শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বে ড়া নো সবুজ শ্রীমঙ্গল

জেনে নিন ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার বাস পাবেন সায়েদাবাদ কিংবা কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে। শ্রীমঙ্গলে নেমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে যেতে পারেন লাউয়াছড়া বনে। যেতে সময় লাগবে আধা ঘণ্টার মতো।
মাহফুজ রহমান
  ২৭ অক্টোবর ২০২০, ১৬:৫৫
ভোর ৫টায় শ্রীমঙ্গল থেকে লাউয়াছড়া যেতে যেতে মনে হলো, পৃথিবীতে সবুজ রঙ বাদে আর কোনো রঙ নেই! আগের রাতে বৃষ্টি হয়েছিল; রাস্তার দুই পাশের গাছের পাতা তার সাক্ষী। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে নেমে আমরা পা রাখলাম লাউয়াছড়া বনের এক চিলতে পথে। দুই পাশের ইয়া লম্বা গাছগুলো দেখতে দেখতে ঘাড়ের ব্যায়ামটা ভালোই হলো। আশ্চর্য রকমের সুনসান নীরবতা! বনের পাখিরা কি দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে? মনের ভেতরে ঘুরপাক খেতে থাকা এমন প্রশ্নের প্রতিবাদ করতেই বুঝি ট্যাঁ ট্যাঁ করে ডেকে উঠল একঝাঁক টিয়ে! পাখির ডাক শুনতে শুনতে আমরা সামনে এগোই, আমাদের গন্তব্য ডাকবাংলো, তার মুখ তো আর দেখি না! অগত্যা একটা টিলার ডান দিক দিয়ে নেমে যাওয়া ঢালু রাস্তায় পা রাখি ‘যা আছে কপালে’ বলে। কিছুদূর এগোতেই প্রাকৃতিক বাধা। রাস্তার বাঁ পাশ থেকে ভেঙে পড়েছে একটা গাছ। কী করা যায়? হঠাৎ কানে এলো যান্ত্রিক শোঁ শোঁ আওয়াজ! গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে দেখা গেল ওই টিলার ওপরে একটা বাসা, শোঁ শোঁ আওয়াজের উৎপত্তি স্থল! নির্ঘাত এসির শব্দ। টিলায় উঠতেই দেখি ছিমছাম এক ডাকবাংলো। সামনে এক চিলতে উঠোন মতো, পুরোটাই ঘাসে ঢাকা। রঙিন সব ফুল যেন হাসছে ফিকফিক করে। চারপাশে বৃক্ষজাতীয় গাছের অতন্দ্র প্রহরা। দলের এক সঙ্গী হঠাৎ চিল চিৎকার দিয়ে উঠল, জোঁক জোঁক! তখন থেকেই এই জোঁক আমাদের মনে ত্রাস হিসেবে বিচরণ করল পরবর্তী একটা দিন। তবে বেশি উৎপাত করল বনের মধ্য দিয়ে ছুটে চলা রেললাইনের ওদিকটায়। কিছুক্ষণ পর পর দলের একেকজন বনের নীরবতা ভেঙে খান খান করল ‘জোঁক জোঁক’ বলে চিৎকারে।
দুপুরের দিকে আমরা ছুটলাম মধুপুর লেক দেখতে। বাহন হলো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। রাস্তার দুই পাশে বুক সমান লেবুগাছ। লেবু ধরে আছে ডালে ডালে। যেন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পারা যায়? অটোরিকশা থেকে নেমে ‘লেবু পর্যবেক্ষণ কমিটির’ দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে এগোতেই দেখা গেল, ঈগল চোখে তাকিয়ে আছেন লেবুবাগানের প্রহরী। সুতরাং ভালো মানুষটি হয়ে আবার অটোরিকশায় চড়ে বসা ছাড়া উপায় রইল না! তবে কেউ চোখ রাঙালো না চা-বাগানের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার পরও! কেউ কেউ তো কবিতা আবৃত্তি করতে লেগে গেল, ‘ওরে সবুজ, ওরে আমার কাঁচা!’
বিশাল বিশাল চা-বাগানের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে মাটির সরু পথ। সুতরাং লেক খুঁজে পেতে কোনো ঝামেলাই হলো না! ঝামেলা হলো লেক দেখে, যাকে বলে ‘মধুর ঝামেলা’! কাকচক্ষু জল বলে একটা কথা আছে, মধুপুর লেকের জল বুঝি তেমনই! তার ওপর সেই জলে ভেসে আছে ফুটি ফুটি করছে এমন পদ্মফুল। একটা টিলার ওপরে উঠে সেই লেক দেখি, টিলা থেকে নেমে লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখি। আশ তো মেটে না! ওদিকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশার অদৃশ্য তাড়া, সময় মাত্র এক ঘণ্টা। এটাকে ‘মধুর ঝামেলা’ না বলে কী-ই বা বলা যায়! অগত্যা লেক পেছনে ফেলে ফিরতি পথ ধরতে হলো। টিলা বেয়ে ওপরে উঠতেই আরেক ভুবন! যেখানে দিগন্তে নীল নীল পাহাড়ের সারি! তার সামনে উঁচুনিচু টিলা আর সবুজ চা-বাগান, সবুজ গাছপালা, কেবলই সবুজ!
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার বাস পাবেন সায়েদাবাদ কিংবা কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে। ভাড়া পড়বে ৪৫০-৫০০ টাকার মধ্যে। চাইলে ট্রেনেও যেতে পারেন। টিকিট কাটতে হবে ২৬০ টাকা দিয়ে। শ্রীমঙ্গলে নেমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে যেতে পারেন লাউয়াছড়া বনে। সেখানে সরকারি ডাকবাংলো আছে। আগে থেকেই বুক করে রাখতে হবে। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলে হোটেলের ব্যবস্থাও আছে। লাউয়াছড়া থেকে মধুপুর লেকে যেতে ওই অটোরিকশার ওপরই নির্ভর করতে পারেন। সময় লাগবে আধা ঘণ্টার মতো। ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে