কর্মস্থলে যোগদানের তিন দিনের মাথায় আগুনে পুড়ে মারা গেলেন নাঈম
প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২৪, ১৯:৫০ | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ১৯:৫৩
‘আব্বা আগুন লাগছে, দোয়া কইরো, আম্মারে বইলো আমার জন্য দোয়া করতে, বাইচ্চা থাকলে দেখা হবে।’ ভবনের ছাদে উঠে বাবাকে ফোনে আগুনের খবর জানিয়েছিল নাইম। এরপর আর কথা হয়নি। পূত্র শোকে নিথর বাকরুদ্ধ বাবা নান্টু মিয়া। বিলাপ করতে করতে বার বার ম‚র্ছা যাচ্ছেন মা লাকি বেগম। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনদের ভিড়। গোটা এলাকা শোকে স্তদ্ধ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রয়ারী) রাতে ঢাকার বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই বিরিয়ানি হাউজের অগ্নিকান্ডে নিহত হন মোঃ নাইম। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার ৩নং ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের ছোট গৌরীচন্না এলাকার নান্টু মিয়ার ছেলে। দুই ভাই বোনের মধ্যে নাইম বড়। বাবা নান্টু মিয়া পেশায় ভ্যানচাল, মা লাকি বেগম গৃহীনি।
নাঈম ২০২১ সালে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না নওয়াব সলিমুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৩ সালে বরগুনা সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মা-বাবা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে মেধাবী ছেলে নাঈমকে এইচএসসি পাশ করিয়েছেন। বাবা মা’র কষ্ট লাঘব আর একমাত্র বোনকে পড়াশোনার করার দায়িত্ব নিতে একমাস আগে কাজের সন্ধানে রাজধানী ঢাকায় গিয়েছিলেন নাঈম। মাত্র তিনদিন আগে বেইলী রোডের কাচ্চি ভাই বিরিয়ানির হাউজের ওই বিল্ডিংয়ে আরএফএল কোম্পানির একটি শাখায় কাজ নেয় নাঈম। কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
নাইমের মা লাকি বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘ বাছারে মোর কোলে আইন্না দেও, মুই এট্টু মোর পোলার মুকটা দেকমু। ঈদের সোমায়া বাবায় মোর বাড়তে আইবে কইছে। আহারে এইয়া আলহে মোর কপালে। মোর একটা পোলা, মুই এহন কি লইয়া বাচমু। বলতে বলতে ফের মুর্ছা যান লাকি বেগম।
নাঈমের মৃত্যু এমন অকাল মৃত্যুর খরে এলাকা জুড়ে বইছে শোকের মাতম। বাড়িতে ছুটে এসেছেন পাড়াপ্রতিবেশিসহ সহপাঠীরাও।
নিহত নাঈমের চাচা মোঃ মিরাজ দফাদার বলেন, নাঈম অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ওর মা অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন এবং তার বাবা শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে যখন যে কাজ পায় সে কাজ করে। বাবা-মায়ের এমন দুর্দশা সংসারের হাল ধরতে নাঈম ঢাকা গিয়ে সিকিউরিটি কার্ডের দায়িত্ব নেন। কিন্তু এরপর এখন তাকে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। চোঁখের সামনে একটি পরিবার একেবারে পথে বসে গেল।
নিহত নাঈমের ফুফু মাহফুজা( ৪৫) বলেন, অভাবের কারণে নাঈমের মা লাকি বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। এটা নাঈম ভালোভাবে নিতে পারেনি। তাই অন্যের বাড়িতে মায়ের কাজ করা বন্ধ করতে চাকরি করতে ঢাকা যায় নাঈম। তরতাজা ছেলেটা এখন লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। তিনি বলেন, নাঈমের উপর ভরসা করে অনেক টাকা ঋণ করে স¤প্রতি নতুন ঘর তুলেছেন নাঈমের বাবা। ঋণের জালে জর্জরিত এই পরিবারটি একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একমাত্র ছেলেও এখন না ফেরার দেশে।
পাড়াপ্রতিবেশি ও সহপাঠীরা জানান, নিহত নাঈম একজন মেধাবী ছাত্র ছিলো। অভাবের সংসারের হাল ধরতে গিয়ে লাশ হতে হলো তাকে।
৩নং ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার কবির বলেন, নাইম মেধাবী ছাত্র ছিল। অর্থাভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি। অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরতে কাজের সন্ধানে ঢাকায় গিয়েছিল। এখন এই পরিবারটির হাল ধরার মত কেউ আর অবশিষ্ট রইলোনা। নাইমের অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কবির বলেন, আমি যথাসাধ্য পরিবারটির পাশে থাকার চেষ্টা করব।
যাযাদি/ এসএম