শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
ডিসিসিআই আলোচনা সভায় বক্তারা

এসএমই খাতের উন্নয়নে ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার দাবি

মাইক্রোক্রেডিট ফাইন্যান্সিং ইন্সটিটিউট'গুলোর মাধ্যমে দেশের মোট এসএমইর ৭০ শতাংশই ঋণ পেয়ে থাকে, যার ৯০ ভাগই নারী উদ্যোক্তা
অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
  ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
এসএমই খাতের উন্নয়নে ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার দাবি

এসএমই খাতের উন্নয়নে সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত 'এসএমই নীতিমালা ২০১৯-এর সংস্কার : প্রেক্ষিত টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের এসএমই উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি করছেন ঠিকই, তবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজনে এ খাতের ভূমিকা এখনো আশানূরূপ নয়, এক্ষেত্রে অর্থায়ন প্রাপ্তির জটিলতা, দক্ষতার অভাব, রাজস্ব নীতিমালা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে দেশের তরুণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে বিশেষ করে সেবাখাতের বিকাশ একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। ডিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, সিএমএসএমই খাতের সার্বিক উন্নয়নে 'কুটির, ক্ষুদ্র, মাঝারি' উদ্যোক্তাদের সংজ্ঞায় একান্ত অপরিহার্য, সেই সঙ্গে সরকারের অন্যান্য নীতিমালাসমূহেও সেই সংজ্ঞার অনুসরণ করা আবশ্যক। এছাড়াও তিনি ব্যবসায়িক কাজে সম্পৃক্ত সকল ধরনের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় আনায়ন, রাজস্ব কাঠামোর সংস্কার, শুল্ক ব্যবস্থাপনার সহজীকরণ, লজিস্টিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, এসএমইদের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে দক্ষতা বাড়ানো ও পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর জোরারোপ করেন। এসএমই নীতিমালার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পাশাপাশি শিল্পনীতির সাথে সমন্বেয় মাধ্যমে শিল্পখাতের ভবিষ্যতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে বলে ঢাকা চেম্বার সভাপতি মত প্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার বাজেট এবং কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন কার্যক্রমে এসএমই নীতিমালার লক্ষ্যমাত্রা সম্পৃক্ত থাকার উপর তিনি জোরারোপ করেন।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নীতি, আইন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা) মো. সলিম উলস্নাহ, রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো (ইপিবি)-এর ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-এর পরিচালক (দক্ষতা ও প্রযুক্তি) কাজী মাহবুবুর রশিদ, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি'র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম্‌স ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মোস্তফা, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব)-এর সভাপতি মির্জা নূরুল গণী শোভন, এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. নাজিম হাসান সাত্তার, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কায়েস হামিদ, ঢাকা ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মাহবুবুর রহমান পলাশ এবং লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের এভিপি খন্দকার মোস্তাক হোসেন প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সলিম উলস্নাহ জানান, আন্তর্জাতিক মানের একটি এসএমই নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং আশা প্রকাশ করেন, এ খাতের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে একটি কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।

ইপিবি-এর ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এসএমইদের উন্নয়নে নীতিমালা থাকলেও, সেটি বাস্তবায়নে ইপিবি'র মত অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলোর অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য, কারণ মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন করলেও মূলত অধিদপ্তরসমূহ পাঠ পর্যায়ে সেগুলোর বাস্তবায়ন করে থাকে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ইপিবি কাজ করছে এবং এক্ষেত্রে এসএমইদের আরো বেশি হারে সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি জানান, ইপিবি-এর পক্ষ হতে 'কান্ট্রি অব অরিজিন (সিও)' সার্টিফিকেশন অনলাইনে দেওয়ার লক্ষে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে, আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য আমাদের সামগ্রিক রাজস্ব কাঠমো বেশ জটিল বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন এবং ইপিবি-এর পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়া সহজীকরণে উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

বিসিকের পরিচালক কাজী মাহবুবুর রশিদ, দেশে উদ্যোক্তা উন্নয়নে সরকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য। এসএমইদের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি বিসিককে আরো শক্তিশালী করার উপর তিনি জোরারোপ করেন।

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি'র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন জানান, 'মাইক্রোক্রেডিট ফাইন্যান্সিং ইন্সটিটিউট'গুলোর মাধ্যমে দেশের মোট এসএমই'র ৭০ শতাংশই ঋণ পেয়ে থাকে, যার ৯০ ভাগই নারী উদ্যোক্তা। ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ার সহজীকরণের পাশাপাশি দূর্নীতি হ্রাসে তিনি অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে