বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

​হারাগাছে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের দায় স্বীকার দুই আসামির: যেকোনো সময় গ্রেফতার ডিবির এএসআই

কাউনিয়া রংপুর প্রতিনিধি
  ২৮ অক্টোবর ২০২০, ২০:৫২

রংপুরে হারাগাছ থানার ময়নাকুটি এলাকার দশম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় পিবিআই এর হাতে গ্রেফতার দুই আসামি বাবুল হোসেন (৩৮) ও আবুল কালাম আজাদ দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। এছাড়াও ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে।

বুধবার বিকেলে রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর আলম পৃথকভাবে তাদের জবানবন্দী রেকর্ড করেন।

বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি জানান রংপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, পুলিশ সদস্য রায়হানুলের সঙ্গে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কসহ গণধর্ষণের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে ওই স্কুলছাত্রী বিচারকের কাছে জবাববন্দী দিয়েছে।

বিচারক তার জবানবন্দী রেকর্ড করেছেন। এছাড়া গ্রেফতার দুই আসামি তাদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।

এবিএম জাকির হোসেন আরও বলেন, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে এএসআই রায়হানুল গত শুক্রবার ওই ছাত্রীকে নিয়ে তার পূর্বপরিচিত এজহারভুক্ত আসামি সুমাইয়া আক্তার মেঘলা ওরফে আলেয়ার বাড়িতে যায় এবং মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরে ওই স্কুলছাত্রী রায়হানুলের সাথে ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলে তার মা বকাবকি করেন। এ কারণে মেয়েটি অভিমান করে ওইদিন রাতে রায়হানুলের পরিচিত সেই মেঘলার ভাড়া বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে অবস্থানকালে শনিবার রাতে মেঘলা ও সুরভির সাহায্যে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন বাবুল ও আবুল কালাম আজাদ।

এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়ায় ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম ওরফে রাজুকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ রাতের যেকোনো সময়ে তাকে গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান পিবিআই পুলিশ সুপার।

এর আগে মামলায় গ্রেফতার অপর দুই নারী সুমাইয়া আক্তার মেঘলা ওরফে আলেয়া ও সুরভি আক্তারকে গত মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত মঙ্গলবার ভোরে লালমনিরহাট সদরের পূর্ব মাজাপাড়া এলাকার করি মাহমুদের ছেলে বাবুল হোসেন এবং পূর্ব থানা পাড়ার মৃত কাচু মিয়ার ছেলে আবুল কালাম আজাদক গ্রেফতার করে পিবিআই।

মামলা সূত্রে জানা যায়, রংপুর মেট্রোপলিটন হারাগাছ থানাধীন ময়নাকুঠি কচুটারি এলাকার দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন মহানগর ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম। পরিচয়ের সময় রায়হানুল তার ডাক নাম রাজু বলে জানান ওই ছাত্রীকে। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত শুক্রবার ওই ছাত্রীকে সিগারেট কোম্পানির ক্যাদারের পুল এলাকার এক ভাড়াটিয়া সুমাইয়া আক্তার মেঘলা ওরফে আলেয়ার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন রায়হানুল। পরে গত শনিবার রাতে ভাড়াটিয়া মেঘলা ও তার সহযোগী সুরভি আক্তারের সহায়তায় আরও দুজন তাকে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়।

পরে ওইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ মেয়েটিকে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধারসহ মেঘলাকে এবং পরে রাতে আরেক সহযোগী সুরভিকেও আটক করে। এছাড়া ওই রাতেই অসুস্থ ছাত্রীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করায় পুলিশ।

এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পুলিশ সদস্য রায়হানুল ইসলাম ওরফে রাজু ও মেঘলার নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা আসামি করে হারাগাছ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার সকালে রায়হানুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। পরে দুপুরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেদিন থেকে পুলিশ লাইন্সে নজরদারিতে ছিলেন রায়হানুল।

অধিকতর তদন্তের স্বার্থে সোমবার বিকেলে মামলাটি হারাগাছ থানা থেকে রংপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়।

তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণের ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই লালমনিরহাট থেকে দুই ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পিবিআই পুলিশ।

এদিকে, শিক্ষার্থী গণধর্ষণ মামলার আসামি রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলামকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে রংপুরে নাগরিক সমাজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল ফারুকের কাছে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।

উল্লেখ্য গত শনিবার দিবাগত রাতে মেট্রোপলিটন পুলিশের এএসআই রাহেনুল এর নেতৃত্বে হারাগাছ থানার কাদেরের পূল এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে গণধর্ষণের শিকার হন দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় রবিবার রাতে ওই স্কুলছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে রাজু ওরফে রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রাজু রায়হানুল ইসলাম ও সুমাইয়া আক্তার ওরফে আলেয়া সহ অজ্ঞাত কয়েক জনের নামে হারাগাছ থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে