তারল্য সংকট মেটাতে ৬ ব্যাংক পেল ১৬শ' কোটি টাকা

এক হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে তুলনামূলক সবল তিন ব্যাংক। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক, গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে ওই তহবিল জুগিয়েছে সোনালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ৬ দুর্বল ব্যাংককে মোট ১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে তুলনামূলক সবল তিন ব্যাংক। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন ব্যাংক, গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে ওই তহবিল জুগিয়েছে সোনালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর তহবিল স্থানান্তর করা হয়। এর বাইরে ইসলামী ব্যাংকও তারল্য সহায়তা চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি মুখপাত্র ও পরিচালক শাহরিয়ার সিদ্দিক বলেন, 'আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব দুর্বল ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আবেদন যাচাইবাছাই করে সামনে আরও ব্যাংককে এ সহায়তা দেওয়া হবে।' ক্ষমতার পালাবদলের পর ব্যাংক খাতের অনিয়মের চিত্র সামনে আসে। বিশেষ করে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রম্নপ এস আলম ইসলামী ধারার এসব ব্যাংক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। যে ব্যাংকগুলো তারল্য সহায়তা পাচ্ছে সবগুলোতে ইতোমধ্যে প্রশাসক বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি ৬টি ব্যাংক এস আলম গ্রম্নপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, 'বেশ কিছু ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। ইতোমধ্যে দশটি সবল ব্যাংক এসব দুর্বল ব্যাংককে নগদ অর্থ দিতে রাজিও হয়েছে। তাতে আশা করা যায় গ্রাহকদের খালি হাতে ব্যাংক থেকে ফিরে যেতে হবে না।' ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদলের পর আর্থিক খাতের নেতৃত্বেও পবির্তন আসে। শুরুতে ইসলামী ব্যাংককে 'এস আলম মুক্ত' করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন কর্মীরা। পরে অন্য ব্যাংকগুলোতেও আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ ডেপুটি গভর্নর, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও পলিসি উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে আগস্টেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসলামী ধারার শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে অবৈধভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে শুরু হয় তারল্য সংকট। পরিস্থিতি এমন হয় যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা ২০ হাজার টাকাই তুলতে পারছিলেন না। এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয় গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংকেও। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকও তারল্য সংকটে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে গভর্নর সবল ব্যাংক থেকে দুর্বল ব্যাংকের নগদ টাকা ঋণ নেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেন। এরপর সবল ১০ ব্যাংক তারল্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সম্মতি দেয়। কে কাকে কত দিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে ৩৭৫ কোটি টাকা দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক মোট ৩০০ কোটি টাকা পেয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ২০০ কোটি এবং ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংক ১৫০ কোটি টাকা পেয়েছে সোনালী ব্যাংক থেকে। গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক পেয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ কোটি টাকা দিয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক দিয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংক পেয়েছে ৩২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২২০ কোটি টাকা দিয়েছে সোনালী ব্যাংক; ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে ডাচ্‌-বাংলা। এক্সিম ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা পেয়েছে, পুরোটাই দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। সবল-দুর্বল ব্যাংকের চুক্তি ইস্টার্ন, সিটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সোনালী, ডাচ্‌-বাংলা ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক- এই 'সবল' ব্যাংকগুলো দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মোট ৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক নেবে ৭৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৫০ কোটি, সোনালী ব্যাংক ৪৫০ কোটি, ডাচ্‌-বাংলা ৫০ কোটি টাকা নেওয়ার জন্য তারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ইসলামী ব্যাংককে মোট ৮০০ কোটি টাকা দেবে তিন ব্যাংক। এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৫০ কোটি এবং সোনালী ব্যাংক ৭০০ কোটি টাকার জোগান দেবে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৯০০ কোটি টাকা নেবে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক দেবে ৩০০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক দেবে ৫০ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক দেবে ৪৫০ কোটি; আর ডাচ্‌-বাংলা দেবে ১০০ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংক ১৫০ কোটি টাকা নেবে সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে। গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক মোট ২৪৫ কোটি টাকা ঋণ নেবে। এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২০ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা দেবে। ন্যাশনাল ব্যাংক ৮২০ কোটি টাকা ঋণ নেবে পাঁচ ব্যাংক থেকে। চুক্তি অনুযায়ী সিটি ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক ৪৫০ কোটি টাকা, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০ কোটি টাকা দেবে। এক্সিম ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকা দেবে সোনালী ব্যাংক।