শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
নতুন নীতিমালা

লাইটার জাহাজে পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কা

গত ১৫ অক্টোবর নৌপরিবহণ অধিদপ্তর থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত লাইটার জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহে পণ্য পরিবহণ নীতিমালা, ২০২৪ প্রণয়ন করায় এ ব্যয় আবারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
লাইটার জাহাজে পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কা

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটার জাহাজযোগে পণ্য পরিবহণে ২০২৩ সালে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল সিরিয়াল প্রথা। এর ফলে বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য দেশের ৩৪টি নৌরুটে পরিবহণে আগের তুলনায় অন্তত ২০ শতাংশ পণ্য পরিবহণ ব্যয় কমে এসেছিল।

কিন্তু গত ১৫ অক্টোবর নৌপরিবহণ অধিদপ্তর থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত লাইটার জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহে পণ্য পরিবহণ নীতিমালা, ২০২৪ প্রণয়ন করায় এ ব্যয় আবারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জাহাজ মালিক, আমদানিকারক ও চট্টগ্রামভিত্তিক একটি জাহাজ মালিক সংগঠন বলছে, এতদিন জাহাজের ভাড়া নির্ধারণ হতো আমদানিকারক ও জাহাজ মালিকদের দরকষাকষির ভিত্তিতে।

নতুন সেল গঠন করায় এখন আর সেই সুযোগ থাকছে না। এতে বেড়ে যাবে পণ্য পরিবহণ ব্যয়। এর প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তারা।

নতুন নীতিমালা অনুসারে, এখন থেকে লাইটার জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল (বিডবিস্নউটিসিসি)-এর অধীনে পরিচালিত হবে।

লাইটার জাহাজ বরাদ্দের জন্য লাইটার জাহাজের মালিক, আমদানি-রপ্তানিকারক, পণ্যের এজেন্ট ও লোকাল এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয়কারক হিসেবে কাজ করবে ডবিস্নউটিসিসি।

বিডবিস্নউটিসিসির কার্যক্রম মনিটরিং করতে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি থাকবেন নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার প্রতিনিধি। সদস্য সচিব থাকবেন নৌপরিবহণ অধিদপ্তররের প্রধান প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক।

চট্টগ্রামের লাইটার জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান এএনজে ট্রেডিংয়ের ম্যানেজিং পার্টনার শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পণ্য পরিবহণ নীতিমালা প্রণীত হলেও পণ্যের ভাড়ার তালিকা নির্ধারণ করা হয়নি। সব ধরনের পণ্যের আমদানিকারক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ভাড়া নির্ধারণ করা উচিত। আগে যখন ডবিস্নউটিসি ছিল, তখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় গমবাহী পণ্যের টনপ্রতি ভাড়া ছিল ৬৬২ টাকা। সেল ভেঙে যাওয়ায় এখন আমদানিকারক ও জাহাজ মালিকের পছন্দ এবং দরকষাকষির ভিত্তিতে জাহাজ ভাড়া নির্ধারিত হচ্ছে।

টনপ্রতি ভাড়া কমেছে প্রায় ১৫০ টাকা। এতে আমদানিকারক এবং সাধারণ জাহাজ মালিকরা খুশি। নতুন সেল গঠন করে আবারও একই সিন্ডিকেটের হাতে পণ্য পরিবহণ খাত তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে, বলেও জানান তিনি।

এর আগে ২০১৩ সালে সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের নিবন্ধিত লাইটার জাহাজযোগে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে পণ্য পরিবহণ-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ওই নীতিমালার আলোকে তিনটি লাইটার জাহাজ মালিক সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিভোয়া), কোস্টাল ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (কোয়াব) ও ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক)-এর সমন্বয়ে ডবিস্নউটিসি গঠন করা হয়।

২০২২ সালের ২০ জুন বিচারপতি জেবিএইচ হাসান ও ফাতেমা নাজিব একই ধরনের একটি রিট পিটিশনে ২০১৩ নীতিমালা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ওই রায়ে ডবিস্নউটিসির সব কর্মকান্ডের ওপর হাইকোর্টের একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য লাইটার জাহাজে খালাস করা হয়। এসব পণ্য দেশের ৩৪টি নৌরুটে পরিবহণ করে প্রায় ১ হাজার ৫০০ লাইটার জাহাজ। এর মধ্যে ডবিস্নউসিটির নিয়ন্ত্রণে ছিল প্রায় ১ হাজার ৩০০টি জাহাজ। এছাড়া বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ৪০০টি জাহাজ বন্দর থেকে পণ্য পরিবহণে যুক্ত ছিল।

আইভোয়াকের মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ বলেন, লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহণে মুখ্য ভূমিকা পণ্যের আমদানিকারকদের। এই স্টেকহোল্ডারের কোনো মতামত ছাড়া এভাবে আগের মতো নীতিমালা প্রণয়নের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

তিনি বলেন, শিল্প মালিকদের পণ্য নিজেদের জাহাজে পরিবহণের ক্ষেত্রে নীতিমালায় উলেস্নখ করা হয়েছে, কারখানার নিজের নামে জাহাজ হতে হবে। বেশিরভাগ শিল্প গ্রম্নপ নিজেদের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও মালিকপক্ষের স্বজনদের নামে জাহাজ কিনেছে। এছাড়া বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানি তাদের আমদানি করা পণ্য পরিবহণে জাহাজ চার্টার করে। নতুন এই নীতিমালায় চার্টার করা জাহাজে নয়, নতুন সেলের সিরিয়াল অনুযায়ী ব্যক্তিমালিকানায় থাকা জাহাজ দিয়ে পণ্য পরিবহণ করতে হবে। এতে একদিকে যেমন পণ্য পরিবহণ ব্যয় বাড়বে, অন্যদিকে সঠিক সময়ে পণ্য পরিবহণ ব্যাহত হবে। পণ্য পরিবহণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডবিস্নউটিসি গঠিত হয়েছিল বন্দরের বহির্নোঙর থেকে পণ্য পরিবহণ সমন্বয় করতে। কিন্তু তারা নৌরুটে পণ্য পরিবহণ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। এই সেল টনপ্রতি ২০ টাকা কমিশন নিত। নিজেদের ইচ্ছামাফিক জাহাজ বরাদ্দ দিত। পণ্য পরিবহণে বিলম্ব হলে দ্বিগুণ ভাড়া চাপিয়ে দিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে