রংপুরের মিঠাপুকুরে এসএসসি পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগে এক যুবকের একমাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রামমাণ আদালত। এসএসসি পরিক্ষার্থী চাচাত ভাই কৃষি কাজে ব্যাস্ত থাকায় এবং অকৃতকার্য হওয়ায় সম্ভবনায় তার পরিবর্তে চলমান পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেছিলেন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ওই যুবক।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মিঠাপুকুর উপজেলার ০২ নং রাণীপুকুর ইউনিয়নের রাণীপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় এসএসসি পরিক্ষা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
ভ্রামমাণ আদালতসুত্রে জানা যায়, উপজেলার শাহ আবুল কাশেম দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এবারে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় আব্দুল কাদের (সুজন) নামে এক এসএসসি পরিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। কিন্তু কৃষি কাজে ব্যস্ত সময় পার করা সুজন কোন প্রকার একাডেমিক ও মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ না করে তার পরিবর্তে তার চাচাত ভাই সাবিকুল হাসানকে দিয়ে চলমান প্রক্সি পরীক্ষা দিয়ে আসছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে নিয়ম অনুযায়ী মডেল টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা থাকলেও কোন প্রকার পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করেন সুজন। পরিক্ষা দিলে সুজন নিশ্চিত অকৃতকার্য হতেন বলে তার পরিবর্তে সাবিকুল তার হয়ে প্রক্সি দিছিলেন বলে স্বীকার করেন সাবিকুল।
কেন্দ্রসচিবের প্রশ্রয়ে কেন্দ্রটিতে পরীক্ষার্থীদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে স্থানীয়দের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রটিতে সাংবাদিকরা পর্যবেক্ষণে গিয়ে ঢুকতে পারেননি। এসময় কেন্দ্র পরিদর্শনে বাঁধা প্রদান করেন রানীপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ" উক্ত কেন্দ্রেের সচিব- আব্দুল্লাহেল কাফী।
এসময় তিনি সংবাদকর্মীদের বলেন, শিক্ষা অফিসের লিখিত অনুমতি ছাড়া পরীক্ষার কেন্দ্রে কোন সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবেন না।
এই বলে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। এমন অসৌজন্যমূলক আচরণের পর সংবাদকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করলে তিনি দ্রুত পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কেন্দ্র থেকে পরিক্ষা চলাকালীন দৌলতপুর মানিকগঞ্জের পারুলিয়া গ্রামের সাবিকুল হাসান (১৮) নামে ওই ভূয়া পরিক্ষার্থীকে আটক করেন এবং ভ্রামমাণ আদালতে একমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, এসএসসি পরীক্ষার সেণ্টার হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহেল কাফি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে নানান অনিয়ম করে আসছেন।পরীক্ষার হলে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তিনি প্রকৃত মেধাবীদের অবমূল্যায়ন করছেন। যারা অকৃতকার্য হবে তারাও ভালো রেজাল্ট করে। এজন্যই তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেনা।
শাহ আবুল কাশেম দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, এ দায় সম্পূর্ণ কেন্দ্রসচিব ও ডিউটিরত শিক্ষকদের। এটা তাদের ব্যর্থতা। নিয়ম মেনেই পরীক্ষার্থীকে ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। এখন কেন্দ্রে কে পরিক্ষা দিবে না দিবে সেটা তাদের যাচাই-বাছাই করা উচিত।
মিঠাপুকুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম জানান,পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। সাংবাদিকদের বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান,প্রক্সি পরীক্ষার্থী সাবিকুল হাসানকে এক মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।সাংবাদিকরা নিয়ম মেনে পরীক্ষার তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। এ বিষয়ে কোন বিধি নিষেধ দেয়া হয়নি। পাশাপাশি কেন্দ্র সচিবকেও তিনি আরো দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশ দেন।
যাযাদি/ এম