রাজনীতিতে আসার আগে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০০৪ সালে জনপ্রিয় রিয়ালিটি টিভি শো 'দি অ্যাপ্রেন্টিসে' ব্যবসায়িক দক্ষতা দেখিয়ে তিনি জনপ্রিয়তা পান। পরিবারের সঙ্গে মিলে এ রিপাবলিকানের অধীনে রয়েছে বৈচিত্র্যময় এক ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য, যা কিনা দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মিম কয়েনের মতো ডিজিটাল সম্পদের মাধ্যমে আরো ফুলেফেঁপে উঠেছে। বিলাসবহুল হোটেল ও গলফ কোর্সের মতো রিয়েল এস্টেটের পাশাপাশি পানীয় ও ফ্যাশন খাতে যুক্ত ট্রাম্প পরিবার। এছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা ব্র্যান্ড ব্যবহার করে আসছে।
সম্প্রতি ফক্স বিজনেসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের চিত্র। সেখানে বলা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পরিবারের ব্যবসায়িক পরিচিতি বহন করে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে ট্রাম্পের দুই ছেলে এরিক ট্রাম্প ও ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র এটি পরিচালনা করছেন। ট্রাম্প অর্গানাইজেশন বহু মূল্যবান হোটেল, গলফ কোর্স, বাণিজ্যিক ভবন ও অন্যান্য রিয়েল এস্টেটের মালিকানা ও ব্যবসা দেখভাল করে। ট্রাম্পের নাম ব্যবহারের লাইসেন্সও দেয় এ সংস্থা। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ও সম্পদ একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে ছেলেরা পরিচালনা করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে একটি মিম কয়েন গত ১৭ জানুয়ারি উন্মুক্ত হয়। এ ক্রিপ্টোকারেন্সিতে সোলানা বস্নকচেইনে লেনদেন ও ট্র্যাক করা যায়। বাজারে আসতেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দাম চড়ে এ ডিজিটাল সম্পদের। মিম কয়েনটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তিন বছরে মোট ১০০ কোটি কয়েন ছাড়া হবে। এছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়াও নিজস্ব মিম কয়েন চালু করেছেন। এর বাজারমূল্য কয়েক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ফেসবুক-টুইটারের মতো প্রতিষ্ঠিত সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ট্রাম্পের হাতিয়ার হয়েছিল নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রম্নথ সোশ্যাল, যা কিনা ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রম্নপের অংশ। ডিসেম্বরে ট্রাম্প কোম্পানির ১১ কোটি ৪৭ লাখ শেয়ার ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প রিভোকেবল ট্রাস্টে স্থানান্তর করেন, যেখানে তার ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ট্রাস্টির ভূমিকা পালন করছেন। কোম্পানিটি গত বছর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে এর বাজারমূল্য ৭০০ কোটি ডলারের বেশি।
এরিক ট্রাম্পের স্ত্রী লারা ট্রাম্প গত নভেম্বরে নিজস্ব অ্যাক্টিভওয়্যার 'এলটি ব্র্যান্ড বাই লারা ট্রাম্প' উন্মুক্ত করেন। এ সংগ্রহে লেগিংস, স্পোর্টস ব্রা, শার্ট ও আরো অনেক কিছু রয়েছে। ইনস্টাগ্রামে তিনি জানান, ?এ ব্র্যান্ড তার জীবনধারা প্রতিফলিত করে, যেখানে তিনি একজন অ্যাথলিট, স্ত্রী, মা ও উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত।
ট্রাম্প পরিবারের আরেকটি আলোচিত উদ্যোগ হলো ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল (ডবিস্নউএলএফ)। এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত আর্থিক পস্নাটফর্ম। ট্রাম্প ও তার পরিবার সরাসরি ডবিস্নউএলএফ পরিচালনায় জড়িত নয়, তবে এরিক ট্রাম্প এর বোর্ডে রয়েছেন। পরিবারটি ২ হাজার ২৫০ কোটি ডবিস্নউএলএফআই টোকেনের মালিক। খরচ বাদ দিয়ে এ টোকেন বিক্রি থেকে ৭৫ শতাংশ লাভ হয়। ফক্স বিজনেস অনুসারে, ট্রাম্প ও তার দুই বড় ছেলে এটি উন্মুক্ত হওয়ার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডবিস্নউএলএফ প্রচার করেছিলেন।
ট্রাম্প ওয়াইনারি পরিচালনা করেন এরিক ট্রাম্প, যা ভার্জিনিয়ার শার্লোটসভিলে ১ হাজার ৩০০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত। এটি এরিক ট্রাম্প ওয়াইন ম্যানুফ্যাকচারিং এলএলসির মালিকানাধীন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ ওয়াইনারি রেড, হোয়াইট, স্পার্কলিং, রোজসহ বিভিন্ন ধরনের ওয়াইন তৈরি করে। গত বছর এটি সিডার তৈরি শুরু করে। পাশাপাশি ট্রাম্পের অভিষেকের দিন ২৪৫ ডলারের 'প্রেসিডেনশিয়াল রিজার্ভ' স্পার্কলিং ওয়াইন উন্মুক্ত করে। ওয়াইনটির মাত্র ৪ হাজার ৫৪৭ কেস তৈরি হয়েছিল।