রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

গোসাইরহাটে বাল্য বিবাহ বন্ধ করলেন ইউএনও 

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
  ০৩ মে ২০২৪, ১৪:৪২
ছবি-যায়যায়দিন

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুরে এক দরিদ্র কৃষকের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। হঠাৎ করেই সেখানে হানা দিয়ে এক জনকে আটক করে অনুষ্ঠানের সকল খাবার জব্দ করে নিয়ে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ।

পরে তিনি খাবারগুলো একটি আশ্রয়নের বাসিন্দাদের মাঝে বিতরণ করেন। এবং আটককৃতকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে কোদালপুর ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের কৃষক মহিউদ্দিন তালুকদারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, হাজীপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক মহিউদ্দিন তালুকদারের চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সাবিনা ইয়াসমিন পাঁচ নম্বর। তিন ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। বড় মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন ও সবার ছোট এক ছেলেকে নিয়ে গৃহস্থালি করে কোন মতে বেঁচে আছেন মহিউদ্দিন। মেয়ে সাবিনা স্থানীয় একটি স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। সংসারের অভাব অনটনের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় তার। এরই মাঝে পাশ্ববর্তী গ্রামের এক সৌদি প্রবাসীর সাথে বিয়ে ঠিক হয় সাবিনার। আজ বৃহস্পতিবার ছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। দরিদ্র পিতা ধার-দেনা করে দেড় লাখ টাকা খরচ করে একশো লোকের খাবার আয়োজন করেন।

বিয়ের রান্নাবান্না সহ সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এবার বর যাত্রী আসার অপেক্ষায় সবাই। ঠিক সেই মুহূর্তে দুপুর ১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হন। এসময় মেয়ের বাবা-মা সহ অনেকেই সটকে পড়েন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জন্ম নিবন্ধন যাচাই-বাছাই করে করে দেখতে পান মেয়ের জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারী ২০০৯। সে অনুযায়ী তার বসয় হয় ১৫ বছর ৪ মাস। এখনো ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়ায় এ বিয়ে বেআইনি।

তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেয়ের মামা মুজ্জাম্মেল মালকে আটক করেন এবং রান্না করা ৬ ডেক খাবার জব্দ করেন। পরে খাবারগুলো কোদালপুরের একটি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের মাঝে বিতরণ করেন। এবং মুজ্জাম্মেল মালকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এতে বিয়ে বাড়ির আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়।

খবর পেয়ে দুপুরে সরেজমিনে মহিউদ্দিন তালুকদারের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছিল। সাজানে হয়েছিল প্যান্ডেল। বিয়ে বাড়ি এখন সুনসান নীরবতা। মহিউদ্দিন তালুকদার সহ ২৫/৩০ জন লোক বাড়িতে বসে কথাবার্তা বলছেন। তাদের সবার মন খারাপ করে। চোখেমুখে বিষাদের চিহ্ন। লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ ঘটনার পর মেয়ের মা নাজমা বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা সদরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

মহিউদ্দিন তালুকদার বলেন, আমি গরীব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। অভাবের কারণে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারি নাই। ছোট মেয়ে সাবিনা কোন মতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছে। অভাবের কারণে তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জন্ম নিবন্ধনে আমার মেয়ের বয়স ১৮ বছর না হলেও বাস্তবে তার বয়স ১৮ বছরের বেশি হবে। তাই আমি ধারদেনা করে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করি। কোদালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকেও মেয়ের বিয়ের কথা জানিয়েছি। তখন কেউ নিষেধ করেননি। বর যাত্রী আসার আগ মুহূর্তে ইউএনও স্যার এসে বিয়ে ভেঙে দিয়ে সব খাবার নিয়ে গেছে। প্রশাসনের কেউ যদি আগে নিষেধ করতো তাহলে আমার এতো বড় ক্ষতি হতোনা।

মেয়ের বড় মামা সায়েদ মাল বলেন, ধারদেনা করে ভাগ্নীর বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। এ ঘটনায় মেয়ের মা জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। শুধু বিয়ে বন্ধ করে দিলে আমাদের আপত্তি থাকতো না। খাবারগুলো নিয়ে গেছে এটাই সবার কষ্ট লেগেছে।

কোদালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বাড়ির ঠিক সামনেই মহিউদ্দিন তালুকদারের বাড়ি। আর সেখানেই হয়েছিল বিয়ের আয়োজন। মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমি জানতাম মেয়ে দেখতে ছেলে পক্ষের লোকজন আসবে। বিয়ে হবে এটা জানতানা। জানলে নিষেধ করতাম।

গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ এ বিষয়ে বলেন, গতকালই আমি খবর পেয়েছিলাম যে আজকে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। তাই অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হয়ে খাবার জব্দ করে আশ্রয়নের বাসিন্দাদের মাঝে বিতরণ করেছি এবং বাল্য বিয়ে নিরোধ আইনে মেয়ের মামাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও বয়স না হওয়া পর্যন্ত তার ভাগ্নীকে বিয়ে দেবেননা মর্মে মুচলেকা দিয়ে সে ছাড়া পেয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে