সৌদির যে ৭টি সুউকে মিলবে উপভোগ্য কেনাকাটার সুযোগ 

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২৪, ১৭:৫৪

যাযাদি ডেস্ক
ছবি-যায়যায়দিন

পর্যটকদের জন্য মধ্য প্রাচ্যের এক অন্যন্য নিদর্শন সৌদি আরব। হাজারো বছরের প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি, আভিজাত্য আর সৌন্দর্যের এক অপূর্ব মিশেল সৌদি আরব। যেখানে বেড়াতে গেলে ভ্রমণপিপাসুয়দের ক্ষুধা মিটে যাবে। পাশাপাশি  সেখানকার প্রাণবন্ত সুউকগুলোতে (আরবের বাজার বা মার্কেটপ্লেস) ঘুরে বেড়ানো যেন সময় আর ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে যাত্রা করার মতো। ঐতিহ্যবাহী এই বাজারগুলোতে ক্রেতারা পাবেন ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আবিষ্কারের আশায় থাকা গুপ্তধনের মিশেল। সৌদির এমন কিছু বিখ্যাত সুউকের কথা চলুন জেনে আসি। 

জেদ্দার সুউক আল আলাউই:    

ইউনেস্কো ঘোষিত ঐতিহ্যবাহী স্থান আল বালাদের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে সুউক আল আলাউই। এখানে আছে কয়েক তলাবিশিষ্ট বেশ কিছু গলি।  স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ও মসলা থেকে শুরু করে হস্তশিল্পের পণ্য ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক কিংবা আধুনিক ইলেকট্রনিক পণ্য ও ভোগ্যপণ্য — সবই এই বাজারে পাওয়া যায়। সৌদির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের পুরোটাই এর মাধ্যমে ফুটে ওঠে। গয়না, চিত্রকর্ম, হাতে তৈরি পাটি কিংবা ঘর সাজানোর জিনিসপত্রের মতো পণ্যগুলো যেকোনো জায়গায়ই যোগ করে আরবীয় অভিজাত্য। হজের সময় ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষে পূর্ণ সুউক আল আলাউই দেখার মতো একটি দৃশ্যে পরিণত হয়। 

যা যা অবশ্যই কেনা উচিত: হস্তশিল্পের পণ্য, ঐতিহ্যবাহী পোশাক, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র ।

ঠিকানা: আল দাহাব স্ট্রিটের পাশে, আল বালাদ, জেদ্দা ।

২। রিয়াদের সুউক আল যাল রিয়াদের প্রাণকেন্দ্রে, আল-মুরাব্বা ঐতিহাসিক প্রাসাদ থেকে প্রায় ৫.৪ কি.মি. দূরে, আল-দিরাহ এলাকায় সুউক আল যাল অবস্থিত। রিয়াদের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই বাজারের অলিগলিতে পাওয়া যায় ১০০ বছরের ইতিহাসের ছাপ। বাজারটিতে ঢুকে বিক্রেতাদের নিলামের শব্দ শোনার পরই পর্যটকদের মনে হবে যেন তারা অতীতের কোনো শহরে এসে উপস্থিত হয়েছেন। 

প্রাচীন বিভিন্ন জিনিসপত্র, দুর্লভ মুদ্রা এবং ও তৈজসপত্রের জন্য এই সুউক বিখ্যাত। বাদ্যযন্ত্র, পুরোনো রেকর্ড প্লেয়ার এবং আরও সব জিনিস দেখে ভ্রমণকারীদের মনে হতে পারে যে, এগুলো প্রাচীন লোক ঐতিহ্যের কোনো জাদুঘর থেকে উঠে এসেছে। আরও আছে ধূপ, আগরউড কিংবা প্রাচ্যের সুগন্ধির দোকান। তাছাড়া, প্রতিদিন আসর নামাজের পরে কয়েক ঘণ্টার জন্য এই বাজারটিতে প্রাচীন জিনিসপত্রের নিলামও হয়ে থাকে।    
         
যা যা অবশ্যই কেনা উচিত: আগর গাছের সুগন্ধি, হাতে তৈরি উটের চামড়ার চটি, আরবীয় কফি পটের (দালাহ) মতো প্রত্নবস্তু 

ঠিকানা: আদ দিরাহ, রিয়াদ ১২৬৩৪


৩। রিয়াদের সুউক আল দিরাহ  

বিখ্যাত আল মাসমাক দুর্গের কাছেই সুউক আল দিরাহ অবস্থিত, যা সুউক আল থুমারি নামেও পরিচিত। ঐতিহ্য আর শিল্পপ্রেমীদের জন্য এই বাজার যেন একটি স্বর্গ। গোলকধাঁধার মতো গলিতে পূর্ণ এই সুউকের স্থানীয় শিল্পকর্ম, সুগন্ধি ও হস্তশিল্পের পণ্য যেন ক্রেতাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। সৌদির সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পরিচায়ক এমন অনন্য পণ্যসম্ভার আর কোথাও খুঁজে পাওয়া কঠিন। রাজপরিবারের উপযুক্ত নকশার গয়নাগুলোও দর্শনার্থীদের নজর কাড়তে বাধ্য।

যা যা অবশ্যই কেনা উচিত: সুগন্ধি, স্থানীয় শিল্পকর্ম, স্বর্ণের গয়না 
ঠিকানা: ৩১৩৮ আবি জাফর আল মনসুর স্ট্রিট, ঘিরনাতা, রিয়াদ 

৪। মদিনার সুউক আল তুমর  

সৌদি হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খেজুর উৎপাদক দেশ। আর উন্নত মানের ও বৈচিত্র্যময় খেজুর, বিশেষত আজওয়া খেজুরের জন্য মদিনা শহর বিখ্যাত। ছোট এই ফল থেকে সুস্বাদু নাস্তা তৈরি করা যায়। ফলটি সৌদি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এমনকি সৌদির জাতীয় প্রতীকেও আছে খেজুর গাছ। খেজুর দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়, কাজেই পরিবার ও বন্ধুদের জন্য এই ফল পর্যটকরা নিজের দেশেও নিয়ে যেতে পারেন। খেজুর দেখা ও কেনার জন্য সৌদির সবচেয়ে নামকরা স্থান হলো মদিনার সুউক আল তুমর। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আজওয়া খেজুর থেকে শুরু করে দুর্লভ ও দামি মেদজুল পর্যন্ত ১৫০ এর বেশি ধরনের খেজুর এখানে পাওয়া যায়। এর মধ্য থেকে সবারই কিছু না কিছু পছন্দ হবেই। সেইসাথে বাড়তি পাওয়া হলো, অনেক বিক্রেতাই কেনার আগে আপনাকে খেজুর খেয়ে দেখারও সুযোগ দেবেন।
 
যা যা অবশ্যই কেনা উচিত: বিভিন্ন ধরনের খেজুর ।

ঠিকানা: মদিনা ৪২৩৭১, সৌদি আরব।
  
৫। জেদ্দার সুউক কাবিল 

এই সুউকটি কাবিল স্ট্রিট, গাবেল স্ট্রিট বা কাবেল ট্রেইল (গুগল ম্যাপস) নামেও পরিচিত। ঐতিহাসিক এই বাজারটি সম্ভবত জেদ্দার সবচেয়ে পুরোনো বাজার। বর্তমানে বিশেষত রমজান মাস ও ঈদের সন্ধ্যায় প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেই সুউক কাবিল পরিচিত। এই সময়ে খাবারের স্টল ও ঐতিহ্যবাহী বিনোদনে এলাকাটি পূর্ণ থাকে। রাস্তাটি ছোট হলেও এখানে না গেলে জেদ্দার পুরোনো শহর আল বালাদ ভ্রমণই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এর অলিগলি পেরিয়ে পৌঁছানো যায় নাসিফ হাউজ, আল মাতবুলি হাউজ এবং আল শফি মসজিদের মতো জাদুঘরগুলোতে। এসব জাদুঘরে পুরোনো জেদ্দার কিছু অংশ দেখতে পাওয়া যায়।   
      
যা যা অবশ্যই কেনা উচিত: স্বর্ণ, সুগন্ধি, আবায়া ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী পোশাক। 
ঠিকানা: জেদ্দার পুরোনো শহর ।

৬। আল হোফুফের সুউক আল কায়সারিয়াহ সুউক আল কায়সারিয়াহতে গেলে পর্যটকদের মনে হবে যে, তারা অনেকটা সময় পিছিয়ে গিয়েছেন। তিনশ বছর পুরোনো আল-হাসায় অবস্থিত এই সুউক দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্যেরই সাক্ষ্য দেয়। পুরোনো পৃথিবীর মায়ায় হারিয়ে যাওয়ার জন্য জায়গাটি চমৎকার। সংস্কারের পর এর গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে সম্মান জানিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে কায়সারিয়াহ সুউক। এখানে পাওয়া যায় হরেক রকম মসলা, ধূপ ও ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের পণ্য। 

যা যা অবশ্যই কেনা উচিত: মসলা, ধূপ ও ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের পণ্য 
ঠিকানা: কিং আবদুল আজিজ, উত্তর আল রাফা, আল হোফুফ   
     
৭। তাইফের সুউক ওকায 
প্রাচীন শহর তাইফের সুউক ওকাযে দেখা যায় সৌদির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিদর্শন। এটি মূলত একটি খোলা বাজার, যা দর্শনার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় বাণিজ্য ও ঐতিহ্যের এক প্রাচীন যুগে। বার্ষিক সুউক ওকায উৎসবের সময় দেখা মেলে কবিতা, গল্প ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার। সুউকটির ১৪ মিলিয়ন বর্গমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে ২০০টিরও বেশি দোকান এবং ১৫০টি বিভিন্ন আকর্ষণ। সাংস্কৃতিক এই উৎসব কোনোভাবেই মিস করা উচিত নয়। 

যা যা অবশ্যই কেনা উচিত: হস্তশিল্পের পণ্য, ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র, মাটির পাত্র, ঐতিহাসিক দলিল 
ঠিকানা: তাইফ শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে, তাইফ 

প্রাথমিক তালিকা হিসেবে এখানে বর্ণিত সুউকগুলো চমৎকার। তবে সৌদির যেকোনো সুউকই আগ্রহী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে। সুতরাং, অভিজ্ঞ ক্রেতা কিংবা কৌতুহলী ভ্রমণকারী — সবার জন্যই সুউক ভ্রমণ হতে পারে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। 


যাযাদি/ এম