আজ ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা চুয়াডাঙ্গা জেলা হানাদার মুক্ত হয়। এ দিন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর তুমুল প্রতিরোধের মুখে পাকহানাদার বাহিনী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর চুয়াডাঙ্গা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ্ জেলা অভিমুখে পালিয়ে যায়। হানাদারমুক্ত হয় চুয়াডাঙ্গা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার অবদান অবিস্মরণীয়। প্রথম রাজধানী হিসেবে নির্ধারিত হয় চুয়াডাঙ্গা। তারিখও নির্ধারিত হয় এপ্রিলের ১০। খবরটি আগেভাগেই জানাজানি হয়ে যাওয়ার ফলে কৌশলগত কারনে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায় প্রথম রাজধানী হয় এবং প্রবাসী সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর জেলার জীবননগর শহরে পাকহানাদার বাহিনীর পতন ঘটলেও চুড়ান্ত বিজয় আসে ৪ ডিসেম্বর। এদিন ভোরে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কমান্ডার মেজর দত্ত ও বর্ম্মা এবং ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে জীবননগরের ধোপাখালী সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে প্রবেশ করে জীবননগর, দত্তনগর, হাসাদহ সন্তোষপুর,রাজাপুর, ধোপাখালী ও মাধবখালীতে অবস্থানরত পাকবাহিনীর উপর অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী প্রচন্ড যুদ্ধ। এ সময় রাজাপুর ও মাধবখালী সীমান্তে সন্মুখ সমরে শাহাদৎ বরন করেন হাবিলদার আব্দুল গফুর, নায়েক আব্দুল মালেক, আব্দুর রশিদ, সিপাহী সিদ্দিক আলী, আব্দুল আজিজ ও আবু বকর। যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর ২৯ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা যৌথ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহের দিকে পালিয়ে যায়।
দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গাকে মুক্ত করে এ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। চুয়াডাঙ্গায় মোট মুক্তিযোদ্ধা ১৬’শ ৩১ জন। এর মধ্যে যুদ্ধাহত ১৫৬ জন। এ রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছেন ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। এ জেলায় দু’জন বীর প্রতীকও রয়েছেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্থানী বাহিনীর সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার এসব সূর্য সন্তানদের সাহসী মোকাবেলা চুয়াডাঙ্গাকে করেছে মহিমান্বিত।
যাযাদি/ এস