শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১

সিগারেট নিয়ে টোকাইদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে ধরা পড়ে ৪ কয়েদি

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া প্রতিনিধি/ জাহাঙ্গীর আলম, বিশেষ প্রতিনিধি
  ২৬ জুন ২০২৪, ২৩:৩৩
আপডেট  : ২৭ জুন ২০২৪, ১০:১৭
ছবি : যায়যায়দিন

বগুড়া জেলের ভেতরের কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে এবং রশি দ্বারা প্রাচীর টপকিয়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৪ জন আসামী পলায়ন করে। ২৫ তারিখ মঙ্গলবার দিনগত রাতের কোন এক সময় এই ঘটনা ঘটে। তবে বগুড়া সদর ফারির ডিউটিরত পুলিশরা শহরের চেলোপাড়া চাষিবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভোররাতে তাদের গ্রেফতার করে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদিপ কুমার চক্রবর্তী তার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায়। তিনি আরো বলেন ২৬ তারিখ রাত আনুমানিক ৪টার দিকে বগুড়া জেলা কারাগার হতে ৪ জন মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবগত করলে তাৎক্ষনিক শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে শহরের চেলোপারা এলাকায় ৪জন অপরিচিত ব্যাক্তিকে সন্দেহভাজন আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা স্বিকার করে যে জেলখানা থেকে পালিয়ে আসা কয়েদি তারা।

কয়েদিরা বগুড়া সদরের কুটুরবাড়ি পশিচমপাড়া এলাকার ইসলাইল শেখের পুত্র ফরিদ শেখ, কাহালু উপজেলার উলট্ট পূর্বপাড়া এলাকার মান্নানের পুত্র জাকারিয়া, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি উপজেলার দিয়াডাঙ্গা এলাকার নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ও সরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি এলাকার মৃত ইসরাফিল খাঁর পুত্র আমির হামজা। পুলিশ সুপার আরো বলেন যে, পালানো কয়েদিরা গত প্রায় একমাস ধরে এই পরিকল্পনা করার পর এই ঘটনা ঘটনায়।

এঘটনায় অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান, বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, গণপুর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী, র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডারসহ জেলখানা পরিদর্শন করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন ইতিমধ্যে আমরা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এতে অতিরিক্ত জেলা ম্যজিষ্ট্রেটকে প্রধাণ করে এতে পুলিশ থেকে একজন, ফায়ার সার্ভিস থেকে একজন, গনপূর্তের একজন, র‌্যাবের একজন এবং জেলখানার একজন প্রতিনিধি থাকবে। তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া আছে যে, কারাগারে নিরাপত্তার কোন ঘাটতি আছে কি না। তিনি আরো বলেন ইতিমধ্যে আমরা কারাগাড় পরিদর্শন করেছি। তদন্তের প্রতিবেদন পেলেই আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। এছাড়াও ডিআইজ প্রিজন থেকেউ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্ত শেষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন কারাগাড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে।

কারাগারের বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, দায়িত্বশীল কারাগারের কর্মকর্তা কর্মচারিগণ কারাগারের নিরাপত্তা জোরদারের চেয়েও তাদের ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার সন্ধানে অধিক মনোযোগী ছিলেন। জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন ও জেলার ফরিদুর রেজা রুবেল এর মতো দুই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মধ্যে দাপ্তরিক কার্যক্রমের সমন্বয়ের অভাব ছিলো বলে নিশ্চিত করেছেন। এমনও জনশ্রুতিও রয়েছে তারা আর্থিক সুবিধা পেলে যেকোন অনিয়ম করতে দ্বিধা করতেন না। তাদের এহেন নৈতিকতা বিবর্জিত ভূমিকার কারণে গার্ডিং স্টাফরা নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতেন না। প্রতিদিন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের সেল তল্লাশির বিধান থাকলেও তারা ঠিকমতো সেলগুলো তল্লাশী করতেন না। চরম দায়িত্ব অবহেলার কারণে এই পলায়নের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।

যেভাবে ধরাপড়ে চারআসামী: বগুড়া সদর ফাঁড়ির এসআই খোরশেদ আলম বলেন, “আমি ও আমার ফোর্স নির্দেশ পাওয়ার পর জেলখানা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে ফতেহ আলী বাজারের পাশে করতোয়া নদীর ধারে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি চারজন এক সঙ্গে নদীর পাশ থেকে চেলোপাড়া চাষিবাজারে হেঁটে উঠছেন। “তখনই আমার সন্দেহ হয়। কারণ, আমাদের জানানো হয়েছে চারজন পালিয়েছে। এরাও তো চারজন। তখন আমি ও টিমের অন্যরা দ্রুত সেখানে গিয়ে তাদের ঘিরে ফেলি। তাদেরকে নানা প্রশ্ন করি কিন্তু তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। “তখন তাদের দেহ তল্লাশি করে জেলখানার একটি কাগজ পাই। এতে আমরা নিশ্চিত হই এরাই সেই আসামি, যারা জেল থেকে পালিয়েছে। তখন বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই এবং তাদের সবাইকে থানায় নিয়ে আসি।”

তবে ধীরে ধীরে আসামীদের গ্রেফতারের বিষয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় মারফত সর্বশেষ যেটি জানা গেছে তা হলো পলাতক কয়েদিরা জেল থেকে পালিয়ে করতোয়া নদীর ধার বেয়ে ফতেহ আলী ব্রীজের কাছে পৌছালে কিছু টোকাই তাদের পথ রোধ করে এবং তাদের কাছে ৭০ প্যাকেট ডারবি সিগারেট পায়। এরপর টোকাইদের সাথে পলাতকদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের আটক করে। এসব নানা কথায় পলাতকদের বিষয়ে বিভিন্ন ধারনা তৈরি হচ্ছে সচেতন মহলে।

আসামীদের পরিচয়: কারাগার থেকে পালানো চার আসামীর একজন জাকারিয়া। সে কাহালু পৌরসভার মেয়র আব্দুল মান্নানের ছেলে। মান্নান কাহালু উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। কাহালু থানার ওসি সেলিম রেজা যায়যায়দিনকে বলেন, ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল কাহালুর রোস্তম চাপড় গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্কুলপড়ুয়া ছেলে নাঈমুল ইসলাম নাঈম (১৩) হত্যাকাণ্ডের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন জাকারিয়া।” নাঈম হত্যা মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, নাঈমকে আসামি জাকারিয়া ও তার সহযোগীরা মিলে অপহরণ করেন। পরে তার মুক্তিপণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয় পরিবারের কাছে। টাকা না পেয়ে শিশুটিকে ইটভাটায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলার পর ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি বগুড়ার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমান রায় ঘোষণা করেন। রায়ে জাকারিয়া ও তার সহযোগী ডালিমকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

প্রসংগত জেলের প্রাচীরের ভেতরে আবারো থাকে একটি প্রচীর অর্থাৎ কনডেম সেলেরও রয়েছে একটি প্রচীর এছাড়া প্রতিটি কনডেম সেলে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তাকর্মী রাখা হয়। এমন নিরপত্তাবেষ্টনীর ছাদ ফুটো করে এবং সু-উচ্চ প্রাচীর টপকিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় কারাগারে কর্মরত কারারক্ষী কিংবা কর্মকর্তাদের কোন সহযোগিতা আছে কিনা তা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা প্রয়োজন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে