দুই মাস ধরে আটকে আছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ বিতরণ। ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় এ স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও বিলাসবহুল দুটি গাড়ি ও ব্যয়বহুল অফিস সাজসজ্জার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ আগস্ট সর্বশেষ বোর্ড গঠিত হয়েছিল। সিএমএসএফের বোর্ডের মেয়াদ তিন বছর। সে হিসাবে গত আগস্টেই পর্ষদ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
বিষয়ে সিএমএসএফের চিফ অপারেশন অফিসার (সিওও) যায়যায়দিনকে বলেন, দুই মাস ধরে আমাদের লভ্যাংশ বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। গাড়ি ক্রয় ও অফিস সাজসজ্জার খরচ তৎকালীন বোর্ডের অনুমোদনেই হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনায় উঠে এসেছে সিএমএসএফের নাম। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের অবণ্টিত লভ্যাংশ বণ্টন, বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় পরিচালিত এই ফান্ডটির বৈধতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে শুরু থেকেই উঠেছে নানা প্রশ্ন। বিনিয়োগকারীদের টাকায় বিলাসবহুল অফিস, চেয়ারম্যান-এমডির জন্য দামি গাড়ি আর পাঁচ তারকা হোটেলে লাখ টাকা খরচ করে করা বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান নিয়ে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এই সিএমএসএফ।
অভিযোগ আছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসময়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানসহ কিছু ব্যক্তিকে পুনর্বাসিত করা করা ছিল সিএমএসএফ গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নানা সুবিধা দিয়ে একটি শক্তিশালী বলয় তৈরি করার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সিএমএসএফ ছিল তার ওই পরিকল্পনার একটি অংশ। সিএমএসএফ বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ ফিরিয়ে দেওয়ার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম-মৃতু্যবার্ষিকীসহ নানা দিবস পালনে ছিল বিশেষ মনোযোগী।
বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশের টাকায় সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যানের জন্য কেনা হয়েছে কোটি টাকার গাড়ি। অপ্রয়োজনীয় নানা কমিটি গঠন করে সভায় অংশগ্রহণের সম্মানী হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা।
জানা গেছে, তিন বছরে ৩২৩টি বৈঠক করেছেন পর্ষদ সদস্যরা। যেখানে অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী বাবদ ব্যয় করা হয়েছে ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি এক বছরে ১০০টির বেশি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসবে সম্মানীর হারও কম না। যেখানে প্রতি বৈঠক বাবদ কমিটির সদস্যদের জনপ্রতি সম্মানী ছিল ৮ হাজার টাকা।
সিএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে ৬৩ বোর্ড মিটিং হয়েছে, আর অন্যান্য কমিটির সভা হয়েছে ২৬০টি। অর্থাৎ প্রায় প্রতিদিনই করা হয়েছে কোনো না কোনো মিটিং, যেখান থেকে বছরে কোটি টাকা সম্মানী নিয়েছেন সিএমএসএফের বোর্ড সদস্য ও অন্যান্য কমিটির সদস্যরা। এসব সভায় কেবল বোর্ড সদস্যরাই নয়, বোর্ড সদস্যের বাইরেও চেয়্যারম্যানের ঘনিষ্ঠজনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারাও প্রতি মিটিংয়ে ৮ হাজার করে সম্মানী পেয়েছেন।