বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

ক্রমাগত দরপতনে হীরার বাজার

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ক্রমাগত দরপতনে হীরার বাজার

পল সাইমনের 'ডায়মন্ড অন দ্য সোলস অব হার শুজ' গানটি অনেকেই শুনেছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, আর বেশিদিন নেই, যখন পল সাইমনের গানের মেয়েটি সাধারণ জুতা খুঁজবে। দ্য গার্ডিয়ানের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বিখ্যাত গানটিকে এভাবে উদ্ধৃত করা হয়। কেননা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি রত্ন হলেও বিশ্ববাজারে ক্রমাগত দরপতন দেখছে হীরা।

প্রতিবেদন অনুসারে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাঝে গত দুই বছরে অস্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক হীরার দাম ২৬ শতাংশ কমেছে। অবশ্য এটিই সবচেয়ে বড় ধাক্কা নয়। কারণ প্রাকৃতিক উৎসের বিপরীতে ল্যাবে উৎপাদিত হীরা ২০২০ সাল থেকে ৭৪ শতাংশ কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এই তো সপ্তাহ কয়েক আগে লন্ডনের হীরা ব্যবসার কেন্দ্রস্থল হাটন গার্ডেনের একজন দোকানি বললেন, সম্ভবত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হীরা আরো সস্তা হয়ে যাবে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডি বিয়ার্স গত ডিসেম্বরে জানিয়েছিল, বছরের শুরুতে তাদের কাছে ২০০ কোটি ডলারের বিশাল মজুদ ছিল এবং বছর শেষে তারা তা বিক্রি করতে পারেনি। তারা উত্তোলন ২০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে এবং চ্যালেঞ্জের মাঝে খনির মালিকানা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যাংলো আমেরিকান।

রত্নপাথর ও গহনা বাণিজ্যের বিশ্লেষক সংস্থা টেনোরিসের ম্যানেজিং পার্টনার এবং হীরার খুচরা মূল্য পর্যবেক্ষক এডাহন গোলানের মতে, এ নাটকীয় দরপতনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। কভিড-১৯-এর পর হীরার চাহিদা হুট করেই বেড়ে যায়। মহামারী-পরবর্তী সময়ে এটি বিলাসবহুল পণ্যে পরিণত হয়। সে চাহিদা পূরণ হওয়ার পরই এ দরপতন শুরু হয়। কিন্তু এ দরপতন এখনো কেন চলমান?

কারণ হিসেবে চীনে চাহিদা হ্রাস, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্থর ভাব ও বিয়ের হার কমে যাওয়াকে বড় করে দেখা হচ্ছে। এর থেকেও বড় কারণ হলো পস্নাজমা চুলিস্নতে তৈরি হীরা। আগে ল্যাবে এ রত্ন তৈরি করতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগলেও এখন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তৈরি করা যায়। বিপরীতে প্রাকৃতিক হীরা তৈরি হতে বিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় লাগে। দামে সহজলভ্য হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ের গহনার বাজারের ৪৫ শতাংশ দখল করে নিয়েছে ল্যাবে তৈরি হীরা, যা ডি বিয়ার্সের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় একটি ধাক্কা।

যুক্তরাষ্ট্রের দুই হাজারেরও বেশি দোকান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে টেনোরিস বলছে, ২০২২ সালের মে মাসে এক ক্যারেট প্রাকৃতিক হীরার গড় মূল্য ৬ হাজার ৮১৯ ডলারে পৌঁছায়। গত ডিসেম্বরে তা ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯৯৭ ডলারে নামে। অন্যদিকে এক ক্যারেট কৃত্রিম হীরার দাম ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৩ হাজার ৪১০ ডলার, যা ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ডিসেম্বরে ৮৯২ ডলারে নেমে এসেছে।

ল্যাবে উৎপাদিত হীরা অনেক বেশি উজ্জ্বল ও আকারে বড় হয়। ফলে যে কেউ বড় হীরা সাশ্রয়ী দামে কিনতে পারছেন বলে জানান হাটন গার্ডেনের প্রাচীনতম জুয়েলার্স ই কাটজ অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক রবার্ট উইলিস। রাফায়েল জুয়েলার্সের জিওফ্রে ফ্যারো বলেন, 'ল্যাবে তৈরি শুনতে আকর্ষণীয় লাগলেও এগুলোর কোনো ঐতিহ্য নেই। সহজেই বানানো যায়। তাই দাম আরো কমতে থাকবে। ল্যাবে তৈরি হীরার কারণে হীরার দাম আরো পড়ে গেছে। অনেকে ভাবেন বড় হলেই সেটা বিশেষ কিছু। আসলে তা নয়। আসল হলো গুণগত মান।'

জুয়েলারির ইতিহাসবিদ জ্যাক ওগডেন বলেন, '?মধ্যযুগ থেকে হীরা মূলত ভারত থেকে আসত। কিছু বোর্নিও থেকেও আসত। এরপর ব্রাজিলে হীরার খনি আবিষ্কৃত হয়। ১৭২৫ সালে লন্ডনের সংবাদপত্রে এ আবিষ্কারের ঘোষণা করা হয় এবং আট বছরের মধ্যে অপরিশোধিত হীরার দাম দুই-তৃতীয়াংশ কমে যায়। ১৭৫০ সাল নাগাদ পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। ১৮৬৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় হীরা আবিষ্কারের পরও নতুন ধাক্কা আসে। তবে এরপর সরবরাহের সঙ্গে পালস্না দিয়ে হীরার চাহিদা ও দাম বাড়তে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে