বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের তীব্র সংকট

রমজানের আগেই বাড়তে পারে দাম

প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর বাজারে কোথাও মিলছে না সয়াবিন তেল। দু-একটি দোকান ও সুপারশপে ৫ লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও উধাও এক দুই ও তিন লিটারের বোতল। ফলে ক্রেতারা বাধ্য হয়ে নিম্নমানের পাম তেল কিনছেন। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজার ঘুরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের এ সংকট দেখা গেছে। বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ কমিয়েছে। এর আগে গত ডিসেম্বরেও সরবরাহ কমিয়ে এক দফা দাম (লিটারপ্রতি ৮ টাকা) বাড়িয়েছিল কোম্পানিগুলো। আসন্ন রমজানের আগে আরও এক দফা দাম বাড়ানো হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। এখন রাজধানীর বেশিরভাগ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না বললেই চলে। আর কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও সেগুলোতে গায়ে লেখা দামের চেয়ে ৫ থেকে ১৫ টাকা বেশি রাখছেন বিক্রেতারা। রামপুরা ভাই ভাই স্টোরের জামাল হোসেন বলেন, কোম্পানিগুলো ঠিকঠাক মতো তেল দিচ্ছে না। মাঝে মাঝে দু-এক কার্টন তেল দিচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এদিকে, বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের তীব্র সংকটে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। ক্রেতা ধরতে অনেক বিক্রেতা এখন খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি শুরু করেছেন। অনেকে আবার তেল রাখছেন শুধু নিয়মিত ক্রেতাদের জন্য। মালিবাগ বাজারে কোম্পানির একজন ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী রমজানের আগে তেলের দাম আরেক দফা বাড়াতে চায় কোম্পানিগুলো। ফলে তারা যেমন বাজারে সরবরাহ কমিয়েছে, আবার যেটুকু তেল বাজারে আসছে সেটাও পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মজুত করছেন। আসন্ন রমজানে তেলের দাম বাড়বে, এটি এখন 'ওপেন সিক্রেট'। তেল সরবরাহকারী একাধিক কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোম্পানির ওই ডিলার আরও বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। যে কারণে তেল বিক্রি করে কোম্পানিগুলোর পোষাচ্ছে না। তারা দাম আরও বাড়াতে চায়। এদিকে, গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে প্রতি কেজি সয়াবিন তেলে ৮ টাকা বাড়িয়েছিল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। এছাড়া নতুন সরকার তেল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে। এতে প্রতি কেজি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ককর ১০ থেকে ১১ টাকা কমেছে। এরপরও আমদানি বাড়েনি; বরং বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট তৈরি করেছে কোম্পানিগুলো। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সয়াবিনের এক, দুই ও পাঁচ লিটারের বোতলের সরবরাহ একেবারে নেই বললেই চলে। পরিবেশকদের কাছে বারবার তাগাদা দিয়েও তেল পাচ্ছেন না তারা। কোম্পানিগুলো কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ এসব বিক্রেতার। এদিকে, বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাড়তি চালের দাম এখনো কমেনি। বরং দু-এক জাতের চালে দাম আরও বাড়ছে। ৬২ টাকার কমে মোটা চাল এবং ৮০ টাকার কমে কোনো সরু চাল মিলছে না। তবে স্বস্তি রয়েছে ডিম ও সবজির দামে। বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ অনেক; এতে কমেছে দাম। বর্তমানে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০-২৫ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ২০-৩০ টাকা, শালগম ৩০-৪০ টাকা, ধরনভেদে শিম ৩০-৫০ টাকা ও টমেটো ২০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেগুন ৫০-৫০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা ও লাউ ২০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতারা জানান, মৌসুমের নতুন দেশি কাঁচা মরিচ বাজারে এসেছে। তাতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। আলুর কেজি ২০-৩০ টাকা ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে, ফার্মে মুরগির ডিমের দামও কম রয়েছে। প্রতি ডজন ১৩৫-১৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। হঠাৎ অস্থির চালের বাজার:এদিকে, চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠছে চালের বাজার। পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারেই প্রতি বস্তা (৫০ কেজি ওজনের) চালে ১৫ দিনের ব্যবধানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর শেষ সপ্তাহে বস্তাপ্রতি কমেছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগামী বৈশাখে বোরো মৌসুমের নতুন চাল বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম ওঠানামায় থাকতে পারে। চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত মজুতদারি বাজারে সংকট তৈরি করছে। এ নিয়ে সরকারের তেমন নজরদারিও নেই। বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ তাদের। চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকার মুদি দোকানি দেলোয়ার হোসেন। কথা হলে তিনি জানান, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে চালের দাম অনেক বেড়েছে। রহমান কাটারি (কাটারিভোগ) এখন (বৃহস্পতিবার) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ৮৫ টাকা। মিনিকেট আতপ ছিল ৭০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা। ৮৫ টাকার সেদ্ধ নাজিরশাইলের দাম উঠেছে ৯০ টাকায়। এসময়ে জিরাশাইল সেদ্ধ চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে এ চাল ছিল প্রতি কেজি ৭৫ টাকা। এখন বিক্রি করছি ৮২ টাকায়। মিনিকেট সেদ্ধ ছিল ৬০ টাকা। এখন প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় উঠেছে, জানান এই খুচরা ব্যবসায়ী। খুচরা বাজারে বাড়লেও পাইকারিতে চালের দাম কমছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। চট্টগ্রাম রাইচ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উলস্নাহ। তিনি নগরীর চাক্তাই এলাকার মেসার্স রফিক উলস্নাহ রাইচ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী। এবার সরকারের অনুমতি নিয়ে চালও আমদানি করেছেন তিনি।