যমুনায় অসময়ের ভাঙন, অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদী গর্ভে

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২৪, ১৫:০০

পাবনা প্রতিনিধি
ছবি-যায়যায়দিন

অপরিকল্পিত বালু দস্যুতার কারণে প্রতিবার অসময়ে নদী ভাঙন দেখা দেয় যমুনা নদীতে। ইতোমধ্যে যমুনার ভাঙনে পাবনার বেড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে চটলে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থানসহ মসজিদ। ভাঙন প্রতিরোধে ক্ষতিগ্রস্তসহ স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন। 

এদিকে খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিনিয়ত নদীর ভাঙন পাড়ে দাঁড়িয়ে দয়া চাইছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চর নাগদাহ, হাটাইল আরালিয়া চর সাড়াসি গ্রামসহ নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের লেওলাই পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম এই ভাঙনের মুখে।  চরসাড়াসি ও চরনাগদাহ গ্রামের ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। অনেকেই আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অসময়ে যমুনা নদী ভাঙন দেখা দেয়ায় গেল দু সপ্তাহের ব্যবধানে লেওলাইপাড়া গ্রামে প্রায় অর্ধশত বিঘার মত ফসলী জমি ও চড়সাড়াসি গ্রামে ১৫/২০ টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বসবাসের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেকেই। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন ভারেঙ্গার লেওলাইপাড়া গ্রামের নদীপাড়ের ফসলি জমি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে বিলীন হচ্ছে নদীতে। আর সে দৃশ্য দেখে বাসিন্দাদের চোখে চিন্তার ছাপ। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা শুধু খোঁজখবর নেয় কিন্তু কোন কাজ শুরু করেনি। স্থানীয়দের দাবি, এবার ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে এখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনা, কমিউনিটি ক্লিনিক  বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে গ্রামবাসীর দিন কাটছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায়। তাই ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। 

চরনাগদাহ গ্রামের কৃষক ইমদাদুল হক বলেন,‘ নদী ভাঙনে আমি পাঁচবার বসতভিটাসহ প্রায় দশ বিঘা জমি হারিয়েছি। সপ্তাহ খানেক আগে আবারও বসতভিটা হারিয়েছি। তিনি বলেন, ‘আমার এ দুর্দিনে কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের গ্রামের একটি পাড়া নদীতে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।’ 

হাটাইল চরের কৃষক জয়নাল মোল্লা বলেন, ‘প্রতিবছরই বর্ষাকালে আমাগেরে চরের মানুষ নদী ভাঙনে বাড়িঘন জমি হাড়ায়। এবার আবার এই অসময়ে নদীতে ভাঙন শুরু হইছে। কয়দিন আগে আমার দুই বিঘা বোরো ধান ও এক বিঘা তিল ক্ষেত নদী গিলে খাইছে। সব মিলিয়ে আমি প্রায় ১০ বার এ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। আমাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে এই নদী। বর্ষার পর নতুন বাড়ি করেছি, এক সপ্তাহ এই ভাঙন থাকলে এটাও হয়তো নদীতে ডুবে যাবে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন নদীতে যেন জিও ব্যাগ ফেলে আমাদের রক্ষা করে।’

নতুন ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ জানান,‘ গত দুই সপ্তাহ ধরে আমার ইউনিয়নের লেওলাইপাড়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গেল এই কয়দিনেই প্রায় অর্ধশতাধিক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুকিতে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নিজ হাতে মাটি ফেলে উদ্বোধন করা মুজিব বাধঁ নামের প্রধান বাঁধসহ সরকারি স্কুল, কবরস্থান, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ ঘনবসতি দুইতিনটি গ্রামের কয়েক হাজার বসতবাড়ি। ভাঙন রোধে দ্রæত জিওব্যাগ না ফেললে ভয়াবহ রুপ নিতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে তিনি জানান।’

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোরশেদুল ইসলাম বলেন, যমুনায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে এমন তথ্য আমার কাছে নেই। আমি খোঁজ নিয়ে এবং পাউবোর কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে দ্রæত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে এমন খবর পেয়ে ইতোমধ্যেই কবলিত ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করেছি। ভাঙন প্রতিরোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে। 

যাযাদি/ এসএম