসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হয়েছে বলে অজুহাত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে সরেজমিন গেলে দেখা যায়,

যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে ৪০০ একর জায়গায় গড়ে উঠা শিল্প পার্ক প্রকল্পের নিজস্ব ভবনের কাজ মোটামুটি শেষ হলেও বাউন্ডারি, রাস্তা, ড্রেন, লেক ও স্ল্যাবের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। অপরদিকে পার্কের ভিতরে বিদ্যুতের কিছু খুঁটি বসানো হলেও গ্যাস ও পানির সংযোগের কোন কাজই হয়নি। বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে কংক্রিটের ব্লক। প্রকল্পের পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাকা রাস্তার সাব-বেজ ও ড্রেনের কাজে ভিটি বালু ও নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। একই সাথে নিম্নমানের পাথর ও বিটুমিন দিয়ে করা হচ্ছে কাপেটিং। সিডিউলে কাপেটিং ৭৫ মিলি ধরা থাকলেও বাস্তবে রয়েছে ৬০ মিলি। এতে দেশের বৃহত্তর এ শিল্প পার্কের কাজের স্থায়িত্ব নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।

প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর সময় এক বছর বাড়ানো হয়। এতেও শেষ হয়নি। এ পর্যায়ে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও এক বছর। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীর সময় বাড়ানো হয় আরও এক বছর। তৃতীয় সংশোধনীর সময়ও মেয়াদ বাড়ে আরও এক বছর। পরবর্তী ফের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দুই দফায় আলাদাভাবে মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও দুই বছর। এতেও শেষ না হওয়ায় সপ্তমবারের মতো ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে এ মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয় জুনের মধ্যেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে। না হলে যেমন আছে তেমন অবস্থায় প্রকল্পটির সমাপ্ত ঘোষণা করা হবে।

এ প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এরপর সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর সময় ১১১ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৪৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এসে ফের ১৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয় ৬২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। পরে তৃতীয় সংশোধনীর সময় ৯১ কোটি ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয়েছে ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষে ৮২৯টি শিল্প প্লট তৈরি করে ৫৭০টি শিল্প স্থাপন করা হবে। সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্ক প্রকল্পের টেকনিক্যাল অফিসার মহিদুল হাসান বলেন, সাতটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজ করছে। তবে কিছু কাজ বাদ থাকলেও এ মাসেই শেষ দেখানো হবে।

রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজের ঢাকার বিডিইএল ও মেসার্স আরাফাত কনস্ট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা শুধু ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণের কাজ করছি। এখন পর্যন্ত এ দুটি কাজের ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ করতে আরও সময় লাগবে।

শিল্প পার্কের মূল ফটকের সামনে গড়ে উঠা স্থানীয় এক মুদি ব্যবসায়ী সোহাগ মন্ডল বলেন, পার্কের কাজের তোড়জোড় দেখিয়ে বলেন, এ মাসেই নাকি শিল্প পার্কের কাজের মেয়াদ শেষ। দেখেন শেষ সময়ে কি জোড়াতালি দিচ্ছে। তার ধারণা এ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে করলেও আগামী দুই এক মাসে শেষ হবেনা।

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক ও বিসিক শিল্প পার্কের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জাফর বায়েজীদ বলেন, প্রকল্পের কতভাগ কাজ শেষ হয়েছে সেটি বলতে পারছি না। তবে যেভাবেই হোক এ মাসেই আমাদের কাজ শেষ দেখাতে হবে। আর আগামী মাসের ২০ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে প্রকল্পটির প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) সম্প্রসারণ বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপক অখিল রঞ্জন তরফদার বলেন, প্রকল্পের কাজ এ মাসেই শেষ হওয়ার কথা। এটি এখনও উন্নয়ন খাতেই রয়েছে। আর প্লট বরাদ্দ শুরু হলে রাজস্ব খাতে চলে আসবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, সিরাজগঞ্জ শিল্প পার্ক প্রকল্পের মেয়াদ এ জুনেই শেষ। প্রকল্পটি এবার শেষ করতে না পারলে যেমন আছে ঠিক সেই অবস্থাতেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হবে। তবে কাজ শেষ না করে বিল নেয়ার কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি ।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে