রাজনগরে পানিবন্দী ৪০ হাজার মানুষ

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৪, ১৮:৪১

রাজনগর (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
ছবি-যায়যায়দিন

মৌলভীবাজারের রাজনগরে ঈদের দিন থেকে টানা ৩দিনের অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দী হয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। মনু নদ ও কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের পাশাপাশি ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষরাও বন্যাক্রান্ত হয়েছেন। 

স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন। তবে বন্যায় আক্রান্ত এলাকায় নিরাপদ খাবার পানির সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে। গবাধিপশুর খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। মনু ও কুশিয়ারার পানি খানিকটা কমলেও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের বাড়িঘর এখনো পানিতেই ভাসছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৭১টি গ্রামে মানুষ এবারের বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে মনু ও কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে পানি লোকলয়ে প্রবেশ করেছে। কোথাও কোথাও বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের সুড়ঙ্গ দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে। তবে ভাঙনের মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মনু নদে টেকসই বাঁধ দিতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার যে প্রকল্প নেয়া হয়েছিল তার ঠিকাদারদের দোষছেন এসব এলাকার মানুষ। ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ মিলে ভাঙ্গন ঠেকিয়েছেন। 

নিজ উদ্যোগে মাটি ভরে বাঁধের ভাঙ্গন প্রবণ স্থানে বস্তা ফেলেছেন। ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঈদের পরদিন থেকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। 

এসব আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় দুই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জলাবদ্ধ রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা ও কবরস্থান। মনু নদের পানি দ্রæত কমলেও কুশিয়ারা নদীর পানি ধীর গতিতে কমছে। বন্যায় আক্রান্ত এলাকার পানিবন্দী মানুষরা নিরাপদ খাবার পানি ও গোখাদ্যের সংকটে রয়েছেন। 

আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গবাধিপশু পাঠিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। অনেকের বসত ঘরে পানি থাকায় চুলায় রান্না করে খাবার খেতে পারছেন না। তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে শুকনো খাবারের উপর। উপজেলার জাহিদপুর, বেড়কুড়ি, পূর্ব বেড়কুড়ি, রশিদপুর, কাশিমপুর, শাহপুর, আব্দুল্লাহপুর, হামিদপুর, লামা বিলবাড়ি, কেশরপাড়া, তুলাপুর, সাদাপুর, উমরপুর, কান্দিগাঁও, সুরিখাল, ছিক্কাগাঁও, রুস্তমপুর, কামালপুর, ইলাশপুর, মাথিউড়া, রাউবাড়ি, উজিরপুর, একামধু, আকুয়া, আদিনাবাদ, কোনাগাঁও, কান্দিরকুল, দাসপাড়া, ভুজবল, নন্দীউড়া, দত্তগ্রামসহ ৭১টি গ্রামের বিস্তৃর্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উঁচু এলাকার পানি নেমে গেলেও নিচু এলাকায় এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে মানুষের বাড়িঘর।

হামিদপুর গ্রামের আলী হোসেন জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি খুব ধীরে কমছে। তারা খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন। তাদের গ্রামসহ আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষ একই সমস্যায় রয়েছেন। খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

পূর্ব বেড়কুড়ি গ্রামের জায়েদ আহমদ বলেন, আমার পরিবারে ৭জন সদস্য। টিন দিয়ে চুলা তৈরি করে রান্না করে আমরা খেয়েছি। ঈদের খুশির পরিবর্তে আমাদের এলাকায় বন্যার কারণে নিধারুণ কষ্টে দিন যাপন করছি। এখনো বাড়ির উঠানে পানি রয়েছে। তাই গবাধিপশু গুলোকে নিরাপদে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছি। আমরা খুব কষ্টে আছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এই বন্যা হয়েছে। শুরু থেকেই আমরা আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়েছি। আশ্রয় নেয়া মানুষদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার প্রথমদিন থেকেই দেয়া হচ্ছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য মেডিকেল টিম কাজ করছে। জিআর চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বন্যার্তরা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন। পানি পুরোপুরি কমে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা কাজ চালিয়ে যাবো।

এদিকে শনিবার রাজনগরের ফতেপুর ও উত্তরভাগ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বন্যাদুর্গত ২০০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও ৪ হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দিয়েছেন মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় নৌকাযোগে গিয়ে তিনি এসব ত্রাণ বিতরণ করেন। 

এসময় তার সাথে ছিলেন রাজনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদির ফৌজি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজু পালসহ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।

যাযাদি/ এম