কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, ত্রাণের জন্য হাহাকার
প্রকাশ | ২১ জুন ২০২৪, ১৫:৩১
মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীতে আবারও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার (২১ জুন) সকাল ৯টার খবরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুশিয়ারা নদীর শেরপুর সেতু পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ধরা হয়েছে ৮.৫৫ সে.মি.। ভারতের ঢল ও গেল কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে বিপদসীমা অতিক্রম করে নদীতে ৮.৭৯ সে.মি এসে ২৪ সে.মি.পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজার শহরে দিয়ে ঘেঁষে যাওয়া মনূ নদে গেল ৩ দিন ধরে পানি বৃদ্ধি পেলেও শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত কমে বিপসীমায় এসে দাড়িয়েছে। মনূ নদের শহরের চাঁদনীঘাট সেতুতে বর্তমানে পানির পরিমান ১১.৩০ সেমি:।
এদিকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কুশিয়ারা নদী পাড়ে গেলে দেখা যায়,তীরের মানুষের সবার ঘরে ঘরে হাঁটুসম পানি গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বসতির মায়ায় পড়ে এসব পানিবন্দি মানুষ ঘরের খাটের উপর বসে সময় পাড় করছেন। গবাদি পশুগুলো পাশের ওয়াপধা সড়কে নিয়ে রেখেছেন। নদী পাড়ের কিছু মানুষ ওয়াপধায় প্রাথমিক খড়কোটে দিয়ে বাস করছেন।
নদী পাড়ের ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে দেখা যায়, স্কুলে প্রায় শতাধিক পানি বন্দি মানুষ উঠেছেন। স্ত্রী-সন্তানসহ ৭ সদস্য নিয়ে গ্রামের মিরাস মিয়া, জাসনা বেগম বলেন, ৪দিন যাবৎ আশ্রয় কেন্দ্রে এসে অবস্থান করেছি। সামান্য চিড়া আর মুড়ি পেয়েছি। আমাদের সাথে এখানে শিশু ও বয়োবৃদ্ধসহ শতাধিক মানুষ রয়েছেন। ক্ষুধার তারড়নায় সবাই কষ্ট পাচ্ছেন।
গ্রামের শাহাব উদ্দিন,আছকির মিয়া, ইলিয়াছ আহমদ (এলাইছ) আব্দুল্লাহ ও কাউছার আহমদ বলেন, কুশিয়ারা পাড়ের ওই আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ সামগ্রী বন্টন না করায় শতাধিক মানুষ প্রায় না খেয়ে আছেন।
নদী পাড়ের উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানান, মুড়ি আর চিড়া ছাড়া এখনো কিছুই পাওয়া যায়নি। তারা দ্রæত জেলা প্রশাসনসহ সরকারের তরফ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের দাবী জানান। উত্তরভাগ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য মাসুক মিয়া বলেন, সুনামপুর আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো কেউ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসেননি।
ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ ওলিউর রহমান বলেন, তার ওয়ার্ডের কান্দিগাঁও ও রামপুরে দুটি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এখানে ৭০ জন পানি বন্দি বসবাস করছেন। তিনি বলেন, এখনো তার ওয়ার্ডে কোন ত্রাণ সামগ্রী এসে পৌঁছায়নি।
এদিকে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, কুশিয়ারা পাড়ের উত্তরভাগ ও ফতেপুর ইউনিয়নে ১১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী বন্ঠণের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, জরুরি একটি ফোন এসেছে, আপনাকে পড়ে ফোন দিচ্ছি।
এদিকে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, কুশিয়ারায় শুক্রবারও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী পাড়ের ওয়াপধা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আমরা বস্তা রেখেছে, যাতে কাউয়াদিঘী হাওরে পানি প্রবেশ করতে না পারে।
তিনি বলেন, মৌলভীবাজার শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া মনূ নদের জুগীঢর এলাকার বাঁধে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় ৬ হাজার বালুর বস্তা ড্রাম্পিং করেছি। ওই প্রকৌশলী বলেন, মনূ নদে পানি কমে যাওয়ায় আতঙ্কও কমেছে।
যাযাদি/ এসএম