'দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে একসঙ্গে কাজ করতে হবে'

প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান
দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে দ্রব্যমূল্য। আওয়ামী স্বৈরাচার ও লুটেরাদের সরকার পতন হলেও বাজারে নিত্যপণ্য তথা খাদ্যসামগ্রীর দাম লাগামহীন বেড়েই চলেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে দাম নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইউরোদেশ গ্রম্নপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান। প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে- ১. গ্রামের উৎপাদনস্থল থেকে যাবতীয় খাদ্যপণ্য শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ক্রেতাদের কাছে সরাসরি বিক্রির ব্যবস্থার জন্য সরকারি কৃষি ও খাদ্যপণ্য বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ, ২. মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি ও সিন্ডিকেট বিলুপ্তকরণ, ৩. খাদ্যপণ্য সরবরাহে বিশেষ ট্রেন চালুকরণ, ৪. যেসব জায়গায় ট্রেন যোগাযোগ নেই, সেখানে খাদ্যপণ্য পরিবহণ ও সরবরাহে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ট্রাক চালু করতে হবে, এতে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে, ৫. দেশের সকল আড়ৎগুলো শুধু খাদ্যপণ্য সরবরাহ ও সাময়িক সংরক্ষণ করতে পারবে, সেজন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া পাবে, কোনো আড়ৎদার খাদ্যপণ্য ক্রয়-বিক্রয় কিংবা মজুত করতে পারবে না। ৬. সরকারি খাদ্যগুদাম, সাইলো, কোল্ড স্টোরেজ ও বিশেষ হিমাগার ব্যতীত খাদ্যপণ্য মজুত বন্ধ করা, ৭. কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের খাবারের জন্য অথবা শিল্পপ্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব উৎপাদনের জন্য খাদ্যপণ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা মজুত করতে পারবে। তবে কোনো অবস্থাতেই এসব খাদ্যপণ্য উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতে পারবে না। ৮. দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন, জেল ও জরিমানার বিধান রেখে খাদ্যপণ্যের বাজার তদারকিকরণের জন্য আইন প্রণয়ন এবং খাদ্যপণ্য সঠিক সরবরাহে বাধাপ্রদান, চাঁদাবাজি বা উচ্চ মূল্যে বিক্রি, ভেজাল মেশানো, কীটনাশক বা ফরমালিন প্রয়োগ ইত্যাদি কাজের জন্য অন-স্পট শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ, ৯. সারাদেশে পাঁচ কোটি গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের মাঝে স্বল্প ও ভর্তুকিমূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে স্মার্টকার্ড প্রদানের লক্ষে একটি সেন্ট্রাল ডাটাবেজ তৈরি করা। ১০. বিগত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার কর্তৃক প্রদত্ত টিসিবির সকল ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল করে সৎযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে টিসিবির ডিলারশিপ লাইসেন্স অনুমোদন প্রদান, ১১. ট্রাকের মাধ্যমে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিসিবির খাদ্য পণ্য প্রদানের ব্যবস্থা বাতিলকরণ, ১২. প্রতিটি গ্রাম, মহলস্না-পাড়া ও শহরে টিসিবির ডিলার কর্তৃক দোকানের মাধ্যমে ভর্তুকির খাদ্য পণ্য টিসিবির স্মার্ট কার্ডধারীদের মাঝে প্রতি মাসের খাবারের জন্য সরবরাহের ব্যবস্থা করণ, ১৩. বাল্ক খাদ্য পণ্য আমদানির জন্য সকল আবেদনকারীদের আমদানি লাইসেন্স প্রদান এবং আমদানির জন্য বিগত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার কর্তৃক সৃষ্ট সিন্ডিকেট বিলুপ্তিকরণ, ১৪. আমদানি নীতি ২০২৪-২০২৯ প্রণয়ন, পুরানো নীতি আধুনিকীকরণ, এলসি ব্যতীত ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য বছরে পাঁচ লাখ ডলারের সীমা তুলে দেওয়া। ১৫. খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য সি পোর্ট, ল্যান্ড পোর্ট বা এয়ার পোর্ট কাস্টমস হাউজে পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপন ও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তা স্বল্পসময়ের মধ্যে সম্পন্নকরণ, এ সংক্রান্ত হয়রানি ও অবৈধ লেনদেন বন্ধকরণ, ১৬. বন, রেল ও সরকারি পতিত অনাবাদী জমি ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে দীর্ঘ মিয়াদি লিজ প্রদান, সোলার সেচ ব্যবস্থা চালুকরণ, খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য কৃষকদের পানি ও জৈব সার বিনামূল্যে সরবরাহকরণ, স্বল্প বা ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য শস্যের বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ, ১৭. চাল, ডাল, গম ও ভুট্টা ইত্যাদি খাদ্যশস্য বীজ রোপণ থেকে শুরু করে মাড়াই ও ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত আধুনিক কৃষি মেশিনারি ব্যবহারকরণের জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি অফিসে প্রদান এবং তা স্বল্প মূল্যে ব্যবহারের ব্যবস্থা গ্রহণ, ১৮. খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে নগদ পাঁচ শতাংশে এলসি খোলার নির্দেশ প্রদান এবং বাকি ৯৫ শতাংশ ডকুমেন্ট সংগ্রহের সময় নগদ প্রদান অথবা সম্পত্তি বন্ধকীকরণের মাধ্যমে ৯০ দিনের ট্রাস্ট রিসিপ্ট প্রদান, ১৯. কোন খাদ্যপণ্য বাজারে ঘাটতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আমদানি করার উদ্যোগ নিতে হবে, ২০. খাদ্যপণ্য আমদানির সময় কাস্টমস অফিসে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে একজন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়ে স্বল্পসময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করে- তা খালাসের ব্যবস্থাকরণ, ২১. কৃষকদের উৎপাদন ও খাদ্যপণ্য সরবরাহে সহায়তাকরণের জন্য ঋণ প্রদান কৃষি ব্যাংক এর একমাত্র নীতি হওয়া উচিত, এ লক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নীতিমালা প্রণয়ন ও জিরো টলারেন্স হওয়া দরকার, ২২. কৃষি ও খাদ্যপণ্য এক্সচেঞ্জ গঠনকরণ, একটি সেন্ট্রাল ডাটাবেজ এবং লাইভ ডাটা স্ট্রিমিংসহ প্রতিটি পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্রে বড় স্ক্রিনের মাধ্যমে প্রতিটি কৃষি ও খাদ্যপণ্যের মূল্য প্রদর্শন, ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকার কর্তৃক একজন কৃষি অফিসার ও একজন ভোক্তা অফিসার প্রতিদিন প্রতিটি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করবে এবং এর সঙ্গে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পরিবহণ খরচ যোগ হবে।