রংপুরের মিঠাপুকুরে ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার একটি কার্যালয়ে উদ্যোক্তা কর্তৃক জুসের সঙ্গে চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে কর্মরত এক আদিবাসী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই তরুণী বাদী হয়ে দুজনকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন।
রোববার (৫ মে) দুপুর আনুমানিক-১টার সময় মিঠাপুকুর উপজেলার ০২ নং রানীপুকুর ইউনিয়নের বলদিপুকুর বাজারে অবস্থিত ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মামলার বিবরণ এবং তরুণীর অভিযোগ, প্রায় দু-বছর থেকে তিনি বাড়ি সংলগ্ন বলদিপুকুর বাজারে অবস্থিত ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাকের অধীনে সেখানে কর্মরত ছিলেন। ওই শাখায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে বলদিপুকুর হাজিপাড়া গ্রামের মৃত- মিজানুর রহমানের পুত্র শাখাটির উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাক কর্মস্থলে তাকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। ঘটনার দিন (৫ মে) রোববার ওই তরুণী সকাল ১০টার সময় কার্যালয়ে উপস্থিত হলে দুপুর আনুমানিক ১টার সময় উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাক অফিসে উপস্থিত হয়ে তার সহযোগী সিদ্দিকুর রহমান সোহান (২৫) নামে এক যুবককে জুস নিয়ে আসতে বলেন।
সোহান তিনটি জুস নিয়ে এসে নিজে একটি এবং আব্দুর রাজ্জাক সহ ওই তরুণীকে একটি করে জুস দিলে জুস খাওয়ার পর ওই তরুণী অচেতন হয় পড়েন। তরুণী অচেতন হয়ে পড়ার দু’ঘণ্টা পর বিকাল আনুমানিক ৩টার সময় জাগ্রত হলে দেখতে পারেন, আব্দুর রাজ্জাক তাকে দুহাতে চেপে ধরে আছেন। পরে ওই তরুণী তার মাকে ফোন দিলে তার মা এসে তাকে অফিস থেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়।
তবে মামলার অভিযোগপত্রে ওই তরুণী তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করলেও এই প্রতিবেদককে বলেন, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি-না সেটা তার সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এমনকি চেতনানাশক পান করে অচেতন হওয়ার পর যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন তিনি স্বাভাবিক ছিলেন বলেও জানান। এমনকি প্রথমে থানায় ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করার পর রাজ্জাকের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত কিশোরদের আদালতে প্রেরণের পর তরুণী মামলার অভিযোগপত্রে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ্য করেছেন। যা এলাকায় চাঞ্চল্য এবং বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। অনেকের দাবি, মারামারির মামলায় অভিযুক্তদের বাঁচাতে কাউন্টার মামলা হিসেবে ঘটনার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করা হয়েছে।এদিকে ঘটনার সূত্রধরে সোমবার (৬ মে) বিকাল আনুমানিক ৩টার সময় ওই তরুণী তার বয়ফ্রেন্ডকে বিষয়টি জানালে হঠাৎ দিনেদুপুরে তার বয়ফ্রেন্ড ১০/১২ জন কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে উদ্যোক্তা এবং ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাকের ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে আব্দুর রাজ্জাককে মারধর, ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায়। যদিও আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, হামলার সময় তার অফিসের ড্রয়ারের তালা ভেঙে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লুট করা হয়েছে এবং তিনলক্ষ টাকার মালামাল ভাঙচুর করা হয়েছে। এসময় হামলাকারীদের বাধা দিতে গেলে তার পায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে কোপ মারা হয়। পরে উপস্থিত জনতা সজিব পাহান (২০) ও কনক পাহান (২০) নামে দুই আদিবাসী তরুণকে আটক করে পুলিশে দেয়।
কি কারণে আদিবাসী তরুণরা উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাকের অফিসে হামলা চালিয়েছে বিষয়টি নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হলে পরে ওই তরুণী এবং আটক তরুণদের পরিবার জানায়, ওই তরুণীকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। মূলত ওই তরুণীর সম্পর্কের কারণে ওই কিশোর তার অফিসে নিয়মিত আসতেন। দায়িত্ববোধ থেকে তীব্র নজরদারি এবং তাঁকে বাধা দেওয়াই ছিলো তার অপরাধ। পূর্বের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই তরুণ বিষয়টিকে ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করেছে।
নাম প্রকাশে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দিনেদুপুরে ভরা বাজারে এমন কিছু ঘটা সম্ভব নয়। নিশ্চয়ই এর ভিতরে কোনো রহস্য আছে।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, হামলা এবং লুটপাটের ঘটনায় আব্দুর রাজ্জাক একটি এবং তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে তরুণী বাদী হয়ে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। আব্দুর-রাজ্জাককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আর ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত রাজ্জাকসহ সোহানকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
যাযাদি/ এসএম