বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা

ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনায় বাড়তে পারে পণ্যের দাম

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনায় বাড়তে পারে পণ্যের দাম
ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনায় বাড়তে পারে পণ্যের দাম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একের পর এক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একের পর এক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। রেসিপ্রোকেল ট্যারিফসহ (পরস্পর আরোপিত শুল্ক) সর্বশেষ গাড়ি ও ওষুধ আমদানিতেও শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন এ রিপাবলিকান। তবে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কিছু শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়তে পারে। এতে পণ্য ক্রয়ে আরো বেশি ব্যয় করতে হতে পারে মার্কিন ভোক্তাদের। খবর বিবিসি।

গত বুধবার প্রকাশিত ফেডের জানুয়ারির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে ফেডের এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ফেডের নীতিনির্ধারক কমিটির সদস্যরা মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।

কার্যবিবরণীতে আরো বলা হয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য শুল্ক বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যেতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে, যা আখেরে ভোক্তাদের ব্যয় বাড়িয়ে দেবে।

এর আগে জানুয়ারির বৈঠকে সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফেড। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে অসন্তুুষ্টি প্রকাশ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ফেডের আরো দ্রম্নত সুদহার কমানো উচিত ছিল। মুদ্রানীতি বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদ্যমান দ্বিমতের প্রেক্ষাপটে শুল্কের কারণে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সামনে এল।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকে শুল্কের বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাড়তি আগ্রহ দেখিয়ে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একে তার 'অভিধানের প্রিয় শব্দ' বলেও মন্তব্য করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরই শুল্ক বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নও শুরু করেছেন তিনি। তবে এগুলোর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ফেডের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য, অভিবাসন, রাজস্ব ও নিয়ন্ত্রক নীতির সম্ভাব্য পরিবর্তনের ব্যাপ্তি, সময়কাল এবং অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে উচ্চমাত্রার অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

বৈঠকে কয়েকজন সদস্য উলেস্নখ করেছেন, সামনের দিনে দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতির পরিবর্তন ও নতুন সরকারি নীতির কারণে সৃষ্ট সাময়িক মূল্যস্ফীতির পরিবর্তনের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হতে পারে।

কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক নীতির অনিশ্চয়তার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার স্থিতিশীল রাখার অবস্থানে রয়েছে। ফেড জানুয়ারির বৈঠকে নীতি সুদহার ৪ দশমিক ২৫ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে অপরিবর্তিত রেখেছে। গত বছর একাধিকবার সুদহার কমানো হয়।

এর আগে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছিলেন, অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উলেস্নখযোগ্য অনিশ্চয়তা থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার কমানোর ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করতে চায় না। বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, ফেড ২০২৫ সালে হয়তো একবার মাত্র সুদহার কমাতে পারে। তবে না কমানোরও জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায়ও সুদহার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা ঋণগ্রহীতাদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনতে পারে। তবে এর জেরে ট্রাম্প ফেডের স্বাধীনতাকে সম্মান করবেন কিনা, তা নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়। ঐতিহ্যগতভাবে, ফেড দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় মনোযোগ দেয় এবং রাজনীতির বাইরে থাকার চেষ্টা করে। এ প্রসঙ্গে জেরোমি পাওয়েল বলেন, 'তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই সুদহার নির্ধারণ করছে।'

এদিকে হোয়াইট হাউজের নির্দেশনা অনুযায়ী বৈচিত্র্যসংক্রান্ত কর্মসূচি বাতিল করা নিয়ে জেরোম পাওয়েলকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বৈশ্বিক গোষ্ঠী নেটওয়ার্ক ফর গ্রিনিং দ্য ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনা ইঙ্গিত করে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে ফেডকে স্বাধীন রাখতে পাওয়েল কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে