২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় ও মুনাফায় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখেছে গুগলের প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট। ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় ও মুনাফায় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখেছে গুগলের প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির গত বুধবার প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। পূর্ণ বছরে কোম্পানির মোট আয় বার্ষিক হিসাবে ১৪ শতাংশ বেড়ে ৩৫ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। খবর আনাদোলু।
গুগলের তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে অ্যালফাবেটের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেড়ে ৯ হাজার ৬৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। একই সময় কোম্পানির নিট আয়ও বেড়েছে ২৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে কোম্পানির নিট আয় ৩৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি ডলারে। গত প্রান্তিকে অ্যালফাবেটের আয় প্রত্যাশার চেয়ে কম থাকলেও মুনাফা সংশ্লিষ্টদের অনুমানের চেয়ে বেশি।
গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই এ বিষয়ে বলেন, 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে আমাদের নেতৃত্ব ও ব্যবসার ধারাবাহিক অগ্রগতির কারণে চতুর্থ প্রান্তিক ছিল শক্তিশালী। আমরা আগের চেয়ে দ্রম্নত পণ্য ও মডেল তৈরি, পরীক্ষা ও চালু করছি এবং কম্পিউটিং ও দক্ষতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি করছি।'
প্রতিবেদন আরো বলছে, চতুর্থ প্রান্তিকে গুগল সার্ভিসেস বিভাগের আয় ১০ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। গুগল সার্চ, ইউটিউব বিজ্ঞাপন ও গুগল নেটওয়ার্ক এ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। গুগলের মতে, সার্ভিসেস বিভাগের প্রবৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা ছিল গুগল সার্চ ও ইউটিউব বিজ্ঞাপনের শক্তিশালী পারফরম্যান্স। ইউটিউব বিজ্ঞাপন একাই ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি আয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত গুগল একটি বহুজাতিক ইন্টারনেট পরিষেবা কোম্পানি। প্রথমে এটি 'পেজর?্যাংক' অ্যালগরিদমভিত্তিক ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে তৈরি হয়েছিল। তবে এখন গুগল ডেস্কটপ, মোবাইল ও অনলাইন পস্নাটফর্মে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা দিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে একটি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। গুগল সার্চ এখনো কোম্পানির প্রধান পণ্য, যার সঙ্গে বিজ্ঞাপন পরিষেবা, যোগাযোগ ও প্রকাশনা টুল, ডেভেলপমেন্ট ও পরিসংখ্যানমূলক সরঞ্জাম এবং ম্যাপ সম্পর্কিত পণ্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
স্ট্যাটকাউন্টারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, সার্চ ইঞ্জিনের বাজারে ২০১৪ সালের পর গুগলের হিস্যা ৯০ শতাংশের নিচে নেমেছে খুব কম সময়। তবে ১০ বছরে প্রথমবারের মতো ২০২৪ সালের শেষ তিনটি মাসে হিস্যা নেমেছে ৯০ শতাংশের নিচে। তবু গুগল এখনো বাজারের বিশাল একটি অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
গত বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ অনুসন্ধান পরিচালিত হয় গুগলের মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রায় নয়জন তথ্য অনুসন্ধানের জন্য গুগল ব্যবহার করে। কোম্পানিটি ডেস্কটপ, ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনসহ সব ডিভাইসেও শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত সার্চ ইন্ডাস্ট্রিতে আধিপত্য ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গুগল মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড, ক্রোম ওএস, গুগল টিভি ও গুগল ক্রোম ব্রাউজারের মতো ডেস্কটপ ও মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে। জার্মানিভিত্তিক স্ট্যাটিস্টার তথ্যানুযায়ী, সম্প্রতি টেক জায়ান্টটি হার্ডওয়্যার তৈরিতেও মনোযোগ দিচ্ছে। এর মধ্যে নেক্সাস সিরিজের মোবাইল ডিভাইস, স্মার্ট হোম ডিভাইস ও চালকবিহীন গাড়িও রয়েছে। গুগলের পণ্য ও পরিষেবার পরিধি অনেক বিস্তৃত হলেও অনলাইন বিজ্ঞাপনই এখনো তাদের আয়ের প্রধান উৎস। উলেস্নখ্য, গুগল বর্তমানে বাজারে একচেটিয়া ব্যবসার অভিযোগে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা মোকাবেলা করছে।