সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা
প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০২৪, ১৩:৩৯
সূর্য উদয় অস্তের বেলাভূমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা।
নীল আকাশের নিচে সমুদ্রের নির্মল বাতাস। আবার কখনও ভাঙা ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়, তারই মাঝে প্রেম শুধু গড়ে খেলাঘর। এসব মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজারও মানুষ ছুটে আসে, দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী পটুয়াখালীর সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটায়। এ নগরী এখন দেশের জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান। দেশ- বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা প্রতিনিয়ত কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৈন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন এ সৈকতের পারে।
কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা সারাদিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলেও সন্ধা নামার সাথে সাথে অলস সময় পার করতে হয় তাদের। পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদন ব্যাবস্থা না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন কুয়াকাটায় আগত অনেক পর্যটক। তবে পর্যটক উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে খুব দ্রুতই কুয়াকাটায় একাধিক বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠবে।
দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর উপকূলবর্তী এলাকা সাগর কন্যা কুয়াকাটাকে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ২০১০ সালে পৌরসভায় উন্নীত হয়েছে কুয়াকাটা। প্রায় শতাধিক হোটেল মোটেল নির্মাণ হলেও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য কোন ধরনের পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র নির্মিত হয়নি। সকালে সূর্যোদয়,দুপুরে সমুদ্রে গোছল,বিকেলে সৈকতে সূর্যাস্ত দেখার পরে সন্ধা নামার সাথে সাথে অলস সময় পার করতে হয় পর্যটকদের। এ নিয়ে পর্যটকদের রয়েছে নানা আক্ষেপ।
কুয়াকাটা সৈকতে গোসল করতে আসা সাব্বির রহমান অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে বলেন পরিবার নিয়ে সৈকতে গোসল করতে এসেছি কিন্তু আশপাশে নেই কোন চেঞ্জিং রুম,নেই কোন স্থায়ী লকার, বাচ্চাদের নিয়ে সৈকতের পানিতে নামার জন্য নেই কোন টিউব,এমনকি সৈকতের পরিবেশ পরিস্থিতি খুব নোংরা এবং জিও টিউব ও জিও ব্যাগে এলোমেলো অবস্থা। কুয়াকাটার প্রশংসা রয়েছে পুরো দেশ জুড়ে। কিন্তু এভাবে কুয়াকাটা যদি প্রতিনিয়ত তার সৌন্দর্য হারাতে থাকে তাহলে একটা সময় কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। তাই পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী কুয়াকাটাকে ঢেলে সাজানো উচিত বলে মনে করছি আমি।
খুলনা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক সিফাত উল্লাহ বলেন, সারা বাংলাদেশে যে ভাবে কুয়াকাটার নাম- ডাক বা পরিচিতি, সে রকম তেমন পরিপাটি নয় কুয়াকাটা। সারাদিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলেও, সন্ধ্যা নামলে সৈকতে একমাত্র ফিশ ফ্রাই মার্কেট ব্যতীত তেমন কোন বিনোদনের ব্যবস্থা নেই আর কোথাও। দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী হিসেবে এখানে প্রতিনিয়ত সব বয়সের এবং সব শ্রেণীর পর্যটকায় আসছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে পর্যটকদের ইন্টারটেইনমেন্ট এর জন্য শতভাগ কোন ব্যবস্থা নেই কুয়াকাটায়।
এ বিষয় কুয়াকাটা ট্যুর গাইড এসোসিয়েশন এর সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন,কুয়াকাটাকে পর্যটন নগরী ঘোষণা করার পর থেকে পর্যায়ক্রমে উন্নত হচ্ছে এ নগরী। তবে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা অধিকাংশ পর্যটকই লম্বা ছুটি নিয়ে কুয়াকাটায় আসলেও তা কাজে লাগাতে পারছে না। কারন কুয়াকাটায় যে সকল দর্শনীয় স্থানগুলো রয়েছে তা একদিনের মধ্যেই ঘুরে আসা যায়। তাই এরপর আর ওই পর্যটকদের কুয়াকাটা অবস্থান করার মানসিকতা থাকেনা। তবে পর্যাপ্ত বিনোদন কেন্দ্র,পার্ক, ইকো রিসোর্ট,সাংস্কৃতিক অঙ্গণ , সিনেমা হল সহ পর্যটকদের সময় কাটানোর মত ব্যবস্থা থাকলে প্রতিনিয়ত কুয়াকাটায় পর্যটক বাড়তো।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা নিয়ে এ সরকারের একটি বড় মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। সেই প্লান অনুযায়ী খুব দ্রুত কুয়াকাটায় কাজ শুরু হবে। এবং সেই প্লানে একটি পরিপূর্ণ পর্যটন নগরীতে যা যা থাকা দরকার সবই রয়েছে। কুয়াকাটা হবে বাংলাদেশের বুকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী।
এ বিষয় কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন,কুয়াকাটাকে নিয়ে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে।নতুন মাস্টারপ্ল্যানে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্রের প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে।কুয়াকাটাকে নিয়ে সরকারের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের রাইড,ওয়াটার পার্ক,মিউজিয়াম সহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র নির্মিত হবে।
এছাড়া বিশেষ বিশেষ দিনে পর্যটকদের বাড়তি বিনোদনের জন্য স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী রাখাইন সম্প্রদায়ের শিল্পী এবং আঞ্চলিক লোকাল শিল্পীদের নিয়ে সমুদ্র সৈকত এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায় কিনা সে বিষয়ে আমি কথা বলে দেখবো।
যাযাদি/ এস