দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হচ্ছেন না বিএনপি নেতা আব্দুল বারী  

প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৩৪

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আলহাজ্ব আব্দুল বারী চেয়ারম্যান পদে  আর প্রার্থী হচ্ছেন না। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সুনামগঞ্জ জেলার সহ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। 

তিনি দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। বিগত সময়ে উপজেলা নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছিলেন আলহাজ্ব আব্দুল বারী। দীর্ঘদিন মাঠে-ময়দানে  কাজ করেছেন। উপজেলার সকল এলাকায় সভা,সমাবেশ,উঠান বৈঠক করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। মাঠ পর্যায়ে তার ছিলো ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। 

আলহাজ্ব আব্দুল বারী হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা বন্ধ করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে দোয়ারাবাজারে বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে  আলহাজ্ব আব্দুল বারী উপজেলা নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। 

তিনি বলেন, নির্বাচনী মাঠ তার অনুকুলে ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিদ্ধান্ত হয়েছে দল এসব প্রহসনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেনা। কাজেই তিনি বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধন্ত নিয়ে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

দীর্ঘদিন দিনের দলীয় সহ যোদ্ধা,উপজেলা নির্বাচনের জন্য তার পক্ষের কর্মী-সমর্থক, শুভাকাঙ্খী, ভোটারদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। 

আজ সকলে নির্বাচনের জন্য তার পক্ষে মাঠে ময়দানে কাজ করে নির্বাচনী মাঠ তৈরি করেছিলেন। যারা অনেক কষ্ট-পরিশ্রম করেছেন সকলের কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সকলকে ধৈর্য্য ধারণের আহবান জানিয়েছেন। 

আলহাজ্ব আব্দুল বারী বলেছেন,   সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৮ মে থেকে শুরু হওয়া আসন্ন চার ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

‘সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের নিকট জবাবদিহী করে সেই নির্বাচন গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত। এই শর্তের অনুপস্থিতিতে স্বৈরতন্ত্র হিংস্ররুপে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে এক বিকট স্বৈরাচারের অভ্যুদয় হয়েছে। আওয়ামী দখলদার শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন হয়ে দেড় দশক ধরে অবাধ, সুষ্ঠু,শান্তিপূর্ণ ও সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করেছে। এদের আমলে কখনোই জাতীয় ও স্থানীয় সরকার কোন নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। জনগণের ভোটের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদেরই আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন বিজয়ী ঘোষণা করে। দখলদার শাসকগোষ্ঠী প্রতিটি নির্বাচনের পূর্বে জনগণকে প্রতারিত করার জন্য নতুন নতুন রণকৌশল গ্রহণ করে।’

‘প্রাণবস্তু গণতন্ত্রে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ কখনোই রপ্ত করেনি। তাদের অধীনে সকল জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি বিরোধী দলের প্রার্থীদের নানাভাবে হামলা, মামলা ও হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে। মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা দেয়া এবং নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা ও শারীরিক আক্রমণসহ পথে পথে বাধা দেওয়া হয়। অনেককেই মনোনয়ন পত্র জমা দিতেও দেওয়া হয়নি।’

‘অগণতান্ত্রিক শক্তি কখনো অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মিত্র হতে পারে না। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ভোটারবিহীন ৭ জানুয়ারীর ডামি নির্বাচনের সকল আয়োজন সম্পন্ন করার পরও তারা আশঙ্কামুক্ত হতে পারেনি। তাই নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদেরও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেওয়া, ইন্টারনেটের গতি শ্লথ করা, নাগরিকদের নজরদারী নস্যাৎ ইত্যাদি নজীরবিহীন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বিনাশী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর আগেও জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের নানাভাবে বাধা প্রদান করা হয়। কিছু এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হলেও পরক্ষণেই তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়।’

‘এরা একতরফা নির্বাচন করতে গিয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রমনা দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে ভরে রাখে। ৭ জানুয়ারীর ডামি নির্বাচনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশী নেতাকর্মীকে কারান্তরীণ করা হয়, এদের অনেকেই এখনও কারাগারে মানবেতর ভাবে জীবন-যাপন করছেন। গুম, খুন অব্যাহত থাকে।’

‘এমতাবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তাঁর সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রকাশ্য একপেশে ভূমিকার জন্য ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি আরও অবনতিশীল হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।’

‘এই সরকার ভোট, সংবিধান, ভিন্নমত প্রকাশ, বহুদলের অংশগ্রহণে নির্বাচনসহ মানুষের সহজাত অধিকার গুলোকে নির্দয় দমনের কষাঘাতে বিপর্যন্ত করেছে। আওয়ামীলীগের রাজনীতির একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তারের ফলশ্রুতিতে এই অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বিএনপি আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সকল ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’

সভার এসব সিদ্ধান্ত দলীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে। দলের এ সিদ্ধান্ত জানার পর থেকেই তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সন্মান করে আসন্ন দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন।

যাযাদি/ এম