ভারতের বিকল্প থাইল্যান্ড মালদ্বীপ নেপাল...
প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২
বাংলাদেশিদের জন্য ভারতে পর্যটন ভিসা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ ও নেপালের মতো পার্শ্ববর্তী দেশে পর্যটক বাড়ছে। জুলাই-আগস্টে দেশে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পর্যটন ভিসা বন্ধ করে দেয় ভারত। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আর চালু করেনি।
বাংলাদেশের নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের এক তথ্যে দেখা গেছে, আগে বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ভারতে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করত। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করছে যুক্তরাষ্ট্রে। আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে থাইল্যান্ডে।
বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ প্রতি মাসে ভারতে ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য যায়। সাম্প্রতিক সময় দেশটিতে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এ কারণে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের খরচ ভারতে কমেছে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটক ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক ভারতের কলকাতা, দিল্লি, দার্জিলিং, সিকিম, মেঘালয়ে যেতেন। এখন সেসব পর্যটন এলাকার হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায় মন্দা চলছে বলে জানিয়েছে খোদ ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
তবে ভিসা বন্ধের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। যাত্রীরাও ভারতের বদলে থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, নেপাল ও মালদ্বীপে যাচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের শুধুমাত্র শিক্ষা ও চিকিৎসা ভিসা চালু রয়েছে। পর্যটক ভিসা বন্ধ হওয়ায় দেশের এভিয়েশন খাতে এর বড় প্রভাব পড়েছে। ভারত সীমিত আকারে ভিসা কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাই যাত্রী পাচ্ছে না এয়ার লাইন্স ও ট্যুর অপারেটররা। আবার ভিসা থাকা সত্ত্বেও বিমানবন্দরে হয়রানি বা আটকের ভয়ে অনেকে ভারতমুখী হচ্ছেন না। পর্যটন ভিসা নিয়ে অনেকেই ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত আসছেন। ফলে দেশটির বিভিন্ন রুটে যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
এয়ারলাইন্সগুলো জানিয়েছে, এয়ারলাইন্স তাদের ভারত রুটের ফ্লাইট সংখ্যা ৩ ভাগের ১ ভাগে নামিয়ে এনেছে। তবে বর্তমানে ভারত বন্ধ থাকায় নতুন কয়েকটি রুটে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। সেগুলো হচ্ছেÑ মালদ্বীপ, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, নেপালের কাঠমান্ডু এবং শ্রীলংকা। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো। ভিসা বন্ধের কারণে ইতোমধ্যে সাময়িক সময়ের জন্য ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা ফ্লাইট স্থগিত করেছে নভোএয়ার, চট্টগ্রাম কলকাতা রুটের ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। তবে ভারতের পর্যটকদের সেই চাপ এখন ব্যাংকক ও মালদ্বীপের ফ্লাইটের ওপর পড়েছে।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, জুলাইয়ের আগে প্রতি সপ্তাহে ভারতে ইউএস বাংলার ৩২টি ফ্লাইট যেত। আর এখন সেটি কমিয়ে ১২টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে ভারতে সরাসরি ফ্লাইট ছিল সেটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে প্রতি সপ্তাহে ৭টি ফ্লাইট যেত। এর বিপরিতে থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলংকায় পর্যটক যাত্রী বেড়েছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) বলছে, ভারতের পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকার কারণে মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডÑ এই গন্তব্যগুলোতে পর্যটকদের যাতায়াত বেড়েছে। সহজেই ভিসা পাওয়ার কারণে বর্তমানে মালদ্বীপ-শ্রীলংকা ও নেপাল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এদিকে সরকারও ভারতের বিকল্প খুঁজছে। ভারতের ভিসা না পাওয়ায় তৃতীয় দেশের ভিসাপ্রার্থীরা দিল্লির পরিবর্তে ভিয়েতনাম এবং পাকিস্তান থেকে ভিসা গ্রহণ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মুখপাত্র তৌফিক হাসান।
এদিকে দেশের আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে গত আগস্ট মাসে বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল। খরচ কমেছিল দেশেও। সেপ্টেম্বরে এসে তা আবারও বেড়েছে। শুধু কমেছে ভারতে। এক বছরের ব্যবধানে ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার কমেছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। মূলত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভারতে ভিসা দেওয়া বন্ধ থাকায় দেশটিতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমে গেছে।
গত সেপ্টেম্পরে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে সর্বমোট ৪২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ৭৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ১৮.২৩ শতাংশ খরচ করেছেন।
বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের দ্বিতীয় স্থান ভারতে। সেখানে ৫০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ১২.০৮ শতাংশ খরচ করেছেন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড। সেখানে ৪১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ৯.৮৮ শতাংশ খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ৮.৮৩ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ৭.২২ শতাংশ, কানাডা ৬.২৬ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৫.৩৬ শতাংশ, নেদারল্যান্ডস ৩.৬২ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩.৪৯ শতাংশ, সৌদি আরব ৩.২২ শতাংশ, আয়ারল্যান্ড ৩.২০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ২.৮৮ এবং অন্যান্য দেশ ১৫.৭২ শতাংশ খরচ করেছে বাংলাদেশিরা।
অন্যদিকে দেশে বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাই সবচেয়ে বেশি খরচ করে থাকে। বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচের প্রায় এক চতুর্থাংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইস্যুকৃত ক্রেডিট দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে এর হার ২৫.১ শতাংশ। যার পরিমাণ ২৮ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ব্রিটিশরা। ১২ কোটি ১০ টাকা টাকা বা ১০.৮২ শতাংশ ব্যবহার করেছেন তারা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতীয়রা। মোট ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ১০.২৫ শতাংশ খরচ করেছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে কানাডা, জাপান, সিঙ্গাপুর, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, আরব আমিরাত ও ইতালির নাগরিকরা। বিদেশি ক্রেডিট কার্ডে সর্বমোট ১১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা খরচ করেছেন।
যাযাদি/ এস