সফটওয়্যারের ত্রম্নটির কারণে গত সপ্তাহজুড়েই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহণ কার্যক্রমের সমন্বিত শুল্ক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম এএসওয়াই কিউডা (কাস্টমস উপাত্তের জন্য স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম) সফটওয়্যারের ত্রম্নটির কারণে পণ্য খালাসে দেরি হচ্ছে। ফলে কাস্টমস কর্মকর্তা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট ও অন্যান্য অংশীজনেরা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সমস্যায় পড়ছেন।
এ ত্রম্নটির কারণে কাস্টমস কর্মকর্তারা চালানের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। এতে আমদানি ছাড়পত্র এবং রপ্তানি চালান প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। আমদানি ও রপ্তানিকারকেরা সময়মতো পণ্য স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।
এর আগে, গত শুক্রবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এএসওয়াই কিউডা সফটওয়্যার হালনাগাদ করার পর থেকে সমস্যা দেখা দেয়। হালনাগাদের উদ্দেশ্য ছিল কাস্টমসের কার্যক্রমকে আরও সুবিন্যস্ত করা। কিন্তু তার পরিবর্তে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে।
সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং এবং ফরওয়ার্ডিং) এজেন্টরা জানিয়েছেন, সফটওয়্যারের জটিলতার ফলে বিল অব এন্ট্রির গুরুত্বপূর্ণ উপাত্তে গরমিল তৈরি হচ্ছে। এসব এন্ট্রিতে পণ্যের নাম, প্রকার, রপ্তানিকারক দেশ, কোম্পানির বিবরণ, পণ্যের মূল্য এবং প্রযোজ্য শুল্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে। সফটওয়্যার সমস্যার কারণে এ ডেটার বেশিরভাগই স্ক্যাম্বল করা হচ্ছে। ফলে কনটেইনারের সংখ্যা, ভেতরের পণ্য এবং এগুলোর ওজন সম্পর্কিত তথ্যে ভুল থেকে যাচ্ছে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওয়ারিশা এন্টার প্রাইজের মালিক সারওয়ার আলম খান বলেন, 'গত রোববার থেকে আমাদের কাছে ২০টি চালান ক্লিয়ারেন্সের জন্য বাকি ছিল। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত মাত্র ১২টির ক্লিয়ারেন্স করা হয়েছে। ৮টি চালান আটকে আছে। দেরির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে চালান আটকে যাচ্ছে।'
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের দক্ষতা বাড়াতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অটোমেশন শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। দেশব্যাপী কাস্টমস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০১৩ সালে এএসওয়াই কিউডা চালু করা হয়।
সফটওয়্যারটি অনলাইনে আমদানির তথ্য প্রক্রিয়া করে এবং চালান, কর ও এনবিআর-এর বকেয়া সংক্রান্ত সব প্রাসঙ্গিক তথ্যের হদিস রাখে। তবে বর্তমান সমস্যার কারণে এটি সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারছে না।
চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কাজী মাহমুদ ইমাম (বিলু) বলেন, গত রোববার থেকে সফটওয়্যার সমস্যার কারণে কাস্টমসের কার্যক্রম এতই ধীরগতির হয়েছে যে, এক দিনের কাজ করতে দুই দিন লেগে যাচ্ছে। আমরা এন্ট্রি ও রপ্তানির বিল জমা দিয়েছি, কিন্তু শুল্ক কর্মকর্তারা সময়মতো সেগুলো প্রক্রিয়া করতে পারছেন না। শুধু তা-ই নয়, আমরা যে বিল জমা দিয়েছি তাতেও অসঙ্গতি থাকছে। যার কারণে আরও বিলম্ব হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার ও মুখপাত্র সাইদুল ইসলাম বলেন, 'সফটওয়্যার আপগ্রেড করা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। কিন্তু এবার এটি সিস্টেমে ধীরগতির সৃষ্টি করেছে। আমরা আমাদের দিক থেকে ব্যাঘাতের সম্মুখীন হচ্ছি। দ্রম্নতই সমস্যার সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছে এনবিআর।'
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার বিল প্রক্রিয়া করা হয়। এর মধ্যে আমদানির বিল অব এন্ট্রির সংখ্যা দুই হাজার এবং রপ্তানি বিল পাঁচ হাজার। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'জাহাজ ও কনটেইনার ডিক্লেয়ার না করা হলে সেগুলো বন্দরের বাইরের নোঙরে ভাসতে থাকবে। এতে শিপিং কোম্পানিগুলোর আর্থিক ক্ষতি হবে। যদিও আমরা প্রয়োজনীয় আপগ্রেডের পক্ষে, এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধে সবসময় বিকল্প ব্যবস্থা থাকা উচিত।'